Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Movie review

মুভি রিভিউ ‘তানাজি’: অজয়কে ছাপিয়ে স্টার হয়ে গেলেন সেফই

কী আশ্চর্য! ছবির কাহিনির সঙ্গে কেমন ছত্রে ছত্রে মিলেমিশে গেল ‘তানাজি’র ভাগ্যও।

নাম ভূমিকায় অজয় দেবগন স্বয়ং।

নাম ভূমিকায় অজয় দেবগন স্বয়ং।

পরমা দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:৪৪
Share: Save:

ছবি: তানাজি

অভিনয়: অজয় দেবগন, সেফ আলি খান, কাজল, শরদ কেলকার

পরিচালনা: ওম রাউত

হাতিশালে হাতি ছিল। ঘোড়াশালে ঘোড়া। ছিল প্রবল পরাক্রমী বীর সেনাও। তবু যুদ্ধ জেতা হল না। মরাঠাদের গড় দখল করেও সেই হাতছাড়াই হয়ে গেল মুঘলদের।

এবং কী আশ্চর্য! ছবির কাহিনির সঙ্গে কেমন ছত্রে ছত্রে মিলেমিশে গেল ‘তানাজি’র ভাগ্যও। অজয় দেবগন, সেফ আলি, কাজল, শারদ কেলকারদের মতো জাত অভিনেতারা আছেন। আছে দুর্দান্ত ভিএফএক্সে জীবন্ত হয়ে ওঠা মারকাটারি যুদ্ধ, রোমহর্ষক হিংস্রতার দৃশ্যায়ন, লার্জার-দ্যান-লাইফ চোখ ধাঁধানো সেটে তুমুল নাটকীয়তা, জমকালো কোরিওগ্রাফি এবং মানানসই রাজকীয় মেজাজ এনে দেওয়া গান, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর। অবশ্যই আছে দুর্দম পৌরুষ, তুমুল দেশপ্রেম, অবিচল কর্তব্যবোধে মোড়া বারো আনার সঙ্গে ড্রামা-ইমোশন-সেন্টিমেন্ট-কমেডির পাঁচমিশেলি চার আনায় ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা বীরগাথার জমাটি বিনোদন। তবু শেষরক্ষা হল কই? এমন ভরপুর ভিস্যুয়াল ট্রিট এবং দমদার এন্টারটেনার হয়েও স্রেফ তাতেই আটকে রইল ‘তানাজি’। বাস্তবজীবনের চেয়ে অকারণে বড় বেশি বড় হয়ে ওঠা চরিত্রায়নে, অযথা অতিনাটকীয় কার্যকলাপে এবং অনর্থক ঢিমেতালে বলা গল্পে তার চেয়ে বেশি কিছু আর করা হয়ে উঠল না ওম রাউত পরিচালিত, অজয় দেবগন প্রযোজিত এই বিগ বাজেট ছবির।

সতেরো শতকে মুঘলদের হাত থেকে কোন্ধনা গড় পুনরুদ্ধারে প্রবল পরাক্রমী মরাঠা বীর তানাজির গৌরবময় ভূমিকার বীরগাথা নিয়েই এ ছবি। নাম ভূমিকায় অজয় দেবগন স্বয়ং। ছত্রপতি শিবাজীর (শরদ কেলকার) ডান হাত তানাজি মালুসরেকে কোন্ধনা গড়ে ফের মরাঠা স্বরাজ কায়েমের শপথ করিয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুপথযাত্রী বাবা। সে যুদ্ধেই শিবাজিকে পরাস্ত করে পুরন্দর চুক্তিতে কোন্ধনা-সহ ২৩টি গড় ছিনিয়ে নেয় মুঘল সম্রাট অওরঙ্গজেব ওরফে আলমগীরের যোদ্ধাবাহিনী। তারপরেই মরাঠাদের সম্মান ও স্বরাজ ফেরাতে বদ্ধপরিকর হন ছত্রপতি শিবাজি। অন্য দিকে, উত্তর ভারত জুড়ে মুঘল শাসন কায়েমের পর এ বার গোটা দাক্ষিণাত্যে সাম্রাজ্য বিস্তারে নিজের বিশ্বস্ত যোদ্ধা রাজপুত সেনাপতি উদয়ভান রাঠৌরকে ভার দেন আলমগীর। পরাক্রম, ক্রূরবুদ্ধি ও নৃশংসতায় যার জুড়ি মেলা ভার। বাবাকে দেওয়া কথা এবং শিবাজি রাজের প্রতি অটুট আনুগত্যে স্ত্রী সাবিত্রী (কাজল) এবং ছেলে রায়ভা-র সুখী পরিবার, ছেলের বিয়ের যাবতীয় আয়োজন ফেলে রেখে একক নেতৃত্বে মরাঠা বাহিনী নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তানাজি। দু’দলের বিশ্বাসঘাতকদের ছলচাতুরিতে, উদয়ভানের হাত থেকে বোন কমলকে বাঁচাতে চাওয়া রাজপুত নেতার সহায়তায়, তুমুল বীরত্ব-প্রবল আনুগত্যের মোড়া রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে নিজের প্রাণ খুইয়েও মরাঠাদের মান বাঁচাতে সমর্থ হন তিনি। তাঁর একক লড়াইয়ে ফের কোন্ধনা গড়ে মাথা তোলে মরাঠা স্বরাজের গেরুয়া পতাকা।

আরও পড়ুন-হ্যান্ডশেকের অছিলায় সারাকে জোর করে চুমু ভক্তর! নিন্দায় নেটিজেনেরা

কাজল-অজয় একসঙ্গে

চেনা ছকের লার্জার-দ্যান-লাইফ পিরিয়ড পিসে একাধারে পরাক্রমী পৌরুষ, শৌর্য-বীর্যের মূর্ত প্রতীক, প্রবল দেশপ্রেমিক এবং দায়িত্ববান পত্নীনিষ্ঠ স্বামীর ভূমিকায় অজয় দেবগনকে যেমনটা লাগার কথা ছিল, ঠিক তেমনই লেগেছে। এক দিকে তিনি বীরপুরুষ-সুলভ চোখা চোখা নাটকীয় সংলাপে, মরাঠা জাত্যাভিমানে, শিবাজী রাজের প্রতি অটুট আনুগত্যে, তুখোড় যুদ্ধসকৌশলও অস্ত্রচালনায়, দড়ি বেয়ে অতল খাদ পেরোনো বা দুর্গম পাহাড় চড়ার অনায়াস বীরত্বে নজর কাড়েন। অন্য দিকে সেই তিনিই ছেলের বিয়ে নিয়ে আবেগে চোখের জল ফেলা স্নেহশীল পিতা কিংবা স্ত্রী-র সাধপূরণে দুজনকে এক ফ্রেমে দেখতে পাওয়ার আয়না কেনা প্রেমিক স্বামী।

শিবাজীর ভূমিকায় বলিষ্ঠ অভিনেতা শরদের জাত্যাভিমানের প্রমাণটুকু দেওয়া ছাড়া তেমন কিছু করার ছিল না। পতিব্রতা স্ত্রীর দায়িত্বপালন এবং এক-আধটা রোমান্টিক মুহূর্ত ছাড়া বিশেষ কিছু করার ছিল না কাজলেরও।

আরও পড়ুন-দীপিকা, তোমার জন্য এখন থেকে কি কম অচ্ছুৎ হব?

তবে অজয় দেবগনের বীরগাথার এ কাহিনিতে চোখ টেনেছেন অবশ্যই সেফ আলি খান। তলোয়ারের এক কোপে হাতির শুঁড়, মরাঠা সেনা কিংবা নিজের বাহিনীর বিশ্বাসঘাতকের মা্থা উড়িয়ে দিতে এতটুকু হাত না কাঁপা, নিজে হাতে অবলীলায় কুমিরের রোস্ট থেকে মাংস খুবলে নেওয়া নৃশংসতা, বিপক্ষের চোখে ধুলো দেওয়া চাতুর্য, প্রেমিকার সম্মতি ছাড়া তাঁকে অধিকার করতে না চাওয়া পৌরুষে এবং স্রেফ দৃষ্টি ও হাসির ক্রুর হিংস্রতার মিশেলে সেফের উদয়ভান বারবারই ছাপিয়ে গিয়েছেন বাকিদের। এবং বোধ হয় নিজেকেও। এ ছবি তাই তানহাজির পাশাপাশি উদয়ভানেরও নিঃসন্দেহে।

লড়াই এবং যুদ্ধের প্রস্তুতির দৃশ্যগুলোয় প্রযুক্তির অনবদ্য ব্যবহা্র, রাজকীয় সেট, কেল্কো নকাহারার দুর্দান্ত সিনেম্যাটোগ্রাফি কিংবা অজয়-অতুলের জমজমাট ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর এবং চোখ ধাঁধানো কোরিওগ্রাফিতে এ ছবিতে বিনোদনের উপাদানের খামতি নেই। খুচরো কিছু লজিক্যাল ভ্রান্তি বাদ দিলে অ্যাকশন-ড্রামা-পিরিয়ড পিস প্রেমীদের নিরাশ হওয়ার কথাও নয়। বেশ কিছু দৃশ্য সত্যিই তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতোও।

বাধ সাধল শুধু ছবির গতি এবং ইতিহাসের মূল গল্পকে অযথা টেনে লম্বা করে তুমুল অতিনাটকীয় রূপায়ণ!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy