Advertisement
২০ ডিসেম্বর ২০২৪

বিনোদনে রাজনীতি-কাঁটা

সাম্প্রতিক অতীতের বেশ কিছু ছবিতে কেন্দ্রীয় শাসকদলের সঙ্গে বলিউডের ঘনিষ্ঠতার স্পষ্ট আভাস মিলেছে। ইন্ডাস্ট্রির রাজনৈতিক মেরুকরণও খানিক প্রতীয়মান।

কবীর খান

কবীর খান

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৯ ০০:২৮
Share: Save:

যাঁদের কলমে জ্যান্ত হয়ে ওঠে ফিল্মি চিত্রনাট্য, তাঁদের কি ‘প্রো-হিন্দু’ কিংবা ‘প্রো-ইন্ডিয়া’ বিষয়ক লিখতে প্ররোচিত করা হচ্ছে ইদানীং? এমনই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল পরিচালক কবীর খানের সামনে। সোমবার মুম্বই ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘সিনেমা অ্যাজ় অ্যান এজেন্ট অব চেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনায় উঠে এসেছিল এই বিতর্ক। কবীর খান বলেছেন, ‘‘আমার কাছে এখনও এ ধরনের প্রস্তাব আসেনি। কিন্তু প্রশ্নটা মোক্ষম। অদ্ভুত ধরনের চাপের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে মানুষকে। কাজেই কেউ যদি আমার কাছে এমন প্রস্তাব নিয়ে আসে, অবাক হব না।’’

সাম্প্রতিক অতীতের বেশ কিছু ছবিতে কেন্দ্রীয় শাসকদলের সঙ্গে বলিউডের ঘনিষ্ঠতার স্পষ্ট আভাস মিলেছে। ইন্ডাস্ট্রির রাজনৈতিক মেরুকরণও খানিক প্রতীয়মান। সিনেমা ও তারকাদের মাধ্যমে ‘বলিয়ে নেওয়া’ বার্তাগুলি যদি কোনও রাজনৈতিক দলের কথা বলে এবং জনমানসে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে, তবে তা শিল্পমাধ্যমের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর? প্রশ্নটা রাখা হয়েছিল টলিউডের পরিচালকদের কাছে। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় মনে করেন, সিনেমা যদি অ্যান্টি-এস্টাব্লিশমেন্টের পক্ষে কথা বলতে না পারে, তা হলে তা সিনেমার ভবিষ্যতের জন্য চিন্তার বিষয়। ‘‘আমরা চিরকাল দেখে এসেছি নায়করা দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা-পুলিশদের ধরাশায়ী করছে। সিনেমার মধ্যে রাজনীতি ঢুকে পড়াটা কাম্য নয়। যদি একজন সুপারস্টারও কারও পক্ষ নিয়ে শেখানো বুলি আওড়ায়, দর্শক কিন্তু বিশ্বাস করবেন না,’’ বললেন শিবপ্রসাদ। গোবিন্দ নিহালনির ‘তমস’-এর উদাহরণ দিলেন পরিচালক। অমিতাভ বচ্চনের ছবি কিংবা হালের ‘সিম্বা’র প্রসঙ্গও তুললেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলিউডের তারকাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, ভাল কথা। কিন্তু আমি দুঃখ পেয়েছি আঞ্চলিক ইন্ডাস্ট্রির কেউ আমন্ত্রণ না পাওয়ায়।’’

বলিউড যে দিকেই ঝুঁকে থাকুক, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এই মেরুকরণের রাজনীতি যে এখনও প্রবেশ করেনি, তা জানালেন পরিচালক অরিন্দম শীল। ‘‘স্বাধীনতার ৭২ বছর পরে ভারতবাসীকে হিন্দুত্ববাদ আলাদা করে বোঝানোর দরকার আছে বলে মনে হয় না। সিনেমায় আখের গুছোনোর রাজনীতির প্রতিফলনও সুস্থ সংস্কৃতি নয়। দর্শককে দায়িত্ব নিয়ে বুঝতে হবে যে, তাঁরা বোকা বনবেন, না কি দেশের আসল সংস্কৃতিকে বুঝবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারকে সম্মান করা মানেই তাঁর পার্টির হয়ে যাওয়া নয়,’’ বললেন তিনি।

দীপা মেহতার ‘লেয়লা’য় দেখানো হয়েছিল ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার ভবিষ্যৎ রূপ কেমন হতে পারে। সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের উপরেও নাকি আরোপিত হয়েছে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। তার সারবত্তা হিন্দুত্ববাদের বিরোধী কনটেন্ট দেখানো যাবে না। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ওয়েব প্ল্যাটফর্ম স্বাধীনতার জায়গা। সেখানে নিষেধাজ্ঞা কাম্য নয়।’’ আর ছবির ক্ষেত্রে? ‘‘আমার ছবির কনটেন্ট, ট্রিটমেন্ট স্বতন্ত্র। এখনও পর্যন্ত তেমন প্ররোচনা বা প্রস্তাব পাইনি,’’ বলেন তিনি।

তবে রাজনীতি চলচ্চিত্র মাধ্যমের নিয়ন্ত্রক না হওয়াই কাম্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Kabir Khan Cinema
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy