বুম্বাদাকে নিয়ে মিশকার স্বপ্ন দেখার শুরু মেয়েবেলা থেকে।
জন্মদিনের সকালেও কথা হয়েছে বুম্বাদার সঙ্গে। আপনাদের প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। শুভেচ্ছা জানালাম দাদাকে। দাদাও ফিরে বার্তা পাঠালেন। জানি, আজ সারা দিন বুম্বাদা শুভেচ্ছায় ভাসবেন। টলিউডের অভিভাবক তিনি। তবু শুভেচ্ছা জানালে প্রত্যুত্তরে শুভেচ্ছা জানাতে হয়, এটা কখনও ভোলেন না। আজ সারা দিন ওঁর কথা ঘুরেফিরে মনে পড়েছে। খুব কম কাজ করেছি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। একটি ছবি, একটি ধারাবাহিক। অথচ, কত স্মৃতি ওঁকে নিয়ে।
বুম্বাদাকে নিয়ে আমার স্বপ্ন দেখার শুরু মেয়েবেলা থেকে। আমি তখন পাঁচ কি ছয়। নদিয়ার এক আধা মফ্সসল শহরে বাবার চাকরি। ওখানে একবার মাচা করতে এসেছিলেন বুম্বাদা। তখন ওঁর ‘অমর সঙ্গী’র ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ গান চারিদিকে সারাক্ষণ বাজছে। ওই গানের তালে দাদা মঞ্চে। পরনে দুধ সাদা পোশাক। দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছি। ঘুমন্ত অবস্থাতেই আমায় কোলে তুলে বাড়ি নিয়ে এসেছেন মাসি-পিসিরা। কিন্তু বুম্বাদাকে দেখার ওই স্মৃতি বহুকাল আবছা হয়েও থেকে গিয়েছে মনে। গল্পে পড়তাম রাজপুত্রের কথা। কল্পনায় ভেসে উঠত বুম্বাদার মুখ! ও রকমই সাদা পোশাক পরে যেন ছবির দৃশ্যের মতো ধীর গতিতে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। ধীরে ধীরে বুম্বাদাই হয়ে উঠলেন আমার স্বপ্নে দেখা রাজপুত্র। সেই আবেশ, সেই ঘোর অনেক কাল আমার সঙ্গী ছিল।
জীবন কী বিচিত্র! জাম্প কাটে সেই আমিই বড় হয়ে বুম্বাদার মুখোমুখি। বিরসা দাশগুপ্তের ‘মহানায়ক’ ধারাবাহিকে আমি ওঁর স্ত্রী গৌরী দেবী। শুধু এটুকু হলেও কথা ছিল। ধারাবাহিকে আমাদের আবেগঘন চুম্বন দৃশ্য ছিল! যা ছোট পর্দায় প্রথম অভিনীত হয়েছে। আরও মজার কথা, ওই দৃশ্যে অভিনয় করে আমি বা বুম্বাদা আবেগতাড়িত হয়ে পড়িনি। আমার মাসি-পিসিরা সেই দৃশ্য দেখে বিহ্বল। বিস্ময়ে হাবুডুবু খেতে খেতে আমায় ফোনে তাঁরা বলেছিলেন, সে কী রে! যাঁর নাচ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছিলি। আমরা তোকে কোলে করে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছিলাম। সেই তুই আজ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে জড়িয়ে ধরে সপাটে চুমু খেলি! এই গল্প বুম্বাদা জানেন না। তবে, আমি বুম্বাদাকে বড্ড ভালবাসি, দাদা জানেন। ওঁর কাছে আমার কোনও কথা গোপন নেই!
‘মহানায়ক’-এর আগে বুম্বাদার সঙ্গে আমার প্রথম কাজ কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘ক্ষত’ ছবিতে। প্রথম দিন অভিনয় করতে এসেই অভিনয়ে ভুল করেছিলাম। আমি, পাওলি দাম আর বুম্বাদাকে নিয়ে দৃশ্য। ওঁদের অনেকটা অভিনয়ের পর আমি দৃশ্যে ঢুকব। ওই ঢোকার সময়েই ভুল হয়ে গিয়েছিল। সদ্য মঞ্চ থেকে এসেছি। ক্যামেরার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। আমি সংকোচে কুঁকড়ে এতটুকু। বুম্বাদা বা পাওলি কিন্তু একটুও রাগ করেননি। আমিও আস্তে আস্তে ধাতস্থ হয়েছি।
বু্ম্বাদা মানেই সকলের বল-ভরসা। সেটে এসে সবার খোঁজ নেওয়া। সবাইকে নখদর্পনে রাখা। যেন অভিভাবক। তেমনই ভীষণ ভালমানুষ। বাড়ি থেকে সংলাপ মুখস্থ করে আসেন। যাতে বাকি অভিনেতাদের অসুবিধে না হয়। খাওয়া দাওয়ায় কোনও লোভ নেই। অতিমাত্রায় সংযমী। আমারই মাঝে মাঝে মনে হয়, এক-আধবার সংযমের রাশ ঢিলে দিলে কী হয়? পরক্ষণে নিজেই ভাবি, তা হলে এ ভাবে আর কাজ করতে পারবেন না। যেমন আছেন তেমনই থাকুন। এই বুম্বাদাই কাজ আদায় করতে উপহার দেন, প্রশ্রয় দেন বাকি অভিনেতাদের। আমায় কত বার চকোলেট উপহার দিয়েছেন। ‘মহানায়ক’ ধারাবাহিকে বড় বড় দৃশ্য থাকত। তার উপরে পোশাক পরিবর্তনের হ্যাপা। বুম্বাদা আমায় লোভ দেখাতেন, ‘‘যদি তাড়াতাড়ি সেজে নিতে পারিস তা হলে চকোলেট দেব।’’ ওই লোভে আমিও ঝটপট সেজে নিতাম। পরের দিন রূপটান ঘরে এসে দেখতাম, টেবিলের উপরে একমুঠো চকোলেট রাখা!
এই বুম্বাদার চাপে পড়েই প্রিয়াঙ্কা সরকার, তনুশ্রী চক্রবর্তী, পাওলি দাম, আমায় কত সবুজ আপেল খেতে হয়েছে! দাদা খাবেন না। এ দিকে ফেলে দিতেও পারছেন না। কাউকে তো খাওয়াতে হবে। আমাদের ডেকে গম্ভীর গলায় বলতেন, ‘অনেক আজেবাজে খাবার খেয়েছিস। এ বার ভাল কিছু খেয়ে নে। সবুজ আপেল তোদের জন্য রইল।’ আমরাও বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নিতাম। কী করব! বুম্বাদা বললে না করা যায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy