রাইমা ও পরমব্রত।
ছবি: দ্বিতীয় পুরুষ
অভিনয়ে: অনির্বাণ ভট্টাচার্য, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, রাইমা সেন, আবীর চট্টোপাধ্যায়, গৌরব চক্রবর্তী, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়
পরিচালনা: সৃজিত মুখোপাধ্যায়
‘ওহ মাই গড!’ ছবি ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছতেই দর্শকাসন থেকে প্রায় ছিটকে বেরলো তিনটে শব্দ। শহর জুড়ে প্রথম দিনের দ্বিতীয় শো-টাও হাউসফুল করে ফেলে ঠিক সেখানেই জিতে গেল ‘দ্বিতীয় পুরুষ’। আর ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর পর ন’টা বছর পেরিয়ে এমন টানটান সিক্যুয়েলে পরিচালকও আরও এক বার প্রমাণ করেই ছাড়লেন, কেন তাঁকে সৃজিত ‘থ্রিলার’ মুখোপাধ্যায় বলাটা অত্যুক্তি হবে না।
‘বাইশে শ্রাবণ’ যেখানে শেষ হয়েছিল, এ ছবির শুরু সেখান থেকেই। তখনকার ‘খুনে কবি’ এবং খোদ নিজেরই পোড়খাওয়া সিনিয়র প্রবীর রায়চৌধুরীকে আততায়ী হিসেবে চিনিয়ে দেওয়া তরতাজা পুলিশ অফিসার অভিজিৎ পাকড়াশী (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) এ ছবিতে এখন নিজেই অভিজ্ঞ, সুদক্ষ এবং স্বনামধন্য। আগের ছবিতে তাঁর সাংবাদিক বান্ধবী-লিভ ইন পার্টনার অমৃতা (রাইমা সেন) এখন তাঁর ঘরণী। মাঝের বছর আটেকে সময়ের নোনা ধরা সম্পর্কের তিক্ততা বাড়তে বাড়তে, তাঁদের বিয়েটাই এখন ভাঙনের মুখে। শ্রীবেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর এই সিক্যুয়েল ছবিতে ফিরেছেন দু’জনেরই বন্ধু এবং অমৃতার প্রাক্তন প্রেমিক সূর্যও (আবীর চট্টোপাধ্যায়) যদিও স্রেফ বন্ধুর দুঃখে কাঁধ এগিয়ে দেওয়াটুকুই তাঁর এ বারের ভূমিকা। আর স্বয়ং না থেকেও ছবির সবটুকু জুড়ে থেকেছেন প্রবীর রায়চৌধুরী (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়)। ফ্ল্যাশব্যাক হয়ে কখনও অভিজিতের দুঃস্বপ্নে, কখনও শিক্ষাগুরু হয়ে, কখনও বা স্রেফ অতীতচারণায়।
ট্যাংরার চিনেপাড়ায় ড্রাগ কারবারিদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বছর পঁচিশ আগে পর পর তিনটে রক্তহিম করা খুনে শহর কাঁপিয়ে ধরা পড়ে গিয়েছিল একটি দলের চাঁই খোকা। টার্গেটকে কুপিয়ে খুনের পরে কপালে নিজের নাম খোদাই করে রেখে যাওয়াটাই ছিল তার ট্রেডমার্ক। সে সময়ে খোকাকে পাকড়াও করেন ইনস্পেক্টর প্রণব রায়চৌধুরী (বাবুল সুপ্রিয়), অপরাধীকে শেষ করে দিয়ে অপরাধের অবসান ঘটানোটাই যার নীতি। পুলিশি হেফাজতে তাঁর মারে প্রায় মরতে বসা খোকা প্রাণে বেঁচে যায় স্রেফ এক বড়কর্তার হস্তক্ষেপে। ঘটনাচক্রে প্রণব প্রবীরেরই দাদা। ভাইকে তিনিই শিখিয়েছিলেন দোষীকে নিজে হাতে শাস্তি দেওয়ার পাঠ।
আরও পড়ুন: আমাদের বাড়ি নিয়ে রিয়্যালিটি শো করা যায়: জাহ্নবী
গৌরব ও পরমব্রত।
পঁচিশ বছর পরে ফের একেবারে একই কায়দায় খুন। একই জায়গায় এবং সেই কুপিয়ে খুন হওয়া দেহের কপালে সেই একই ভাবে খোদাই করে যাওয়া ‘খোকা’। তবে কি ফিরে এল সেই নৃশংস আততায়ী? এই কেসের দায়িত্ব পান অভিজিৎ। ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর মতোই এখানেও সঙ্গী সদ্য কাজে যোগ দেওয়া জুনিয়র রজত (গৌরব চক্রবর্তী)। এখানে তাঁর শিক্ষাগুরুর ভূমিকায় এখন পোড়খাওয়া অফিসার অভিজিৎ।
এর পরে আগের বারের মতোই ফের পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে আরও দুটো খুন। একই টার্গেট, একই ছকে। সৌজন্যে, শুধু চাউনি আর কথার ভাঁজেই হাড় হিম করে দেওয়া আততায়ী (অনির্বাণ ভট্টাচার্য)। এবং তার পরতে পরতে জড়িয়েই পেঁয়াজের খোসার মতো একে একে খুলে আসা জট, রহস্যের উন্মোচন এবং অবশ্যই গল্পের মোড় সপাটে ঘুরিয়ে দেওয়া চমক। যার শেষে প্রাপ্তি? ‘ওহ মাই গড!’ এবং বাইশে শ্রাবণে শুধু থ্রিলারধর্মী গল্প এ ছবিতে পৌঁছে আরও কয়েকটা দিকে ডালপালা ছড়িয়েছে। ঘুরপাক খেয়েছে সম্পর্কের জটিলতায়, বন্ধুত্বের টানাপড়েনে এবং ভালবাসার অলিগলিতেও।
এ গল্পের নায়ক ঠিক কে, বলা বড্ড কঠিন। কারণ পোড়খাওয়া পুলিশ অফিসারের কাঠিন্য, হতাশা, সপ্রতিভতা, উইটের মিশেল এবং অসুখী দাম্পত্যের টানাপড়েনে ধ্বস্ত অথচ বোঝাতে না-পারা ভালবাসা নিয়ে খানিকটা মেল শভিনিস্ট স্বামীর যুগলবন্দি যত্নে ফুটিয়েছেন পরমব্রত। এবং আততায়ীর ইস্পাতকঠিন শীতল দৃষ্টিতে, শাহরুখের ‘ডর’ ছবির গান-ডায়লগে, ভয় ধরিয়ে দেওয়া কথাবার্তা-ম্যানারিজমে এবং গোটা ছবি জুড়ে টানটান বসিয়ে রাখার উত্তেজনা তৈরিতে অনির্বাণ একশোয় একশো। পরমব্রতকে টক্কর দিয়েছেন তো বটেই, বরং ছাপিয়েও গিয়েছেন বেশ কিছু জায়গায়। এত বছরের সম্পর্ককে হারাতে না দিতে প্রাণপণ চেষ্টা করা, হিন্দি-বাংলা মিশিয়ে কথা বলা অমৃতার চরিত্রে রাইমা তুমুল হতাশায়, চোখ-ভরা জলে মানানসই। বছর আটেক বয়স বেড়ে যাওয়া চেহারায় নিজেকে নিয়ে যেতে সুন্দরীর পাশাপাশি মোটাও হয়েছেন খানিক। তার বেশি এ গল্পে তাঁর বিশেষ কিছু করার ছিল না।
আরও পড়ুন: শহর কলকাতায় বব বিশ্বাস এসেছে ফিরিয়া...
‘খোকা’র ভূমিকায় অনির্বাণ।
আরও পড়ুন: মহিলা সাজে এই পুরুষটি কে বলতে পারবেন? ঋষি কপূরের পোস্ট ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়
তেমন কিছু করার ছিল না আবীর, গৌরব কিংবা বাবুল সুপ্রিয়েরও। তবে ছোট্ট চরিত্রে নজর কেড়েছেন দু’জন। রজতের বান্ধবীর চরিত্রে ঋদ্ধিমা এবং খোকার সহযোগী গোরা থেকে চায়না টাউনের রেস্তোরাঁর মালিক জিমি হয়ে ওঠা শুভ্র সৌরভ দাস। পাশের বাড়ির মিষ্টি ছেলের ইমেজ ভেঙেচুরে কাঠিন্যে মোড়া গ্যাং মেম্বারের ভূমিকায় নিঃসন্দেহে এ ছবির চমক হয়ে উঠেছেন ঋতব্রতও।
সৃজিতের ছবি বরাবরই গানের খাতায় বেশি নম্বর পায়। রূপম ইসলাম, অনুপম, অরিজিৎ সিংহদের কণ্ঠে সে গানগুলো ইতিমধ্যেই বেশ চর্চিতও। তবে শিরদাঁড়া সোজা করে বসিয়ে রাখা এই থ্রিলারে একমাত্র অভিজিৎ-অমৃতার সম্পর্কের গতিপথ হয়ে ওঠা ‘যে ক’টা দিন’-এর সিক্যুয়েল ছাড়া বাকি গানগুলো তেমন দাগ কাটার সুযোগ পায়নি।
তবে এমন জমাটি থ্রিলার একেবারে নিখুঁত, এমনটাও বলা যায় না অবশ্য। বরং প্রথমার্ধ এগিয়েছে খানিক ঢিমেতালে। দ্বিতীয় ভাগে এসে তবেই রহস্যের জট খোলা শুরু। সাংবাদিক অমৃতা পুলিশের পেশার সর্ব ক্ষণের চাহিদা জেনেশুনে এত বছরের সম্পর্ক ও লিভ-ইন পেরিয়ে অভিজিৎকে বিয়ে করে সময়ের অভাবের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে পারেন না কেন, তা-ও বোঝা কিছুটা কঠিন। পুলিশের চাকরিতে সদ্য জয়েন করে কাজের প্রশংসা কুড়োনো রজত তদন্তে প্রয়োজনীয় সাধারণ কিছু কাজে ভুল করেন কেন, তা-ও স্পষ্ট নয়। এমনকি, আবীরের সূর্যকে ফিরিয়ে আনাও নেহাতই সিক্যুয়েলের তাগিদ বলেই মনে হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপরিচিতদের আলিঙ্গন করছেন রিচা চাড্ডা, চাইলে আপনিও পেতে পারেন সেই আলিঙ্গন
তবে পুরো ছবি জুড়ে টানটান উত্তেজনা ধরে রাখে যে ছবি, তার এতটুকু খামতি নিঃসন্দেহে মাফ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy