বিবাহ অভিযানের একটি দৃশ্য।
পরিচালক: বিরসা দাশগুপ্ত
অভিনয়: অঙ্কুশ, রুদ্রনীল, সোহিনী সরকার, নুসরত ফারিয়া, অনির্বাণ ভট্টাচার্য
ভোক্তা মাত্রেই জানেন, বিবাহ নামক এই সুপ্রাচীন প্রথাটি অভিযান ছাড়া আর কিছু না। তা এই বহু ব্যবহারে জীর্ণ বিষয়টি নিয়ে নবীন অভিনেতা রুদ্র (কাহিনি এবং চিত্রনাট্য তাঁর) কি নতুন কথা বলছেন, বা নবীনতর পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত কি নব দৃষ্টিভঙ্গি আনছেন, মূলত এই কৌতূহল থেকেই প্রাচীন আমার পুরনো চোখে বিবাহ অভিযান। নব্য কর্পোরেটদের আবশ্যিক ‘টাই’-এর মতো বিবাহের ফাঁস যখন গলায় এঁটে বসে তখন মুক্তিই একমাত্র অভীষ্ট, এ নিয়ে মতবিরোধ আমারও নেই। কেউ পায়, কেউ পায় না, কেউ কেউ চেষ্টা করে যায়। আলোচ্য ‘বিবাহ অভিযান’ এই চেষ্টার গল্প। নানা রকম সিচ্যুয়েশন, উচ্চকিত অভিনয়, কমেডির আবহে সেটি তুলে ধরা হয়েছে।
স্বামীরাই এখানে নির্যাতিত। আধুনিকতার বদহজমে এক জন গৃহস্বামী গৃহভৃত্যের নামান্তর (অঙ্কুশ)। আর এক জন সিরিয়াল আর মাদুলির যুগপৎ চাপে যুক্তিবুদ্ধি জলাঞ্জলি দিয়ে স্ত্রীর ইচ্ছার দাস (রুদ্র)। স্বভাবতই এদের মোক্ষ-মুক্তি। এই মোক্ষলাভের লক্ষ্যে এঁরা মাত্র ক’দিনের জন্য দার্জিলিং অভিলাষী। আপিসে বিস্তর মিথ্যা, বউকে নানা টোপ দিয়ে বেরিয়ে পড়েও ‘পথে যেতে কত বাধা।’ পুলিশি নজর এড়িয়ে যদি বা বেরনো হল, যশোলিপ্সু ডাকাত বুলেট সিংহ (অনির্বাণ) পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে। সে-ও আবার খ্যাতির তথা কুখ্যাতির বিড়ম্বনার শিকার। নবীন নিয়ম অনুযায়ী সেখানে মিডিয়ার হুড়োহুড়ি। এবং অবশেষে মধুরং, মধুরং সমাপ্তি ভুল বোঝাবুঝির অবসানে। আমাদের মতো লজ্জিত, বিবাহের বয়স পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই মানুষদের লজ্জা অপনোদন করে বিবাহের জয়গান।
আমার পুরনো চোখে-কানে সব ভাষার প্রয়োগ যে সব সময় সুধাবর্ষণ করেছে এমন নয়। হলে সেগুলির প্রতিক্রিয়া ভালই। কিন্ত যেটা বলার, ছবির শেষের দিকে খ্যাতি, মিডিয়ার ব্যবহার নিয়ে কিছু যথাযথ শ্লেষ আছে, যেটি মনোগ্রাহী। মিছিল করা মেয়েদের নিয়ে একটি বিশেষ ‘বাদ’-কে কিঞ্চিত কনুইয়ের খোঁচা দেওয়ার চেষ্টা ক্লিশে মনে হয়েছে। একটি রূপান্তরকামী চরিত্র অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে, সমকামী সম্পর্ক নিয়েও পুলিশি মজা নবীন মানুষদের কাছে প্রত্যাশিত নয়। আর পুলিশের বড়বাবুদের সেই উৎপল দত্তের আমল থেকে একই রকম হাসির বস্তু থেকে যাওয়াটাও বেশ পুরনো। তার মধ্যে অম্বরীশের ইমোশনাল হয়ে পড়াটা খুবই বিশ্বাস্য।
আরও পড়ুন- মুভি রিভিউ ‘কবীর সিংহ’: কোথাও এ ছবি আপনাকে ডাকবে
আরও দেখুন- সইফের প্রাসাদের অন্দরমহল, দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে আপনারও
ছবিটির বিশেষ গুণ, অভিনয়। এই সময়ের বাঘা বাঘা অভিনেতারা চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। রুদ্রর ছোট ছোট নির্বাক অভিব্যক্তি চমৎকার। অঙ্কুশকে আমি আগে দেখিনি, খুব স্বাভাবিক লেগেছে। আরও কাজ করার কথা ছিল কি ওঁর? অনির্বাণ এখন জনপ্রিয়তার যে শিখরে অবস্থান করছেন, তাতে ওঁর সমালোচনা করলে সমবেত প্রমীলাকুল আমাকে আস্ত রাখবেন না। কিন্তু সত্যিটা হল, বাচিক, আঙ্গিক সব দিকেই উনি অপূর্ব। নুসরত, প্রিয়াঙ্কা আর সোহিনী ঠিকঠিক। ছবির গান আর মিউজিক বেশ ভাল।
এই নিদাঘে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নবীন সাজে সজ্জিত সিনেমা হলে বিবাহ অভিযানে গেলে ঠকবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy