কার্গো
পরিচালনা: আরতি কদভ
অভিনয়: বিক্রান্ত মেসি,
শ্বেতা ত্রিপাঠী
৬/১০
সাই-ফাই ছবি মানেই হাই-ফাই নয়! বিরাট সেট, গ্যাজেট আর ভিএফএক্স-এর বাড়বাড়ন্ত ছাড়াও সহজ-সরল ভাবে সায়েন্স ফিকশন বানানো যায়। পরিচালক আরতি কদভ সেটাই করে দেখিয়েছেন। তাঁর হাতে ছিল দুর্দান্ত একটি কনসেপ্ট, যার অনাড়ম্বর প্রদর্শন ‘কার্গো’ ছবিটি।
কাহিনিতে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে কল্পবিজ্ঞান আর পুরাণকে। মানুষের সঙ্গে রাক্ষসদের একটি শান্তি চুক্তি হয়েছে। তার ফলে ইন্টার প্ল্যানেটারি স্পেস অর্গানাইজ়েশন বেশ কয়েকটি স্পেসশিপ লঞ্চ করতে পারবে, যার মাধ্যমে মৃত্যুর পরে মানুষের শরীরকে পরবর্তী যাত্রার জন্য প্রস্তুত করে দেওয়া হবে। পুষ্পক ৬৩৪-এ হল এই স্পেসশিপগুলোর মধ্যে একটি। এখানকার গল্প নিয়েই ছবি। ‘কার্গো’ অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি। একটি মৃত শরীর স্পেসশিপে আসছে, তার স্মৃতি মুছে দেওয়া হচ্ছে, শরীরে কষ্ট-আঘাত থাকলে তারও চিকিৎসা হচ্ছে। এর পর সেই ব্যক্তিকে পরবর্তী জন্মের যাত্রার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মৃত্যু-পুনর্জন্মের কাহিনি বলিউড এত দিন যে কায়দায় বলেছে, আরতির ট্রিটমেন্ট তার উল্টো মেরুতে। স্পেসশিপগুলো যেন, যমলোকের একটু অন্য রকম ভার্সন। এ পর্যন্ত শুনে গাঁজাখুরি মনে হতে পারে। কিন্তু ম্যাজিক রিয়্যালিজ়ম মুভি যেমন হয় ‘কার্গো’ ঠিক তেমনটাই। পরিচালক চাইলে এ কাহিনি গুরুগম্ভীর ঢঙে বলতে পারতেন আবার চটুলতার সাহায্যও নিতে পারতেন। কিন্তু তাঁর পরিমিতিবোধ, কনসেপ্টের মতোই গল্প বলার স্টাইলেও ছকের বাইরে পা ফেলেছে। ছবিটি ফিউচারিস্টিক, অথচ লুকের মধ্যে একটা রেট্রো ফিল রেখেছেন আরতি। এটিও ছকভাঙার আর একটি উদাহরণ।
প্রহস্থ (বিক্রান্ত মেসি) গত ৭৫ বছর ধরে এই কাজ করে চলেছে। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত সকলেরই আলাদা ক্ষমতা আছে। প্রহস্থ হাতের সাহায্য ছাড়াই কোনও জিনিস উঠিয়ে ছুড়ে ফেলতে পারে। তার সহকারী যুবিষ্কা (শ্বেতা ত্রিপাঠী) ক্ষত নিরাময় করতে পারে। এই কর্মকাণ্ডের দুই ইনচার্জের একজনের আংশিক অদৃশ্য হওয়ার ক্ষমতা আছে। আর একজনের ঘুম আসে না। এরা সুপারহিরো না কি রাক্ষস? সে প্রশ্নের আলাদা করে জবাব দেওয়ার দরকার মনে করেননি পরিচালক। দুই চরিত্রের একাকিত্ব, তাদের রোজনামচা ছোট ছোট মুহূর্ত তৈরি করেছে। ছবির শেষটা যেন বাংলা সাহিত্যের ছোট গল্পের মতো।
আরতির কাহিনির উড়ান আরও মসৃণ হত, যদি প্রহস্থ বা যুবিষ্কার চরিত্রের আরও কিছু পরত দেখানো হত। যুবিষ্কার সরল প্রশ্ন, ‘মৃত্যু যখন নিশ্চিত, তা হলে আমাদের জীবনের গল্পগুলোর মানে কী?’ আসলে মানুষ যে কার্গোর চেয়ে বেশি কিছু তা ওই গল্পগুলোই প্রমাণ করে। তাই আরও এক-দু’জন কার্গোর কাহিনির গভীরে ঢোকা গেলে হয়তো বেশি উপভোগ্য হত ছবিটা।
দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy