বর্তমানে বারাসতের ডিআইজি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দেশের মাটি’ ধারাবাহিকের অভিমন্যু।
‘দেশের মাটি’ ধারাবাহিকের পুলিশকর্তা তিনি। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। এসেছেন ধারাবাহিকে স্বরূপ নগরের ছোট মা অন্তরার অতীত প্রেম হয়ে। তিনিই সেই মানুষ যার প্রেমকে এক সময় অস্বীকার করেছিলেন ‘ছোট মা‘ ওরফে অভিনেত্রী সুচিস্মিতা চৌধুরী। বিলেতের চিকিৎসক ধারাবাহিকের নায়ক কিয়ানের বাবাকে বিয়ে করেছিলেন ছোট মা।
এ তো গেল ধারাবাহিকের কথা। পুরনো প্রেমিক ফিরে এসে যখন তার প্রেমিকার ভরা সংসারে দাঁড়ায়, তখন দর্শক মুখিয়ে থাকে সেই প্রেমের গল্প শোনার জন্য। আর সেই প্রেমিক যদি বাস্তবেও একজন দুঁদে পুলিশ কর্তা হয়ে থাকে তা হলে তাঁকে নিয়ে দর্শকের আগ্রহ যে বাড়বে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই।
বর্তমানে বারাসতের ডিআইজি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দেশের মাটি’ ধারাবাহিকের অভিমন্যু চরিত্রে অভিনয় করছেন। জলপাইগুড়ি আর মালদহ অঞ্চলের ডিআইজি হিসেবে আমফান থেকে খরা, বন্যা সব সামলেছেন তিনি। কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন ছোট পর্দার দুঁদে পুলিশ কর্তা হয়েই গল্পে নিজের পুরনো প্রেমিকার অতীত সামনে আনার লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি।
পুরনো প্রেমকে এ ভাবে সকলের সামনে আনা কি উচিত? আনন্দবাজার ডিজিটালকে প্রসূন বললেন, ‘‘আমার জীবনে এমন পুরনো প্রেম বা সেই প্রেমিকার উপস্থিতি তো নেই। তাই এ বিষয়ে বলতে পারব না। তবে ধারাবাহিকে অন্তরার যেমন প্রভাবশালী চরিত্র তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে, প্রশ্ন করতে অভিমন্যু চরিত্রের দরকার।’’
টেলিপাড়ায় লেখক প্রযোজক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে তাঁর আগমন। লীনা প্রথম থেকেই অভিমন্যু চরিত্র সম্পর্কে প্রসূনকে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। অভিমন্যুর শরীরী ভাষা, কণ্ঠস্বর দর্শকদের মন টেনেছে। পুলিশ কর্তা বললেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালে মা বাবাকে নিয়ে টিকা নিতে গিয়েছিলাম, এক কর্মী এসে চিনতে পেরে আমার অভিনয়ের প্রশংসা করলেন। উনি আমার অন্য পরিচয় অবশ্য জানতেন না।’’ মানুষ ই-মেলে বা রাস্তায় তাঁকে অভিমন্যু হিসেবেই চিনছেন। দুঁদে পুলিশকর্তা আচমকা বাড়িতে হানা দিলে মানুষ চমকে যায়। কিন্তু তিনি যদি ‘দেশের মাটি’ ধারাবাহিকের পুলিশকর্তা হন, মানুষ তাঁর পথ আটকে নানা প্রশ্ন করছেন। ফেসবুকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
এই অভিনব ঘটনায় ডিআইজি প্রসূন কি চাপা পড়ে যাচ্ছেন অভিনেতা প্রসূনের কাছে?
প্রশ্ন শুনেই অনায়াস জবাব তাঁর, ‘‘আমি ৬ বছর বয়স থেকে অভিনয় করছি। পরবর্তীকালে তথ্যচিত্রে অভিনয় করেছি। নাটকের দল আছে আমার। নিয়মিত অভিনয় করি। কিন্তু যখন ওই খাকি পোশাকটা পরি তখন ওই ফ্যানপেজ, সংলাপ সব কিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলি। পুলিশ আর অভিনেতা দুই সত্তাকে আলাদা করতে পারি আমি।’’
অভিনয়ের পাশাপাশি ছোট গল্প লেখার কাজে হাত দিয়েছেন পুলিশকর্তা। তাঁর তৈরি তথ্যচিত্র ‘নোটিফিকেশন’ দেশে,বিদেশে প্রশংসা পেয়েছে।
২৪ ঘন্টাই কি জেগে থাকেন প্রসূন? কাজের পথ লম্বা। তাই সময় ভাগ করে কাজ করেন তিনি। ধারাবাহিকের শ্যুটিং সন্ধেবেলায় শুরু করেন তিনি। বললেন, ‘‘লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় আমার কাজের কথা ভেবেই সন্ধের সময় কলটাইম দেন। আমি কৃতজ্ঞ। খাকি পোশাক ছেড়েই সোজা সাজঘরে চলে যাই। সংলাপ বলতে থাকি। আমার সময় কম।’’
ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন এসে রূপটান কর্মী থেকে ধারাবাহিকের পুরো ইউনিট এখন তাঁর নতুন পরিবার। কথা প্রসঙ্গে জানালেন স্টুডিয়োয় প্রবেশ করার মুহূর্ত থেকেই তিনি শুধুমাত্র অভিনেতা। তখন আর আইপিএস অফিসার নন। বালুরঘাটে নিয়মিত নাটকে অভিনয়ের সুবাদে মানুষের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারেন তিনি। ধারাবাহিকে কাজ করলেও ইচ্ছে আছে ‘দ্রোহকাল’ -এর মতো ছবিতে আশীষ বিদ্যার্থীর চরিত্রে অভিনয় করার।
পরজন্মে কী হয়ে ফিরতে চান প্রসূন?
"অবশ্যই পুলিশ হয়ে। কনস্টেবল হলেও আপত্তি নেই। যে খাকি এক বার পরে নিয়েছে তার ডিএনএ তে খাকি ঢুকে যায়। শুধু অপরাধীদের নিয়ে চলা নয়, বন্যা থেকে করোনা— সবেতেই মানুষকে সেবা করার সুযোগ পুলিশই সরাসরি পায়।’’
সাক্ষাৎকার শেষ।
প্রসূনের ফোন বেজে ওঠে। কোনও এক অপরাধীর মুখোমুখি হতে হবে তাঁকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy