বাসু চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
বলিউডের জন্মলগ্নে যে সব বাঙালি শিল্পী ও কলাকুশলীর হাত ধরে হিন্দি সিনেমার বিপুল সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল তাঁদের শেষ সদস্য বাসু চট্টোপাধ্যায় ৯৩ বছর বয়সে চলে গেলেন। ১৯২৭-এর ১০ জানুয়ারি তাঁর জন্ম রাজস্থানের আজমের শহরে। যদিও তাঁর জীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়েছেন কলকাতায়। তাঁর দুই কন্যা, রূপালি গুহ ও সোনালি ভট্টাচার্য। সিনেমার পরিবেশে বড় হলেও সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হননি তাঁরা।
বাসু কর্মজীবনে একজন রাজনৈতিক কার্টুনশিল্পী হিসেবে ‘ব্লিৎজ’ পত্রিকার সঙ্গে টানা উনিশ বছর কাজ করেন। পরে চলচ্চিত্রের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। মুম্বইয়ের বিখ্যাত ‘ফিল্ম ফোরাম চলচ্চিত্র সোসাইটি’র সদস্য হিসেবে এই আন্দোলন তাঁকে সারা বিশ্বের চলচ্চিত্রের সঙ্গে পরিচয় করায়। পরবর্তীকালে বাসু চট্টোপাধ্যায় ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটির পশ্চিমাঞ্চল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন।
চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ তাঁকে এই মাধ্যমটির আরও কাছাকাছি এনে দেয় যখন তিনি বাসু ভট্টাচার্যের ‘তিসরি কসম’ ছবিতে তাঁর সহকারী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। সেটা ১৯৬৬। ১৯৬৮ সালে বাসু পরিচালক গোবিন্দ সারিয়ার ‘সরস্বতীচন্দ্র’ ছবিতেও সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এরপরের বছর, ১৯৬৯-এ তিনি তৈরি করেন ‘সারা আকাশ’ ছবিটি। যা তাঁকে বিমল রায়, বাসু ভট্টাচার্য প্রমুখ হিন্দি সিনেমার সার্থক বাঙালি পরিচালকের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ‘সারা আকাশ’ সেই সময় জনপ্রিয় ছবি হিসেবে স্বীকৃত হয় ও ছবিটিকে ‘মিডল-অফ-দ্য-রোড’ সিনেমার উল্লেখযোগ্য সংযোজন হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। ছবিটি ফিল্মফেয়ার থেকে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যর পুরস্কার পায় ১৯৭২ সালে।
মৃণাল সেন ও সলিল চৌধুরীর সঙ্গে বাসু চট্টোপাধ্যায়। ছবি আনন্দবাজার পত্রিকার আর্কাইভ থেকে।
আরও পড়ুন: ফিল্ম তো বটেই, কার্টুনিস্ট হিসাবে কেরিয়ার শুরু করা বাসু অমর হয়ে থাকবেন মাইলস্টোন দুই সিরিয়ালের জন্যও
‘সারা আকাশ’-এর সাফল্যের পর তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর ‘পিয়াকা ঘর’, ‘উসপার’, ‘রজনীগন্ধা’, ‘ছোটি সি বাত’, ‘চিতচোর’, ‘স্বামী’, ‘সফেদ ঝুট’, ‘খাট্টা মিট্টা’, ‘দিল্লাগী’ ‘দুর্গা’ প্রভৃতি বক্স অফিস সফল ছবি তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয়।
সত্তর দশকে হিন্দি ছবির পর্দা কাঁপাচ্ছেন অ্যাংরি ইয়াংম্যান অমিতাভ বচ্চন এবং অ্যাকশন ছবির দৌরাত্মে অন্য ছবি কোণঠাসা। এরই মাঝে বাসু চট্টোপাধ্যায় কিন্তু সহজ সরল মিষ্টি প্রেমের গল্প বলছেন তাঁর ছবিতে। অমল পালেকরকে নিয়ে ‘ছোটি সি বাত’, ‘রজনীগন্ধা’, জয়া ভাদুড়িকে নিয়ে ‘পিয়া কা ঘর’-এর মতো ছবি তৈরি করছেন। আবার বাণিজ্যিক কারণে সুপারস্টার অমিতাভ, রাজেশ খন্না, দেব আনন্দ, মিঠুনকে নায়ক হিসেবে রেখে তৈরি করছেন ‘মঞ্জিল’ (‘আকাশ কুসুম’ ছবির হিন্দি), চক্রব্যূহ, ‘মনপসন্দ’ এবং ‘সৌকিন’। ১৯৮৬-তে ‘এক রুকা হুয়া ফয়সালা’ করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। ‘টুয়েলভ অ্যাংরি মেন’ অবলম্বনে তৈরি এই ছবি।
ভারতীয় টেলিভিশনের আদি যুগে তাঁর তৈরি ‘রজনী’ ধারাবাহিকে নামভূমিকায় প্রিয়া তেন্ডুলকর যেমন অমর হয়ে আছেন তেমনই‘ব্যোমকেশ বক্সী’ ধারাবাহিকে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অমর চরিত্রের প্রথম সার্থক রূপায়ণ দেখেছিল ভারতীয় দর্শক। তাঁর ব্যোমকেশ, রজিত কপূর আজও অবিস্মরণীয়। সারা জীবনে তিনি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ধারাবাহিক মিলিয়ে মোট ৪৮টি ছবি করেছেন। ১৯৯৮ সালে তিনি প্রথম বাংলা ছবি বানান ‘হঠাৎ বৃষ্টি’। ২০১২ সালে বাংলা ছবি ‘হঠাৎ সেদিন’ তাঁর জীবনের শেষ ছবি।
বাসু চট্টোপাধ্যায়ের ওপর টালিগঞ্জের এক বিশেষ নির্ভরতা ছিল। ‘মাদার’ ছবির পরিচালক ছবির একটি গান পিকচারাইজ করার জন্য বাসু চট্টোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। দীপঙ্কর দে ও শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত এই গানের দৃশ্যটি আজও দর্শকের স্মৃতিতে অম্লান।
বাংলা সাহিত্যের মিষ্টি প্রেমকে বলিউডের হেঁসেলে নিয়ে গিয়ে ফেলার অন্যতম এক প্রধান কারিগর আজ চলে গেলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy