কয়েকটি বিষয় চিরন্তন। সময়ের কাঁটা যে দিকেই চলুক, তা ফিরে ফিরে আসে। তাই ভগৎ সিংহের মতো চরিত্র নিয়ে হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে এক সময়ে পরপর ছবি হয়েছে। ওটিটি-র উত্থানের পরে, একই বিষয়ে একই সময়ে একাধিক ছবির পটভূমি খানিক বদলেছে। এখন একই কনটেন্ট জায়গা করে নিচ্ছে ওয়েব সিরিজ় এবং সিনেমায়। দু’টির রিলিজ়ের ব্যবধান হয়তো কয়েক মাসের বা তারও কম। এই ঘটনা কি কাকতালীয়? সিরিজ়গুলির কনটেন্ট একটি বিশেষ সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করছে।
গত বছর মার্চ মাসে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে উমেশ শুক্ল পরিচালিত ‘মোদী: জার্নি অফ আ কমন ম্যান’ সিরিজ়ের প্রথম সিজ়ন স্ট্রিমিং হয়। তার মাস দুয়েকের মধ্যেই বড় পর্দায় মুক্তি পায় বিবেক ওবেরয় অভিনীত ছবি ‘পিএম নরেন্দ্র মোদী’। পরিচালনায় উমঙ্গ কুমার। গত বছর ওই সময়ে ছিল দেশে লোকসভা নির্বাচনের ধুন্ধুমার! এ বছর নভেম্বরে স্ট্রিমিং হচ্ছে সিরিজ়ের দ্বিতীয় সিজ়ন, ‘মোদী: সিএম টু পিএম’।
গত বছরই বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছিল ‘উরি: দ্য সার্জিকাল স্ট্রাইক’। নবাগত পরিচালক আদিত্য ধর শুধুমাত্র দেশপ্রেমের ভক্তিরসে ঝড় তুলেছিলেন বক্স অফিসে। এ বছর জুলাই মাসে সিরিজ় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘অবরোধ: দ্য সিজ় উইদিন’। মুখ্য চরিত্রে অমিত সাধ। বিষয়, সেই ২০১৬ সালে উরি হামলার কাল্পনিক পরিবেশন।
প্রায় অচেনা কয়েকটি মুখ নিয়ে হনসল মেহতা পরিচালিত সিরিজ় ‘স্ক্যাম ১৯৯২: দ্য হর্ষদ মেহতা স্টোরি’ দর্শক-সমালোচক সব মহলেই উচ্চ প্রশংসিত। এ দিকে অজয় দেবগণের প্রযোজনায় ‘দ্য বিগ বুল’ ছবিতে হর্ষদের চরিত্রে রয়েছেন অভিষেক বচ্চন, এটিও অনলাইন রিলিজ় করবে। পরিচালক আর বালকির ‘মিশন মঙ্গল’ যখন এসেছিল, তার কাছাকাছি সময়ে একতা কপূরের প্রযোজনায় মুক্তি পেয়েছিল সিরিজ় ‘মম: মিশন ওভার মার্স’।
বিষয়ের নিরিখে এই চারটির মধ্যে তিনটি বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের বিজয়গাথা। স্ক্যামের ঘটনাটি সরকারের বিরোধী শক্তির জমানার। তাই সেটির প্রচারও এক অর্থে অধুনা সরকারের গদিকেই শক্ত করে। তা হলে একই সঙ্গে আবির্ভাবের পিছনে কাজ করছে কি রাজনৈতিক অভিসন্ধি? টলিউডের চিত্রনাট্যকার শুভেন্দু দাশমুন্সীর মত সেটাই। ‘‘এটা কেউ স্পষ্ট ভাবে বলে না। তবে পাবলিক সেন্টিমেন্টকে হাওয়া দেওয়ার জন্য রাষ্ট্র কোনও পথ ছেড়ে দেয় না। এটা সব সরকার তার আমলে তার মতো করে করেছে।’’ আবার পরিচালক মৈনাক ভৌমিক তা মানতে নারাজ। তাঁর মতে, ‘‘বাংলায় যে এত বার এত লোকে ব্যোমকেশ করছে, এর পিছনে কি কোনও অভিপ্রায় রয়েছে? তা নয়। কিছু গল্প বারবার করে বলা যায়। দর্শক দেখতে পছন্দ করেন। হলিউডেও একই বিষয়ে সিনেমা-সিরিজ় হচ্ছে।’’
দেশ-রাজনীতি বিষয়ক সিরিজ়-সিনেমায় যদি এই ট্রেন্ড থাকে, তবে হিট সিনেমার ফর্মুলা মেনেও সিরিজ় তৈরি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি পুরোপুরি অর্থনৈতিক। ‘মর্দানী’, ‘লাভ সোনিয়া’ ছবির বিষয়গত প্রতিফলন দেখা গিয়েছে নেটফ্লিক্সের ‘শি’ এবং স্বরা ভাস্কর অভিনীত ‘ফ্লেশ’ সিরিজ়ে।
যে কোনও বিষয়ের বারবার উপস্থাপনা কথা বলার পরিসর তৈরি করে। তবে হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির সাম্প্রতিক ট্রেন্ডকে শুধুই শিল্পের আঙ্গিকে দেখলে হয়তো এর অন্তর্নিহিত গূঢ়ার্থকে উপেক্ষা করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy