ডিমনিটাইজ়েশন। দেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। সিনেমাকরিয়েদের কাছে লোভনীয় প্লট। সলমন খানের শেষ রিলিজ় ‘দবং থ্রি’-এর শেষে প্রসঙ্গটি ছিল বটে। তবে নিতান্ত বালখিল্যের মতো। তাই পূর্ণ দৈর্ঘ্যের হিন্দি মেনস্ট্রিম ছবির প্লট যখন ‘নোটবন্দি’কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, তা গুরুত্বের দাবি রাখে বইকি! পরিচালকের নামও এ ক্ষেত্রে ছবির ওজন বাড়ানোর জন্য কম নয়। তবে নেটফ্লিক্স ছবি ‘চোকড’ অনুরাগ কাশ্যপের শিল্পশৈলীর নিরিখে সেরার তালিকায় আসবে না। ছবির ভাবনায় নতুনত্ব রয়েছে। সংলাপ-চরিত্রায়নে কাশ্যপোচিত পাঞ্চও রয়েছে। তবে ছবি যত এগিয়েছে, লেখনীর ধার ও ভাবনার ঝাঁজ তত ফিকে হয়েছে।
গ্যাংস্টার ছবি ছেড়ে অনুরাগ ক্রমশ ঘাঁটি শক্ত করছেন কাপল-ড্রামা জ়ঁরে। ‘মনমর্জ়িয়াঁ’র মতো প্রেমের টানাপড়েন এখানে নেই। বরং সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে প্রেম উবে গিয়েছে সরিতা (সাইয়ামি খের) ও সুশান্তের (রোশন ম্যাথিউ)। মুম্বইয়ে ভাড়ার এক ফ্ল্যাটে তাদের রংচটা সংসার। পরিবারে আছে বছর দশেকের ছেলেও। পাঁচ বছরে একটি চাকরিও টিকিয়ে রাখতে না পেরে বাড়ির ‘ওয়াইফ’ সুশান্ত। যদিও বন্ধুর মুখে এই টিটকিরি বরদাস্ত হয় না তার। অন্য দিকে ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার সরিতার রোজগারেই চলে সংসার। ঘরে-বাইরের কাজ করে সে ক্লান্ত। তবু রাতের খাবার খেতে খেতে বর তাকে বলে, ‘‘সপ্তাহে তিন দিন ধরে আলু খাওয়াচ্ছ! কখনও সখনও পনির তো খাওয়াতে পারো...’’ জবাব আসে, ‘‘পনির খেতে হলে পনিরের মতো হও...’’
নিম্ন-মধ্যবিত্ত এই সংসারে টাকা কথা বলে। কারণ সুশান্তের চাকরি না থাকলেও বাজারে দেনা কম নেই। সরিতার রাতের ঘুম কেড়ে নেয়, তার ফেলে আসা দিনগুলি। এক রিয়্যালিটি শোয়ে গান গাইতে গিয়ে কণ্ঠরোধ (ইংরেজি প্রতিশব্দ চোকড) হয়ে আসে তার। শোয়ে গিটার বাজাচ্ছিল তার স্বামী সুশান্ত। আলো ঝলমলে দিনের গলা টিপে হত্যা করে সরিতা বেছে নেয় বেঁচে থাকার জরুরি অবলম্বন। এক রাতে তার ভাগ্য বদলে দেয়, রান্নাঘরের লিক করা পাইপে ভেসে ওঠা প্লাস্টিকে মোড়া টাকার পুঁটলি। এই ঘটনার কিছু দিনের মধ্যেই কড়া নাড়ে ২০১৬র ঐতিহাসিক ৮ নভেম্বর!
চোকড
(ওয়েব মুভি)
পরিচালনা: অনুরাগ কাশ্যপ
অভিনয়: সাইয়ামি, রোশন, অম্রুতা, উপেন্দ্র
৬/১০
স্বঘোষিত কেন্দ্রীয় শাসকদল বিরোধী অনুরাগের ‘চোকড’ তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শেরও প্রতিফলন। তীক্ষ্ণ সংলাপের মধ্য দিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিকে বিঁধেছেন। সরিতার স্বামীই মোদীভক্ত! ব্যাঙ্ককর্মী হওয়ার সুবাদে ডিমনিটাইজ়েশনের পরে সরিতার কাজের চাপ এত বাড়ে যে, দেশের ও দেশের অভিভাবকের কথা ভাবার সময় নেই তার। ব্যাঙ্কে নোট বদলির জন্য আসা এক বৃদ্ধাকে সে বলে, ‘‘ব্যাঙ্কে টাকা পাওয়া যায়, সিমপ্যাথি নয়...’’
এ ছবির প্রধান স্তম্ভ সাইয়ামি। চরিত্রের খাতিরেই ধনঞ্জয় প্রজাপতির মেকআপে তাঁকে বয়সের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত লেগেছে। শরীরী ভাষাতেও এক সাধারণ খেটে খাওয়া মরাঠি মহিলার ভাব যথাযথ ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। মালয়ালি অভিনেতা রোশনকে দেখতে বড্ড ভাল। সাইয়ামির ছায়াসঙ্গী হলেও তাঁর বিশেষ কোনও মুহূর্ত ছিল না ছবিতে। প্রতিবেশী তাইয়ের চরিত্রে অম্রুতা সুভাষ অনবদ্য। ‘সেক্রেড গেমস’খ্যাত রাজশ্রী দেশপাণ্ডেকে সে ভাবে ব্যবহার করা হয়নি। ছোট চরিত্রে উপেন্দ্র লিমায়ে ভাল। কর্শ কালের আবহ সঙ্গীতে উত্তেজনা তৈরি করা হয়েছে কয়েকটি দৃশ্যে। তবে নবাগত নিহিত ভাবের চিত্রনাট্য সেই সঙ্গীতের দোসর হয়ে ওঠেনি।
ছবির শেষে অনুরাগ ও নিহিত যেন তাড়ায় ছিলেন। তাই কোনও রকমে গল্পে ইতি টেনেছেন। সাইয়ামির রিয়্যালিটি শোয়ের দিনগুলি বারবার দেখানোয় ছন্দপতন হয়েছে। রাষ্ট্রবিরোধী যে ব্ল্যাক হিউমর কাপল-ড্রামার জালে বুনে দিয়েছিলেন অনুরাগ, শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেননি। তাঁর জোরালো কণ্ঠও চোকড চিত্রনাট্যের চোরাগলিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy