Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Homeland - La Patrie

মুভি রিভিউ ‘লা পাত্রি– হোমল্যান্ড’: শিকড়ের সন্ধানে নিরন্তর যাত্রা মন কাড়ে

ইচ্ছেপূরণের স্বপ্ন বয়ে বেড়ায় এই ছবি, নেটফ্লিক্সে।

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় অভিনীত এই ছবির একটি দৃশ্য।

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় অভিনীত এই ছবির একটি দৃশ্য।

অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২০ ১৬:৫০
Share: Save:

ছবি: লা পাত্রি– হোমল্যান্ড

অভিনয় : পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনি

নির্দেশনা: অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়

ফরাসি বংশোদ্ভূত আর্মেনিয়ান আনি পরিবার ও প্রিয়জনের মুখে শোনা ভিটেমাটি বাসস্থানের শেকড় খোঁজার অদম্য আকর্ষণে অজানাকে জানার স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি দিয়েছে অন্য দেশ। আর একজন মানচিত্রের বিভাজন, কাঁটাতার ভুলে ভেসে চলেছে দেশ থেকে দেশান্তরে। সে ভারতীয় ভূপর্যটক। কলকাতাবাসী। এক প্রাণখোলা যাযাবর যুবক গঙ্গা। সে নিজের নামের সার্থকতা খুঁজে পায় নদীর মতো অবিশ্রাম বয়ে চলায়। আর এই দুই স্বপ্নসন্ধানী, অনিশ্চয়তার উন্মাদনায় ভরা মানুষের দেখা হয়ে যায় ‘লা পাত্রি– হোমল্যান্ড’ছবির গল্পে। ভৌগোলিক পটভূমি, ভাষা, রীতি, যাপনে হয়তো তারা দুই ভিন্ন প্রেক্ষাপটের, কিন্তু বোধ ও মননে তারা অনেকটাই সমমনস্ক। বা হয়তো একে অন্যের পরিপূরক,‘হোমল্যান্ড’বিষয়টি অনুসন্ধান করার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। হোমল্যান্ড আসলে কী? এই প্রশ্ন, দোলাচল আর কুয়াশার চাদর সরিয়ে উত্তর খোঁজাই যেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘লা পাত্রি – হোমল্যান্ড’ছবির অভিপ্রায়। ইচ্ছেপূরণের স্বপ্ন বয়ে বেড়ায় এই ছবি, নেটফ্লিক্সে।

ছবির দৈর্ঘ্য বাহাত্তর মিনিট হলেও বিষয়বস্তুর প্রয়োজনে যথাযথ মনে হয়। গোটা ছবিটির শুট ফ্রান্সে। ছবির চরিত্রেরা কথা বলে মূলত ফরাসিতে। এছাড়াও কিছু দৃশ্যে আর্মেনিয়ান, বাংলা, স্প্যানিশ, আরবিক ভাষার ব্যবহার দেখা যায়।

উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের কমার্সির একরাশ স্মৃতি আনির বাবা-মায়ের। যার মধ্যে জড়িয়ে আছে নদীর ধার, জঙ্গলে কাটানোর একান্ত মুহূর্ত। তখনও জন্ম হয়নি আনির। তারপর আর্মেনিয়াতে ওর বাবা-মা চলে যায়। সেখানেই আনির জন্ম। আনি মায়ের কাছে শোনা গল্পের দুরন্ত আকর্ষণ নিয়ে ফ্রান্সে এসেছে সবটা নিজের চোখে উপলব্ধি করার জন্য।

সে কল্পনার চোখ দিয়ে সবটা দেখার চেষ্টা করে—মা’কে বলা দাদুর গল্প, সিমেট্রি, চার্চ, প্রাণোচ্ছ্বল প্রকৃতি...

কমার্সির সেই নদীর ধারে গেলে মনের ভেতরে নাকি মিথ্যেরা বাসা বাঁধতে পারে না!

জীবনকে নতুন করে এক্সপ্লোর করা, ভালবাসতে শেখার বোধ ‘হোমল্যান্ড –লা পাত্রি’-র সম্পদ

ইতিমধ্যেই আবেগপ্রবণ আনি-র একটা নির্ভরতা তৈরি হয়েছিল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আলাপ হওয়া জনাথনের উপর। সে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল জনাথন নিজে একজন ফরাসি বলে সে তার কমার্সি দেখার স্বপ্ন সার্থক করবে। কিন্তু জনাথন নিজের মিথ্যে পরিচয় দিয়েছিল আনিকে। সেটা চূড়ান্ত হতাশার কারণ হলেও আনি আবার মানসিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চায় একজন ইউটিউবার, মিউজিশিয়ান ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে আলাপে। সঙ্গীত পাগল ভিক্টোরিয়ার কাছেও ‘হোমল্যান্ড’ শব্দটার মানে স্পষ্ট নয়। কারণ সে নিজেও এক জার্মান এবং স্পেনীয় বাবা-মা’র সন্তান। আবার সে নিজে প্যারিসের রাস্তায় গিটার বাজিয়ে গান করে। আনি বুঝতে পারে, তার প্রজন্মের অনেকের কাছেই হোমল্যান্ড শব্দটা অস্পষ্ট, কিছুটা অর্থহীনও।

আরও পড়ুন: ‘ডন’ ছবির নাম নিয়ে অনেকের আপত্তি ছিল: অমিতাভ বচ্চন

ঠিক এখানেই পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় অভিনীত বাঙালি যুবক ‘গঙ্গা’ চরিত্রটির তাৎপর্যপূর্ণ আবির্ভাব। শহরের রাস্তায়, ব্রিজের উপর রংচঙে সাইকেল হেলান দিয়ে আপন খেয়ালে গিটার বাজিয়ে চলা ছেলেটি আনির নজরে আসে। ভিক্টোরিয়া জানায়, ছেলেটির নাকি ভিসা নেই। এই তথ্য জানতে পারার পর আনি আরও বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য। এখানেই শেষের শুরু। এখানেই ছবিটির ম্যাজিক।

গঙ্গার কাছেও আনি নিজের মনের কথা বলে। জানায় হোমল্যান্ড শব্দটির পেছনে তার ছুটে চলার কারণ। এই প্রথম সে এমন একজন মানুষকে পায় যাকে হোমল্যান্ড শব্দটা আনির মতো করেই ভাবিয়েছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। তার অনুভূতির মানদণ্ডে গোটা পৃথিবীটাই তার বাসভূমি বা জন্মভূমি। ‘লা পাত্রি –হোমল্যান্ড’-এ এই অসম্ভব অর্থবহ এক চরিত্রে দুরন্ত অভিনয়ের স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।

দেশ কী? কোনটা দেশ? সবটাই কি ভূগোলের মানচিত্রে অবস্থান আর মাতৃভাষাকেন্দ্রিক? বাস্তব যাই হোক, সত্যিটা বোধহয় ঠিক তা নয়। তার জন্য অবশ্যই দেখতে হবে ‘ঝুমুরা’ ছবির পরিচালক অনিন্দ্যর ‘লা পাত্রি – হোমল্যান্ড’ছবিটি। চিত্রনাট্যে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন সোমঋতা ভট্টাচার্য। খুব বিশ্বাসযোগ্য লাগে আনি হভ্যানিসিআঁ, জনাথন দুমন্তিয়ের, ভারজু, সিলভি দো নেফ-এর অভিনয়। সিনেমার গল্পেও এদের নাম অপরিবর্তিত।

খুব ছোট ছোট অনুভূতি, মানসিক দ্বন্দ্ব, অপরিচিত মানুষকে বিশ্বাস করার সারল্য, ভরসা করার সাহস, পার্থিব লাভ-লোকসানের বাইরেও জীবনকে নতুন করে এক্সপ্লোর করা, ভালবাসতে শেখার বোধ ‘হোমল্যান্ড –লা পাত্রি’-র সম্পদ। যা আজ ক্রমশ লুপ্তপ্রায়। অলকানন্দা দাশগুপ্তের তৈরি আবহ এবং আইজ্যাক টুদিলু পাওলো, নিকোলাস ভার্ট ও আলম খানের সুন্দর সিনেমাটোগ্রাফি ছবিটিতে নিজেদের ব্যক্তিগত অবদানসুদৃঢ় করেছে। হতে পারে ছবির ন্যারেটিভ মন্থর। কিন্তু ছবি দেখতেও ছুটতেই হবে এমন কথা কোথাও ছিলনা। আর ছিল না বলেই‘হোমল্যান্ড’ খুঁজতে মানুষ আজ পথে নামে। তবে চিত্রনাট্য, সংলাপ কোথাও কম থাকলে ভাল লাগত।

এই অস্থির সময়ে মৃত্যুভয়ে জর্জরিত মানুষ। আজ বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে,আমরা সবাই এক। পৃথিবী নামের গ্রহটাই আমাদের ‘হোমল্যান্ড’।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy