‘রক্তবীজ’ ছবির একটি দৃশ্যে মিমি-আবীর। ছবি: সংগৃহীত।
গত কয়েক বছর ধরে একটি কথা খুব ঘুরছে। ‘উইমেন টেলিং উইমেন স্টোরিজ়’। মেয়েদের গল্প পর্দায় বলতে হলে, মেয়েদের বলাই ভাল। ছেলেরা হয়তো মেয়েদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গল্প বলতে পারবেন না। আর সেটা পারলেও, অন্য একটি ডিসকোর্স উঠে আসে। কেন মেয়েদের নিজেদের কথা বলার অধিকার দেওয়া হবে না। হলিউডে গ্রেটা গেরউইগের উত্থান এই ধরনের ডিসকোর্স আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে। এমনিতে তাতে কোনও অসুবিধা নেই। নারী পরিচালকের সংখ্যা বিশ্ব জুড়েই খুব বেশি নয়। তাই মেয়েদের গল্প বলার জন্য মেয়েরা যদি এগিয়ে আসেন, তাতে ক্ষতি নেই। তবে এর একটা অন্য দিকও রয়েছে। এই ধরনের ডিসকোর্স এক জন শিল্পীকে একটি গণ্ডিতে আটকে দেয়। মেয়েরা কি শুধুই মেয়েদের গল্পই বলবে? ‘বার্বি’ মানেই নারী পরিচালক আর ‘ওপেনহাইমার’ মানেই কি পুরুষ পরিচালক? মেয়েরা যুদ্ধের ছবি, বায়োপিক, সুপারহিরো ছবি, গুপ্তচরের ছবি বানাবেন না?
এই ধরনের সঙ্কীর্ণ মনোভাবের সঙ্গেই লড়তে হবে, মনে করেন চিত্রনাট্যকার জিনিয়া সেন। সদ্য মুক্তি পেয়েছে নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘রক্তবীজ’। ছবির চিত্রনাট্য এবং সংলাপ যৌথ ভাবে লিখেছেন জিনিয়া এবং শর্বরী ঘোষাল। ‘রক্তবীজ’ আদ্যোপান্ত সাসপেন্স থ্রিলার। সন্ত্রাসবাদ থেকে দুর্গাপুজো— সবই রয়েছে গল্পে। সাধারণত এই ধরনের অ্যাকশনবহুল থ্রিলারের পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন কোনও পুরুষ পরিচালক। লেখেনও ছেলেরাই। কিন্তু এখানে ছবির অন্যতম পরিচালক এক জন নারী। এবং গল্প লিখেওছেন দুই নারী। অনেকে অবশ্য তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন শুরু থেকেই। জিনিয়া বললেন, ‘‘মেয়েরা শুধু মেয়েদের গল্প বলবে— এই ধরনের চিন্তাধারাই আমাদের ভাঙতে হবে। যখন আমি লিখছিলাম, আমি খুব স্পষ্ট ভাবে বলেছিলাম, আমার গল্পে দু’জন চরিত্র রয়েছে। এক জন দলের নেতৃত্ব করবে। তার মাথা ঠান্ডা। তাকে অনেক কথা ভেবে কাজ করতে হয়। খুব প্রয়োজন না হলে সে গুলি চালানোর পক্ষপাতী নয়। অন্য জন হবে অনেক বেশি অ্যাগ্রেসিভ। তার মাথা চট করে গরম হয়ে যায়। গুলি চালাতে সে এক দণ্ডও ভাবে না। আমি প্রথম থেকেই বলেছিলাম, মেয়েটা হবে অ্যাগ্রেসিভ আর ছেলেটা শান্ত। তাতে লেখার সময় অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করে, এতে ছেলেটার হিরোইজ়ম কমে যাবে না তো? এই ধরনের প্রচুর প্রচলিত ধারণা আমাদের চারপাশে রয়েছে। সেগুলো ভাঙাটাই আসল চ্যালেঞ্জ।
নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি মানেই ঘরের ভিতরের গল্প, পারিবারিক ড্রামা। গল্প চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকলেও তাতে তাঁদের সুখ্যাতি দেশ-বিদেশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এ বার তাঁরা নিজেদের ঘরানার বাইরে গিয়ে বড় পরিসরে ছবি বানিয়েছেন। নিজেদের পুরনো ঘরানা যে একেবারে ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন, তা কিন্তু নয়। খুব সন্তর্পণে পুরনোকে নতুনের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন দু’জনে। তবে এত অ্যাকশন তাঁদের ছবিতে আগে চোখে পড়েনি। নন্দিতা বললেন, ‘‘এটা ঠিকই যে আমরা এই ঘরানার ছবি আগে বানাইনি। অ্যাকশন দৃশ্যের পরিচালনা করা সবচেয়ে কঠিনও। কিন্তু আগে করিনি বলে যে করতে পারব না, তা তো নয়। চ্যালেঞ্জটা নিয়ে নিলাম।’’
ছবির অন্যতম চিত্রনাট্যকার শর্বরী জানালেন, লেখালেখির সময় ছেলেমেয়ে নিয়ে আলাদা করে তিনি কোনও দিন ভেবে দেখেননি। কারণ, কিরণ বেদীকে দেখেই বড় হয়েছেন। ‘‘কিরণ বেদী যদি সাধারণততন্ত্র দিবসে অল মেন’স ক্যাভাল্রি লিড করতে পারেন, তা হলে মেয়েরা থ্রিলার লিখতে পারবে না কেন? জ়োয়া আখতারকে দেখুন, কত ধরনের ছবি করছেন। মেয়েদের শুধু মেয়েদেরই গল্প বলতে হবে, এ সব ধারণা এখন আর চলে না।’’
থ্রিলারে অনেক সময় মুখ্য চরিত্রে মেয়েরাও থাকেন। তবে গল্পে যদি সন্ত্রাসবাদ, দেশপ্রেম জাতীয় থিম থাকে, তা হলে সাধারণত মুখ্য চরিত্র কোনও এক জন পুরুষই হয়। যে গোটা গল্পটা একা হাতে এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে ‘রক্তবীজ’ সেখানেও ব্যতিক্রম। এখানে দু’জন পুলিশ চরিত্র রয়েছে। এক জন কেন্দ্রের (আবীর চট্টোপাধ্যায় অভিনীত), এক জন রাজ্যের (মিমি চক্রবর্তী অভিনীত)। তদন্ত এগোয় দু’জনের যুগলবন্দিতেই। তবে মজার বিষয়, গল্পে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ গুলি রয়েছে। এবং সেই দুটি গুলি কিন্তু পর্দায় চালিয়েছেন মিমিই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy