অতিমারির মধ্যেও সগৌরবে ৫০ দিন পেরোল অংশুমান প্রত্যুষের ‘এসওএস কলকাতা’। সেই আনন্দ তিনি উপভোগ করছেন পুরুলিয়ায়। ছোট পর্দায় ধারাবাহিক ‘অগ্নিশিখা’ পরিচালনার মধ্যে দিয়ে। যা দেখা যাবে সান বাংলায়। নুসরত জাহান-যশ দাশগুপ্ত-মিমি চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজের পর এ বার অংশুমান নতুন ধারাবাহিকে মনের মতো করে গড়েপিটে নিলেন মেগার নতুন নায়ক-নায়িকা সৌর্য ও আরাত্রিকাকে।
গল্প যেমন....
ছোট পর্দার দর্শক নারীর জয় দেখে অভ্যস্থ। ‘অগ্নিশিখা-ও তার ব্যতিক্রম নয়। সাঁওতালি মেয়ের সঙ্গে শহরের শিক্ষিত যুবকের প্রেম ও পরিণতির পাশাপাশি আদিবাসী তরুণীর কঠোর সংগ্রাম উঠে আসবে ধারাবাহিকে। পুরুলিয়ার এক প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামের মেয়ে শিখা। উচ্চ মাধ্যমিকে জেলার মধ্যে প্রথম হয়েছে। স্বাধীনচেতা মেয়েটি স্থানীয় মানুষদের প্রতিনিধি। সারাক্ষণ স্বপ্ন দেখে, সরকারি চাকরি করে গ্রামের উন্নতি করবে।
এই মেয়ের জীবনে আসে বিদেশের উচ্চশিক্ষিত বিক্রম। বিক্রমের বাবার ইচ্ছে, এই গ্রামে রিসর্ট খুলে ব্যবসা করবেন। গ্রামের মানুষদের বশ করতে প্রথমেই তিনি হাসপাতাল তৈরির কথা ঘোষণা করেন। সংবর্ধনা সভায় শিখা বিক্রমকে মালা পরিয়ে বরণ করে নিতেই বিক্রম সৌজন্য দেখিয়ে নিজের গলার মালা পরিয়ে দেয় শিখার গলায়। আদিবাসী সমাজে যা বিয়ের নামান্তর। বিক্রম এবং তার পরিবার কি মেনে নেবে এই সম্পর্ক?
‘কোরাপাখি’ নয়, ‘অগ্নিশিখা’ একদম আনকোরা...
স্টার জলসায় কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে ধারাবাহিক ‘কোরাপাখি’। সেখানেও আদিবাসী শিক্ষিত আমনের প্রেমে পড়েছিল শহরের অঙ্কুর। ‘অগ্নিশিখা’য় কি তারই ছায়া? উত্তরে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর এবং চিত্রনাট্যকার সন্দীপ চৌধুরীর দাবি, ‘‘অন্দরমহলের কূটকচালি নয়, আদিবাসী মেয়ের যাপিত জীবন, সংগ্রাম এই ধারাবাহিকের মূল কথা। ‘অগ্নিশিখা’ একদম আনকোরা।’’
অংশুমান প্রত্যুষের 'এসওএস কলকাতা'র একটি দৃশ্য।
আদিবাসীই কেন? আজও শহর বা শহরতলির বহু মেয়ে প্রতি মুহূর্তে লড়ছেন নিজেদের অধিকার চেয়ে। তাঁদের কথা নয় কেন? সন্দীপের যুক্তি, এখনও আদিবাসী গ্রামে, সেখানকার অধিবাসীদের চোখে শহরের মানুষেরা দেবতা সমান। তারা যখন শহরবাসীর আসল রূপ দেখতে পায় তখন কী অবস্থা হয় তাদের? এই দিকটাই তুলে ধরবে নতুন ধারাবাহিক।
আরও পড়ুন: ‘ভাল ছবি করতে সময় লাগে’, অক্ষয়ের প্রশংসায় চটলেন অভিষেক
ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর, চ্যানেল এক সঙ্গে বেছেছেন আমায়
এক বছর আগে একটি ছোট ছবি সূত্রে মেগার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টরের সঙ্গে প্রথম আলাপ সৌর্যের। এক বছর পরে সৌর্য ডাক পান তাঁর থেকে। একই সঙ্গে সান বাংলা থেকেও। ‘অগ্নিশিখা’-র জন্য। বাকিটা স্বপ্ন.... অকপটে স্বীকার ধারাবাহিকের নায়কের।
সৌর্যই নতুন ধারাবাহিকের ‘বিক্রম’।
অংশুমান প্রত্যুষের পরিচালনায় প্রথম কাজ। শুরুতেই মেগার নায়ক। টানা ১৫ দিনের শ্যুটে দিনরাত ক্যামেরা ফেস করছেন। কেমন লাগছে? এই বদল নিজেই এখনও পুরোপুরি বিশ্বাস করে উঠতে পারেননি সৌর্য। জানালেন, ‘‘পুরোটাই স্বপ্নের মতো লাগছে। যাঁর ছবি ৫০ দিন ছুঁয়েছে সেই অংশুমান প্রত্যুষ আমায় পরিচালনা করছেন। অযাচিত সৌভাগ্য। সবাই ভীষণ সাহায্য করছেন। শিখিয়ে পড়িয়ে নিচ্ছেন। কারণ, আমি এ ভাবেও আগে ক্যামেরা ফেস করিনি। আমার চরিত্রও ভীষণ রক্তমাংসের, ভাল-মন্দয় গড়া। সব মিলিয়ে এখনও ঘোর কাটেনি।’’
এক মাসের ওয়র্কশপে কী শিখলেন? একদম শুরুতে ছিল থিয়েটার গেমস। যার নিয়মিত অভ্যাস অভিনেতা হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। প্রতিটি দৃশ্য নিয়ে বারবার মহড়া, আলোচনা, কী করে তাকে ক্যামেরার সামনে ফোটানো হবে দেখিয়ে দিয়েছেন পরিচালক। ফলে শ্যুটিং শুরুর প্রথম দিন থেকেই মোটামুটি ক্যামেরার সামনে স্বচ্ছন্দ তিনি, জানালেন অভিনেতা।
আরও পড়ুন: কার সঙ্গে জুটি বাঁধবেন অঙ্কুশ? ঐন্দ্রিলা নাকি ইশা?
মা-বাবার সঙ্গেও আদিবাসী ভাষায় কথা বলেছি
‘অগ্নিশিখা’ এক সঙ্গে অনেক কিছু প্রথম ঘটিয়েছে আরাত্রিকা মাইতির অভিনয় জীবনে। যেমন, এই প্রথম তিনি ধারাবাহিকের নায়িকা। বড় পর্দার পরিচালকের সঙ্গে কাজ করছেন। এবং আদিবাসী ভাষায় সংলাপ বলতে হচ্ছে। এক সঙ্গে এত গুলো ‘প্রথম’-এর ধাক্কায় বেসামাল অভিনেত্রী? পুরুলিয়ার ঠাণ্ডায় গলা ধরে গিয়েছে। ভাঙা গলা কিন্তু খুশির রেশ চাপা দিতে পারেনি, ‘‘সব কটাই চ্যালেঞ্জ আমার কাছে। এর আগে ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছি। নায়িকা এবং আদিবাসী মেয়ের চরিত্রে এই প্রথম। ওয়র্কশপ হলেও তখনও সংলাপ হাতে না পাওয়ায় রিহার্স করতে পারিনি। ফলে, বাড়িতে সমানে অভ্যাস করতাম। মা-বাবার সঙ্গেও সারাক্ষণ ওই ভাষাতেই কথা বলেছি।’’
ফলে, আরাত্রিকার এখন সাবলীল ভাবেই ক্যামেরার সামনে আদিবাসী সংলাপ বলছেন। যত দিন যাচ্ছে ততই তিনি ক্রমশ আরিত্রিকা থেকে চরিত্র ‘শিখা’ হয়ে উঠছেন ।
সিনেমার মতোই মেগার শ্যুট হচ্ছে অ্যালেক্সামিনি ক্যামেরায়
এটাই নতুন ধারাবাহিকের একাধিক প্লাস পয়েন্টের অন্যতম, দাবি পরিচালক অংশুমান প্রত্যুষের। ৫ বছর পরে ফের ধারাবাহিক পরিচালনায় তিনি। বিশেষ কারণ? অংশুমানের কথায়, বিনোদন সব মাধ্যমেই সমান। বাড়তি আগ্রহ জন্মেছে গল্প শোনার পর। তখনই ঠিক করেন, এ বার বড় পর্দার ফ্লেভার ছোট পর্দায় ছড়িয়ে দেবেন।
নুসরত-যশ-মিমির সঙ্গে কাজের পরে নতুন নায়ক-নায়িকা। খুশি নাকি চাপে? ‘‘বলতে পারেন দর্শকদের মতো আমারও চোখের, মনের আরাম হল। নতুনদের গড়ে নিতে বেশ ভাল লাগে। কাজ করে আনন্দ পাচ্ছি।’’
নতুন কাজ নিয়ে উথসাহী ধারবাহিকের প্রযোজক ফিরদৌসাল হাসান।তিনি বললেন, “ছবির ক্ষেত্রে আমি বরাবর এক্সপেরিমেন্ট করে এসছি। রিস্ক নিয়েছি। এখন মানুষের আগ্রহ ধারাবাহিকে সেই জায়গা থেকে এই প্রথম ধারাবাহিকের কাজে হাত দিলাম। খুব বড় স্কেলে কাজ হচ্ছে, আশা করি মানুষের পছন্দ হবে।”
শুধুই নতুনদের নয়, ধারাবাহিকে দেখা যাবে সাগ্নিক, অনিন্দ্য বাগচির মতো দুঁদে অভিনেতাদেরও। পুরুলিয়ায় শ্যুট শেষ হলেই টিম ‘অগ্নিশিখা’ শ্যুট শুরু করবেন কলকাতায় ভরতলক্ষ্মী স্টুডিয়োয়। সান বাংলায় ধারাবাহিকটি দেখানো শুরু হবে নতুন বছরের মাঝামাঝি সময়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy