Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Abhijaan Movie

Abhijaan Movie review: নববর্ষে ফিরে এলো সৌমিত্র’র অভিযান! ধন্যবাদ পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়

দৃশ্য নির্মাণ চমকপ্রদ। যেমন সুচিত্রা সেনের চরিত্রে পাওলি দাম। দু’একবার চোখ কচলে নিতে হয়! এ কি! পরিচালক সুচিত্রাকে ধরে আনলেন কোথা থেকে!

অভিযানের একটি দৃশ্য।

অভিযানের একটি দৃশ্য।

অময় দেব রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২২ ২৩:১৬
Share: Save:

কফি হাউসের দোতলায় তর্ক জমে উঠেছে!

“আরে কিছু তো একটা করতে হবে নাকি?”

“ভাঙ! সব ভেঙে চুরমার করে ফেল! তবেই আসবে নতুনের আহ্বান!”

অংশগ্রহণে সুনীল, শক্তি, সন্দীপন। তাদের সঙ্গে আলো হয়ে বসে আছেন বাংলার উঠতি নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এমন বুদ্ধিদীপ্ত সৌন্দর্যের উষ্ণতা কি বাঙালি আগে কখনও পেয়েছে? বোধহয় না! ঠিকরে বেরোচ্ছে জ্যোতি! দরাজ গলা আর মাঝেমধ্যে ভুবন ভোলানো হাসি কফি হাউসের ঐতিহ্যে জুড়ে দিচ্ছে অভিজাত্য ও 'স্ট্রিট স্মার্টনেস'! আড্ডার মাঝেই হঠাৎ খবর এল মেডিক্যাল কলেজে বোমা পড়েছে। মুহূর্তে ছুট লাগালেন সুনীল, শক্তি। সঙ্গে সৌমিত্র। ক্যাম্পাসে পৌঁছতেই হঠাৎ পিছু ডাক। “সৌমিত্রদা আবার মঞ্চে ‘প্রফুল্ল’ হচ্ছে!”

কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে গেলেন সৌমিত্র!

একদিকে গোটা শহর পুড়ছে! খাদ্য আন্দোলন, ভূলুণ্ঠিত তরুণের স্বপ্ন, ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়!’, ট্রামের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে মহানগর দাউ দাউ!

অন্য দিকে নতুন কিছু সৃষ্টির নেশা, বুকের মধ্যে দলা পাকিয়ে ওঠা যন্ত্রণা’কে শিল্পে রূপদান! কারুবাসনা! এক প্রবল কারুবাসনা!

ঠিক তার মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়! এক বুক আশা নিয়ে মফস্বল থেকে শহুরে গোলকধাঁধায় পাড়ি জমানো সম্ভাবনাময় তরুণ!

কোনটা বেছে নেবেন? কোনটা বেছে নেওয়া উচিত এই বিক্ষুব্ধ সময়ে? এই দোদুল্যমানতাই আসলে জীবন! মনের গভীরে চলতে থাকা পথের লড়াই আসলে জীবনের বৈচিত্র! সময়ের দাবিকে স্বীকার ও অস্বীকারের মধ্যে দিয়ে পায়চারি আসলে উত্তরণের চাবিকাঠি। যা দুই চাটুজ্জের ছোঁয়ায় তৈরি ‘অভিযানে’ ছবির প্রাণও বটে!

এক চিকিৎসকের ক্যামেরার লেন্সে ক্রমশ পেঁয়াজের খোলার মতো ধরা দেন সেই বড় বৃক্ষ! এক জন জীবন সায়াহ্নে, আরেক জনের সামনে অনন্ত সম্ভাবনা! চিকিৎসক ও তথ্যচিত্র নির্মাতার চরিত্রে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, পরিণত বয়সের সৌমিত্রের চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিজে। অল্প বয়সের চরিত্রে যিশু সেনগুপ্ত। দু’জনেই জীবনের এক বিশেষ পর্যায়ে গভীর সঙ্কটের মুখোমুখি। সময়ের পরিহাস তাদের কাছাকাছি এনে দেয়। এক জন, অন্য জনের নাতির চরম সঙ্কটে সহায় হন। বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। অন্য জন মুহূর্তে গড়গড় বলে চলেন ঐতিহাসিক অভিযাত্রার গল্প। ফ্রেম বন্দি করতে। কিছু রেখে যাওয়ার স্বার্থে। কে বলতে পারে সময়ের এই প্রবল সঙ্কট দু’টি মানুষকে নাড়িয়ে না দিলে হয়ত তারা কখনও কাছাকাছি আসতেন না! গল্প বলে দিয়ে আপনাদের আগ্রহে ব্যাঘাত ঘটাব না!

আসলে ‘অভিযান’ সিনেমা নয়। বাঙালির ইতিহাস দর্শন। সমাজ, সাহিত্য, চলচ্চিত্র, রাজনৈতিক দর্শনে পুষ্ট জাতির সাবালকত্বের কথন! মাঝে মঝেই সাদা-কালো ফ্রেম। আর বাঙালির আইকনিক দৃশ্যের নস্টালজিয়া যাপন। সাদা কালো ফ্রেমের বারংবার আনাগোনা কিছুটা একঘেয়েমি আনে বটে। তবে দু একটা দৃশ্য নির্মাণ চমকপ্রদ। যেমন সুচিত্রা সেনের চরিত্রে পাওলি দাম। দু’একবার চোখ কচলে নিতে হয়! এ কি! পরিচালক সত্যিকারের সুচিত্রা সেনকে আবার ধরে আনলেন কোথা থেকে!
যাই বলুন নায়কের কোনও বিকল্প হয় না! প্রিয়া সিনেমা হলের প্রিমিয়ারে গোটা ছবিতে ‘গুরু, গুরু’ চিৎকার শোনা গেল শুধু একবার। উত্তম কুমারের চরিত্রে যখন মঞ্চ আলো করে হাজির হলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ঠিক সেই মুহূর্তে!

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় স্ত্রীর চরিত্রে বাসবদত্তা ভীষণ রিফ্রেসিং! যীশু মন্দ কিছু করেননি! তবে আরেকটু পরিশ্রম করলে বোধ হয় ভালই হত! মাত্র একটি দৃশ্যে হাজির হয়ে পর্দা কাঁপিয়ে দিয়েছেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়! বলতে বাধ্য হচ্ছি তিনি এ ছবির ম্যান অব দি ম্যাচ! মনে হতে থাকে ছবিটি অহেতুক দীর্ঘায়িত। শেষ হয়েও যেন হয় না শেষ। আরও অনেক স্মার্ট সম্পাদনা আশা করতে ইচ্ছে হয়। অতনু ঘোষের আবিষ্কার আপ্পু’র এখানেও জাত চিনিয়েছে। পরমব্রত’র অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য। নববর্ষে তিনি বাঙালিকে ফিরিয়ে দিলেন সৌমিত্র। এবং তাঁর ‘অভিযান’!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE