কেকে।
শেষে একজন শিল্পীকে মৃত্যুবরণ করে বোঝাতে হল, আমাদের দেশে পারফর্মারদের কী অসহনীয় অবস্থা! গতকাল যখন সেই অবিশ্বাস্য খবর এসে পৌঁছল, তখন ইনদওরে আমি শ্রেয়া ঘোষালের সঙ্গে মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান করছি। অসহ্য গরম। দেখলাম, মুক্তমঞ্চের পিছনে শিল্পীদের বিশ্রাম নেওয়ার যে জায়গা তৈরি হয়েছে, তা একেবারেই মজবুত নয়। ওখানে একটানা বসে থাকলে যে কেউ গরমেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। যাই হোক, তার পরে সন্ধের দিকে অনুষ্ঠান শুরু হল। শ্রেয়া ঘোষালের মতো শিল্পী আমার পাশে। তিনি এক নাগাড়ে ঘামছেন অথচ জল চাইলে সঙ্গে সঙ্গে তা আমরা পাচ্ছি না। সামান্য জলের ব্যবস্থাতেও এত গলদ!
তার পরেই খবর এল। হ্যাঁ আবার লিখতে ইচ্ছে করছে আমার। খবর। কেকে-র মতো শিল্পী এ ভাবে চলে যাবেন? অন্যজনের অবহেলায়? আমিও তো তখন মঞ্চে! পা কেঁপে উঠল।
ভিডিয়ো দেখছিলাম। কেকে-র শেষ অনুষ্ঠানের ভিডিয়ো।দেখছিলাম গান গাইতে গাইতে ওই উপচে পড়া অতিরিক্ত ভিড়ের মাঝে কেকে-র তো অস্বস্তি হচ্ছিলই। আচ্ছা, তিনি গান বন্ধ করলেন না কেন? মঞ্চ ছেড়ে চলে যেতেই পারতেন। কেন করলেন না? আগে তো শরীর?
না। কেকে-র মতো মানুষের কাছে আগে গান। আগে কথার দাম। তিনি পেশাদার। মঞ্চ ছাড়তে জানেন না। আমরা জানি, পারা যায় না।
তবে উদ্যোক্তারা কিন্তু শিল্পীদের কথা ভাবেন না। নইলে নজরুল মঞ্চে কেকে-র টিম আসার পরে যে অতিরিক্ত লোক হু হু করে ঢুকে পড়ল, তাদের আটকে রাখার কোনও ব্যাবস্থা ছিল না কেন? শিল্পী সমানে বলছেন, “আলো নেভাও।” এলইডি লাইটে গরম বাড়তে থাকে। তিনি তোয়ালে চাইছেন। জলের মতো ঘাম ঝরছে শরীর থেকে! কেউ তাঁকে থামাতে পারল না? গান গাওয়ার জন্য এত আলোর কী প্রয়োজন? আমাদের আলো নিয়ে বড্ড বাড়াবাড়ি। দর্শক আলো দেখবেন, না কি কেকে-র গান শুনবেন? দর্শক অথবা উদ্যোক্তা— কেউ কি শিল্পীদের সুস্থ রাখার দায়িত্ব নেবেন না?
শীতাতপ যন্ত্রের তো অস্তিত্বই নেই! এই সময় উদ্যোক্তারা কি করছিল? না তারা স্টেজে ৫০-৬০ জন উঠে দাঁড়িয়েছিল দু’পাশে! কেকের পারফরম্যান্স করার জন্য যথেষ্ট জায়গাটুকু পর্যন্ত ছিল না। হাওয়া চলাচলের কথা তো ছেড়েই দিলাম!
দিনের পর দিন এমনই চলছে। কেকে-র মতো শিল্পীকে দেখে দর্শক উচ্ছ্বসিত হবেন। স্বাভাবিক। কিন্তু সেই উচ্ছ্বাস যদি শিল্পীর যন্ত্রণার কারণ হয়? তা হলেও কি আমরা থামব না? ভাবব না? আর এখানে তো শুধুই যন্ত্রণায় বিষয়টি থেমে যায়নি।
এ বার অবশ্য আমরা ভাবব। মঞ্চে গান গাওয়া নিয়ে অনেক নিয়ম শুরু হবে। কিন্তু কেকে? একটা প্রশ্নচিহ্ন হয়ে থেকে গেলেন। ফেরানো গেল না আর…
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy