বাড়িতেও সংলাপ বলেন ‘পটলবাবু’!
প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পর হাতে যদি উঠে আসে এক গ্লাস ঠান্ডা পানীয়? অবধারিত ভাবে মন বলে ওঠে— আঃ! প্রচণ্ড শীতে এক পেয়ালা কফিতে চুমুক দিয়েও বেরিয়ে আসে সেই একই শব্দবন্ধ— আঃ! কিংবা, ভিড়ের মধ্যে পা মাড়িয়ে দিয়ে গেল কেউ। তার পর? সেই একই আঃ!
একই শব্দ। তফাত শুধু তার উচ্চারণের ধরনে, বলার ভঙ্গিতে। সেটাই শিখিয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের গল্প ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার’। গল্প অবলম্বনে একই নামের নাটকে ‘পটলবাবু’র চরিত্রে অভিনেতা সঞ্জীব সরকার। ‘আঃ’ উচ্চারণে সেই সূক্ষ্ম তফাতের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন তিনিও। বললেন, সত্যজিৎ রায়ের গল্পের চরিত্র হয়ে উঠতে পারা তাঁর কাছে সৌভাগ্য। ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার’ শিক্ষণীয় নাটক। এর সংলাপ বলতে পারাও তাই একরাশ পরিতৃপ্তি। সঞ্জীবের মতে, সত্যজিতের লেখা যখন প্রয়াত রমাপ্রসাদ বণিকের হাতে নাট্যরূপ পেয়েছিল, দুই শিল্পীসত্তার মিলন ঘটেছিল। এসেছিল নতুন প্রাণ। পূর্ব পশ্চিম সেই চিত্রনাট্যকে অবিকৃত রেখেই ১৬০টার বেশি শো করে ফেলেছে।
আগে ‘পটলবাবু’ হতেন অভিনেতা পার্থসারথি দেব। তাঁর বয়সজনিত শারীরিক অসুস্থতার পর সেই চরিত্রে এসেছেন সঞ্জীব। তাঁর দাবি, ‘পটলবাবু’ চরিত্রে অভিনয় করতে করতে নিজেও এমন ভাবে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন যে, বাড়িতেও সংলাপ বলেন। স্ত্রী-মেয়ে বিপরীত চরিত্রে থেকে ভুল ধরিয়ে দেন।
নিজে এক জন সফল অভিনেতা হয়ে ‘পটলবাবু’র মতো অভিনেতা হতে চাওয়া মানুষের চরিত্রে মিশে গেলেন কী ভাবে? আনন্দবাজার অনলাইন সে প্রশ্ন রেখেছিল সঞ্জীবের কাছে। উত্তর দিতে গিয়ে অভিনেতা ফিরে গেলেন চরিত্রেই। জানালেন, পটলবাবুর জীবনসংগ্রামের সঙ্গে নিজের জীবনের মিল খুঁজে পান। গাজলের প্রত্যন্ত গ্রামে বড় হয়ে উঠেছেন সঞ্জীব। ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময়ে শিক্ষক গোবিন্দ চক্রবর্তীও তাঁকে একই পাঠ দিয়েছিলেন। সঞ্জীবকে শিখিয়েছিলেন, অভিনেতা ছোট বা বড় হতে পারেন, কিন্তু অভিনয় কখনও ছোট নয়।
গাজল থেকে কলকাতা ডিঙিয়ে সোজা দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা। বড় অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখার শুরু সেখানেই। কলকাতায় ফিরতেই ডাক এসেছে একের পর এক নাট্যদলে। তবে যাত্রা শুরু করেছেন ১৯৯৮ সালে, পূর্ব পশ্চিম-এর হাত ধরে। পাশাপাশি চলেছে পর্দায় অভিনয়। ২০০০ সালের জনপ্রিয় নাটক ‘অন্তর-বাহির’-এ নজর কেড়েছিলেন। দেবেশ চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘ব্যারিকেড’ নাটকেও পরিচিত মুখ। তাঁর নতুন নাটকের শো-ও চলছে। তবে এত কিছুর মাঝেও ‘পটলবাবু’ হয়েই রয়ে গিয়েছেন অভিনেতা। আঃ! বলতে বলতে বার বার ফিরে দেখছেন, চিনে নিচ্ছেন নিজের যাত্রাপথ।
আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে বেরিয়ে এসেছে আজকের ‘পটলবাবু’র আক্ষেপও। সঞ্জীব বলেছেন, ‘‘ইশ, সত্যজিৎ রায় যদি এক বার আমাদের ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার’ দেখে যেতে পারতেন! আমার বিশ্বাস, ওঁর ভাল লাগত।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy