পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।
দিন-রাত পাহাড়ে শ্যুট। যখন তখন বৃষ্টি। দুর্যোগে যোগাযোগ-ও ব্যাহত। তার মধ্যেই গভীর রাতে সপ্তাশ্ব বসুর ‘জতুগৃহ’-তে নিজের চরিত্র নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে প্রথম মুখ খুললেন ছবির যাজক ‘যোসেফ’ পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়...
প্রশ্ন: সপ্তাশ্ব বসুর সঙ্গে প্রথম কাজ। নতুন পরিচালক। কেমন লাগছে?
পরমব্রত: আমার কিন্তু বেশ ভাল লাগছে। নতুন হলেও পরিচালনা নিয়ে ওঁর মধ্যে আগ্রহ আছে। ভালবাসাও আছে। সপ্তাশ্ব সেই অনুভূতিগুলো ছড়িয়ে দেন ছবি পরিচালনার সময়। আমি খুব কম দিন শ্যুট করেই এটা বুঝে গিয়েছি। মানুষ হিসেবেও ভাল, বেশ মজার। আর পরিচালকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলতে পারি, ওঁর মধ্যে যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। আগামী দিনে সপ্তাশ্ব আরও উন্নতি করবেন।
প্রশ্ন: ৬০ বছরের যাজক ‘যোসেফ’-এর ভূমিকায় আপনি। ডাক পেয়ে চমকে গিয়েছিলেন?
পরমব্রত: এই চরিত্রের জন্যই এক ডাকে হ্যাঁ বলেছি সপ্তাশ্বকে। ছবি হরর-থ্রিলার। তাই গল্প বা চরিত্র নিয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না। এ টুকু বলতে পারি, আমি-ই ছবিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। আমি ছাড়াও গুরুত্ব পাবেন বনি সেনগুপ্ত।
প্রশ্ন: লকডাউনের পর সম্ভবত আপনার এটাই প্রথম শ্যুটিং?
পরমব্রত: বিশ্বাস করুন অপেক্ষায় ছিলাম, আবার কবে কাজে ফিরব। এ ভাবে সব কিছু চললে মনে হয় আর কাজের গতিতে বাধা পড়বে না। বাংলার পাশাপাশি বলিউডেও কাজ রয়েছে। আশা করছি, দুই জায়গাতেই টানা কাজ করে যেতে পারব।
প্রশ্ন: আপনি পাহাড় ভালবাসেন? আপনার ইনস্টাগ্রাম বলছে আবার পাহাড়ে ফিরে শান্তি পেয়েছেন...
পরমব্রত: আমি চাইলে সারা জীবন পাহাড়ে থাকতে পারি। গত অক্টোবর-নভেম্বর পুরোটা হিমাচল প্রদেশে ছিলাম। অন্য ছবির শ্যুট উপলক্ষে। বেশ কিছু দিন পরে আবার পাহাড়ের কোলে ফিরলাম। নিজের রাজ্যে। পাহাড়ে এলে ভিতর থেকে সত্যিই অদ্ভুত শান্তি পাই।
প্রশ্ন: পাহাড়ি চার্চের বাসিন্দা ‘যোসেফ’ কেমন? ৬০ বছরের যাজক হতে গিয়ে শরীরে-মনে কতটা পরিবর্তন এনেছেন?
পরমব্রত: যত বার চরিত্রের খাতিরে বয়স বাড়াতে হয়েছে, নিজেকে একটাই শাসন করেছি। বলেছি, ভেঙে-চুরে যত খুশি পরীক্ষা কর। খবরদার, ওজন বাড়িও না। এ বারেও সেটাই বলেছি নিজেকে। আর কী ভাবে তৈরি হয়েছি? চিত্রনাট্য শুনে বুঝেছি, যোসেফ ভাঙা মনের মানুষ। অন্ধ অতীত-ও রয়েছে। সে ভাবেই নিজেকে ক্যামেরার সামনে মেলে ধরার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: অনুষ্কা শর্মা প্রযোজিত ‘পরী’, ‘বুলবুল’-ও হরর থ্রিলার ছিল। সেখানকার কোনও অভিজ্ঞতা এই ছবিতে কাজে লাগাচ্ছেন?
পরমব্রত: আগে অভিনীত চরিত্রের কোনও কিছুই পরের অভিনয়ে তুলে আনা সম্ভব নয়। তবে এটা বলতে পারি, সামান্য কিছু প্রতিফলন অনেক সময় ঘটে। তার পরেও বলব, প্রতিটা চরিত্র প্রত্যেকের মতো আলাদা। তাই চাইলেও পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যায় না।
প্রশ্ন: সম্ভবত প্রথম প্রস্থেটিক মেক আপ নিচ্ছেন। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই চমকে যাচ্ছেন?
পরমব্রত: এটা আমার কাছেও একটা দারুণ অভিজ্ঞতা। চুল পেকে গেলে আমায় কেমন দেখতে লাগবে? বুড়ো হওয়ার পরে কতটা বদলাব? সব আগাম দেখে নিচ্ছি রূপসজ্জার জাদুতে।
প্রশ্ন: ভয়ের ছবি। পাহাড়ি এলাকায় রাতেও শ্যুট চলছে। কোনও গা ছমছমে অভিজ্ঞতা?
পরমব্রত: (অল্প হেসে) মার্ডার মিস্ট্রি ছবিতে কি তা হলে টিমের লোকেরাই খুন-টুন করে ক্যামেরায় সেটা তুলে ধরেন? না তো! এখানে সেটাই হচ্ছে। পটভূমিকা, নেপথ্য আবহ মিলিয়ে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। আমরা অভিনেতারা বাকিটা অভিনয় দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করছি। ভয়ের ছবিতে অভিনয় করছি বলে কেন খামোখা ভয় পাব বা ভূত দেখব!
প্রশ্ন: ‘যোসেফ’ প্রচণ্ড ধূসর চরিত্র। তথাকথিত রোমান্সও নেই। এত ‘নেগেটিভ’ চরিত্র সাধারণত অভিনেতারা করতে চান না। আপনার অভিনয় জীবনে এই চরিত্র আদৌ ইতিবাচক ছাপ ফেলবে?
পরমব্রত: (একটু থেমে) আমার ৪০ হল। অভিজ্ঞতা বলছে, মানুষের ভাল-খারাপ দুটো দিককেই মূল্য দিতে হয়। আমি সেটা দিয়েও থাকি। ধূসর দিকটা না জানা থাকলে মানুষের জীবনের আলোর দিকটা ফুটিয়ে তুলব কী করে! তাই ‘যোসেফ’-কে নিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে আমার কোনও সমস্যা নেই। ভাল-মন্দ ধ্রুব সত্য সবার জীবনে। সমস্ত চরিত্র করার আগে এ কথা নিজেকে আজও বোঝাই।
প্রশ্ন: তা হলে আপনার অভিনীত সেরা ৫ চরিত্রের মধ্যে ‘যোসেফ’-কে রাখবেন?
পরমব্রত: না হয়তো। তবে সপ্তাশ্ব-র সঙ্গে আবার কাজ করার ইচ্ছে রইল।
প্রশ্ন: ৪০ ছুঁলেন। অথচ ‘এলিজেবল ব্যাচেলর’! সংসারী হবেন কবে?
পরমব্রত: (হাসতে হাসতে) আমার মতো সংসারী খুব কম পাবেন। নিজের মতো করে ঘোরতর সংসারী আমি। আমার সংসারকে ভীষণ ভালবাসি, যত্নও করি। বাড়িতে আমার সঙ্গে আমার প্রিয় কয়েক জন থাকেন। কিছু কাছের বন্ধু আছেন। যাঁদের সঙ্গে নিজের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে পারি। এটা কম কিছু? হয়তো এর বাইরেও কিছু আছে। বাকিটা সত্যিই ব্যক্তিগত...।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy