Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Sean Connery

বাংলায় যে জেমস বন্ড করব, মিমি কি পর্দায় বন্ড গার্লের মতো চুমু খেতে রাজি হবে

বাংলা ছবির পর্দায় কি জেমস বন্ডকে ওই ভাবে আশ্লেষে চুমু খাওয়ানো যেত? ওই শরীরী প্রেম দেখানো যেত? বন্ডগার্লই বা কাকে করতাম?

‘অনস্ক্রিন চুমু কী ভাবে খেতে হয়, সেটা খুব কম অভিনেতাই জানেন।’ গ্রাফিক:তিয়াসা দাস

‘অনস্ক্রিন চুমু কী ভাবে খেতে হয়, সেটা খুব কম অভিনেতাই জানেন।’ গ্রাফিক:তিয়াসা দাস

অরিন্দম শীল
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২০ ০০:০৭
Share: Save:

বাংলায় বন্ড মুভি করলে কাকে জেমস বন্ড করতাম?

একমেবাদ্বিতীয়ম জেমস বন্ড শন কনারির মৃত্যুর পর আনন্দবাজার ডিজিটালের হয়ে লিখতে বসে প্রথমেই এই প্রশ্নটা মনে এল। তার পর মনে হল, বাংলা ছবির পর্দায় কি জেমস বন্ডকে ওই ভাবে আশ্লেষে চুমু খাওয়ানো যেত? ওই শরীরী প্রেম দেখানো যেত? বন্ডগার্লই বা কাকে করতাম?

এমনি ছবির ক্ষেত্রেই কাস্টিং করতে আমার কালঘাম ছুটে যায়। বন্ড কাকে করতাম, সেটা কয়েকশো কোটি টাকার প্রশ্ন। বোধহয় তপস্যায় বসতাম। কিন্তু তপস্যা শেষে দেখতাম— ধূ ধূ মরুভূমি। একেবারে সাহারা। কোথাও মরীচিকাটুকুও দেখা যাচ্ছে না। তবে নতুনদের মধ্যে একটা সিরিয়াসনেস রয়েছে। একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না। প্রয়োজন এক জন নতুন হিরোর। যিনি সার্বিক অভিনেতা হবেন। তিনি চায়ের কাপে চুমুক দিতে পারেন। কিন্তু রোমান্টিজমটাও সমানে সমানে হতে হবে। ওই অরাটা চাই আমার। একটা রিয়্যালিস্টিক ক্যারেকটার চাই।

আর বন্ডের ওই বান্ধবীকে সাপটে ধরে চুমু? বাংলায় আগে সবাই বরং চুমু খাওয়া প্র্যাকটিস করুক! অনস্ক্রিন চুমু কী ভাবে খেতে হয়, সেটা খুব কম অভিনেতাই জানেন। আসলে ওটা চুমুরও ব্যাপার নয়। ওটা ন্যাচারাল প্যাটার্ন অ্যাকটিং। সেই অনুশীলনের অভাব রয়েছে এখানে। আমার ব্যোমকেশে সেটা ছিল। সে চুমুও খেতে পারে। আবার গীতগোবিন্দও আওড়ায়। সেগুলো দিয়েই আমাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়।

বন্ডের ওই বান্ধবীকে সাপটে ধরে চুমু? বাংলায় আগে সবাই বরং চুমু খাওয়া প্র্যাকটিস করুক! ছবি: সংগৃহীত

আরও পড়ুন: ৯০ বছর বয়সে ঘুমের মধ্যেই চলে গেলেন ‘জেমস বন্ড’ শন কনারি

আর বন্ডগার্ল? টলিউডে অনেকেই আছে, যারা অত্যন্ত গ্ল্যামারাস। সেই তালিকার একেবারে উপরে থাকবে নুসরত আর মিমি। দু’জনেই গ্ল্যামারাস। দু’জনেই প্রয়োজনে লাস্যময়ী। কিন্তু ওরা কি পর্দায় চুমু খেতে রাজি হবে? দু’জনেই তো সাংসদ। জনপ্রতিনিধি!

বলতে বাধ্য হচ্ছি, বাংলায় জেমস বন্ড বানানোর মতো অভিনেতা প্রায় নেই-ই। শন কনারির একটা স্ক্রিন প্রেজেন্স ছিল। তাঁর দাঁড়ানোটা দেখেই লোকে প্রেমে পড়ে যেত। প্রেমে পড়ে যেত তাঁর কথা বলা, মদের গেলাসে চুমুকে, চাহনিতেও। এটাই এক জন অভিনেতার সাফল্য। সেই কারণে শন কনারি সর্বকালের হিরো। যতদিন না ড্যানিয়েল ক্রেগ এলেন, ততদিন পর্যন্ত আমার প্রিয়তম জেমস বন্ড কিন্তু ছিলেন শন কনারি।

শন কনারির একটা ‘অরা’ ছিল। ছবি: সংগৃহীত

আরও পড়ুন: জেমস বন্ডের পাশে পর্দায় কম উষ্ণতা ছড়াননি বন্ডগার্লরা

এটা ঠিক যে, আমি একটা জেমস বন্ডের ছবি বানানোর স্বপ্ন দেখি কিন্তু। স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই। তবে বাংলায় কাজ করতে গেলে কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখতে হয়। তার প্রথমটা বাজেট। কিন্তু স্বপ্ন দেখা কে থামায়! লার্জার দ্যান লাইফ ছবিটা করার ইচ্ছে তো থেকেই যায়। যদিও কয়েকশো কোটি টাকা দিয়ে বানানো লার্জার দ্যান লাইফ ছবির সঙ্গে তো দু’আড়াই কোটি টাকা বাজেটের ছবির কোনও তুলনাই আসে না।

কিন্তু যখন ব্যোমকেশ বক্সি পেলাম, মনে হল, তাকেই লার্জার দ্যান লাইফ করব। শবরটা তা ছিল না। শবর ভীষণ প্ল্যান্‌ড। কিন্তু ব্যোমকেশ রোম্যান্টিক। সে জন্য ব্যোমকেশকে নিয়ে প্রথম ছবি ‘হর হর ব্যোমকেশ’-এ দেখিয়েছিলাম ব্যোমকেশ হানিমুনে গেছে। সত্যবতীকে চুমু খাচ্ছে। পিছনে স্থির গঙ্গা বয়ে যাচ্ছে। একটা শান্ত সুন্দর প্রেম। তার সঙ্গে বৈপরীত্যে একটা অশান্ত প্রেম। শরীরী প্রেম। বৈপরীত্যটা আনতে চেয়েছিলাম। ছবি করার ক্ষেত্রে আমার কোথাও গোঁড়ামি নেই। ব্যোমকেশেও সেই গোঁড়ামিটা ছিল না।

জেমস বন্ডের ‘ডক্টর নো’, ‘লাইসেন্স টু কিল’ ছবিগুলো দেখলে বোঝা যায়, হলিউডের ছবিরও কোনও বিশাল টেকনিক্যাল ব্যাপার ছিল না। কাঠের পাটাতন সরে যাচ্ছে। লাল-নীল আলো জ্বলছে। ওই ধরনের প্রোডাকশন ডিজাইন বাংলা চলচ্চিত্রে তখন ছিল না। তাই সেগুলো দেখে বিশাল আপ্লুত হয়েছি। পরবর্তী কালে যখন ড্যানিয়েল ক্রেগের বন্ড দেখছি বা আজকের বন্ড দেখছি, তখন অন্য টেকনোলজি চলে এসেছে। তার ধারেকাছে আমরা পৌঁছতে পারিনি। সে দিনই পারিনি। এখনও পারছি না। তার কারণ, প্রথমত বাজেট। দ্বিতীয়ত, টেকনোলজি। দুটোই ওদের ক্ষেত্রে বিশাল মাপের।

স্ক্রিন প্রেজেন্সই যে এক জন অভিনেতাকে লার্জার দ্যান লাইফ করে তোলে, সেটা কিন্তু বন্ড দেখে শিখেছি। ছবি: সংগৃহীত

বন্ডের চুম্বন দৃশ্য, বন্ডের একান্ত ঘনিষ্ঠ দৃশ্যগুলো আমাদের সেই বয়স থেকে রোমান্টিক হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। শন কনারির একটা ‘অরা’ ছিল। অন্যান্য ছবিতেও ওঁর একটা আসাধারণ স্ক্রিন প্রেজেন্স ছিল। স্ক্রিন প্রেজেন্সই যে এক জন অভিনেতাকে লার্জার দ্যান লাইফ করে তোলে, সেটা কিন্তু বন্ড দেখে শিখেছি। ওই যে বন্ডকে আটকানো যায় না, বিপদে পড়লেও বেরিয়ে আসতে পারে, বন্ডের জন্য মহিলারা পাগল— আমি সেগুলো সব ব্যোমকেশেও করার চেষ্টা করেছি।

জেমস বন্ডের ছবি আমাদের সর্বকালের প্রিয় হয়েই থাকবে। ধামাকা ফিল্ম, রিয়ালিজমের ধার না ধেরে তৈরি ছবি, যা দেখে সাঙ্ঘাতিক মজা হয়, ধুমধাড়াক্কা মারপিট, গাড়ি নানারকম হয়ে যায়, অলিগলির ভিতর দিয়ে উড়ে বেরিয়ে যায়, কখনও ব্যাটম্যান হয়— এই অবাস্তব বিষয় আমাদের প্রবল আমোদ দেয়। এমন ছবি তো কখনও কখনও বাংলাতেও করতে ইচ্ছে করে। করতে পারলে বন্ডের সেই বিষয়গুলো রাখতাম। কোনও গোঁড়ামির প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। নেটফ্লিক্সের জমানায় নন সেন্সর ফিল্ম থেকে সিরিজ দেখছি, সেখানে বন্ডের চুমুতে কী এসে যায়! ওটাই তো মজা। ওই মজাটা রিক্রিয়েট করতে ইচ্ছে করে। নানা ভাবে আমার থ্রিলারের মধ্যে সেটা করার চেষ্টা করি। কিন্তু কিছু ইচ্ছে স্বপ্নই থেকে যায়! বন্ডের ছবিকে একেবারে বন্ডের মতো করে তুলতে আমার কোনও অসুবিধা নেই। শন কনারি যখন বন্ডের ছবি করতেন, তখন ছবিতে নিছক চুমুই থাকত। তার থেকে খুব বেশি সাহসী কিছু থাকত না। আমার কিন্তু আরও সাহসী হতে কোনও অসুবিধা হবে না। বাঙালি দর্শক বন্ড দেখে মজা পেয়ে থাকলে বাংলায় বন্ড দেখেও মজা পেতে পারে। আমার বাঙালি দর্শকের উপর সেই আস্থা আছে।

জেমস বন্ডের ছবি আমাদের সর্বকালের প্রিয় হয়েই থাকবে। ছবি: সংগৃহীত

লিখতে বসে মনে হচ্ছে, বাংলায় বন্ড করলে সেটা একটা অসাধারণ ব্যাপার হত। কিন্তু একটা খুব সত্যি কথাও মানতে হবে। স্পাই মুভিজ এবং বন্ড ফিল্মের ক্ষেত্রে ছবিকে যে পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, বাংলা কেন, কোথাও সেটা ‘রিক্রিয়েট’ করা সম্ভব বলে আমার মনে হয় না। হাভিয়ার বার্দেমের মতো এক জন অভিনেতাকে দিয়ে একটা অসাধারণ ভিলেনের চরিত্র করানো হল। আমরা সব সময় বলি, হিরোকে শক্তিমান হতে হলে একটা আরও শক্তিশালী ভিলেন করতে হবে। আমার কিন্তু সবচেয়ে ভাল লেগেছে বার্দেমকে।

তবে স্বপ্নটা আমি এখনও দেখি। ইচ্ছেটা থাকুক না হয়। ক্ষতি কী!

অন্য বিষয়গুলি:

Sean Connery James Bond Hollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy