পায়েল সরকার, অলিভিয়া সরকার, জাজ সরকার ও রূপসা মুখোপাধ্যায়
টলিউডে ভ্রমণমূলক বা ট্র্যাভেলগ ছবির সংখ্যা কত? হিসেব বলছে, অসংখ্য। ‘চলো লেটস গো’, ‘বাই বাই ব্যাংকক’, ‘বালুকাবেলা ডট কম’, ‘ছ-এ ছুটি’, ‘হইচই আনলিমিটেড’ সহ এ কালের আরও বেশ কিছু ছবি এবং ‘ফেলুদা’ এই গোত্রেই পড়ে। পাশাপাশি, স্বর্ণ যুগেও এ স্বাদের একাধিক ছবি হয়েছে। তালিকায় ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’, ‘নির্জন সৈকতে’, ‘ছুটির ফাঁদে’, ‘চারমূর্তি’। এবং সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিন রাত্রি’। কিংবদন্তি পরিচালক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একই নামের উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। সত্যজিতের বহু তারকাখচিত এই ছবির থেকেই অনুপ্রাণিত পরিচালক সুমন মৈত্র।
একুশ শতকে চার বান্ধবীর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার গল্প বলতে চলেছেন সুমন। তাঁর আগামী ছবি ‘আবার অরণ্যের দিন রাত্রি’তে। সুমনের ‘দশমী’, ‘আমি ও অপু’ বাংলা বিনোদন দুনিয়ায় পরিচিত নাম। মুক্তির অপেক্ষায় ‘সীমান্ত’।
নতুন ছবিতে অরণ্যের পাশাপাশি বাড়তি পাওনা পাহাড়। চার বান্ধবী পায়েল সরকার, অলিভিয়া সরকার, রূপসা মুখোপাধ্যায়, জাজ সরকার। শুক্রবার ছবির নাম প্রথম ঘোষণা করছেন সুমন। বৃহস্পতিবার তারই আগাম সাক্ষী আনন্দবাজার অনলাইন।
কথার শুরুতেই পরিচালকের আত্মসমর্পণ- "সত্যজিৎ রায়ের ছবির নাম ছাড়া আর কোনও কিছুর সঙ্গেই আমার ছবির মিল নেই। ছবিটি করার কথা ছিল ‘আমি ও অপু’ মুক্তি পাওয়ার পরেই। অতিমারির কারণে কাকতালীয় ভাবেই ছবিটি কিংবদন্তি পরিচালকের জন্ম শতবার্ষিকীর সময়ে তৈরি হতে চলেছে। মিল বলতে এটুকুই।" পরিচালকের দাবি, দুটো ছবির মধ্যে তুলনার প্রশ্নও ওঠে না। তাঁর মতে, বাংলায় নারীকেন্দ্রিক এবং ভ্রমণমূলক ছবির সংখ্যা তুলনায় কম। এই দুইয়ের অভাব পূরণ করতেই এ ছবির ভাবনা। গল্পে চার বান্ধবী ভ্রমণমূলক ছবি বানাতে চায়। আর তাই তারা পৌঁছে যায় উত্তরবঙ্গে। পাহাড়ি পাকদণ্ডি, সবুজ প্রকৃতি, খরস্রোতা নদী, ঝর্ণা, খোলা আকাশের মধ্যে গিয়ে নিজেদের যেন নতুন ভাবে আবিষ্কার করে চার জনেই। জন্ম নেয় নতুন গল্প।
ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ‘নন্দিনী’র ভূমিকায় অভিনয় করছেন পায়েল সরকার। ইদানীং, অভিনেত্রীকে নতুন ধারার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘অনুসন্ধান’-এ শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে তিনি ‘পাপিয়া’। 'কুলপি'-তে তিনিই ‘কঙ্কনা’। ‘আবার অরণ্যের দিন রাত্রি’তে ‘নন্দিনী’ হতে রাজি হওয়ার নেপথ্যে কি ‘সত্যজিৎ নস্টালজিয়া’? আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে অভিনেত্রীর দাবি, ‘‘সত্যজিৎ রায়ের ছোঁয়া পেতে কার না ভাল লাগে? তা ছাড়া, বলিউড বা হলিউডে নারীকেন্দ্রিক ছবি তৈরি হলেও বাংলায় যেন তুলনায় কম। এই বিষয়টিও আকর্ষণ করেছে।’’ পায়েলের মতে, ছবিতে বেড়াতে যাওয়ার গল্প তুলে ধরার মজাই আলাদা!
একই ভাবে তাঁর চরিত্র ‘নন্দিনী’ও পায়েলকে টেনেছে। নন্দিনী বড্ড একা। কিন্তু ভ্রমণমূলক ছবি বানাতে গিয়ে এক ঝাঁক বন্ধুর হদিশ পায় সে। যারা তার জীবনবোধকেই বদলে দেয়। পায়েলের কথায়, ‘‘আমি একাকিত্বে বড় হইনি। আমার পরিবার সমস্যা জর্জরিতও নয়। কিন্তু আমি অন্তর্মুখী। কম কথার মানুষ। বেছে মেলামেশা করি। ফলে, আমার মধ্যে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের খিদেটা থেকেই যায়। নিজেকে মেলে ধরার ইচ্ছেটাও। নন্দিনীর মধ্যে থাকা নানা স্তর আমার সেই দিকগুলো পূরণ করতে চলেছে।’’
তুলনায় নতুন এবং অভিজ্ঞ পরিচালকদের সঙ্গে পরপর কাজ করে কী বুঝছেন পায়েল? ঝকঝকে জবাব এল, ‘‘ভাগ্যিস করছি! তাই নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের ডাক পাচ্ছি। দুই প্রজন্মের পরিচালকেরাই আমার উপরে ভরসা করতে পারছেন। দেখে ভাল লাগছে।’’
চিত্রনাট্য মেনে ছবির শ্যুট হবে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চলে। রোড ট্রিপ ছবি মানেই গান তার প্রতি পদক্ষেপে। পরিচালকের আগামী ছবিতেও থাকবে এক মুঠো রবীন্দ্র সঙ্গীত, লোক গান, আধুনিক গান। দায়িত্বে রানা সরকার ও বাপ্পাদিত্য শুভ্র। গানে মধুপর্ণা, সোহিনী, অঙ্গনা, রানা এবং বাপ্পাদিত্যের গলা শোনা যাবে। গোটা জানুয়ারি মাস ধরে চলবে শ্যুট। প্রযোজক সন্দীপন সরকার। ছবিটি মুক্তি পাবে ইন্দো আমেরিকান প্রোডাকশন ও চিরোক ফিল্মসের ছাতায়। সুমনের খুব ইচ্ছে, সব ঠিক থাকলে গরমের ছুটিতে দর্শকেরা পৌঁছে যাবেন উত্তরবঙ্গে, 'আবার অরণ্যের দিন-রাত্রি'তে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy