More than 200 films in career, Bollywood Actor Sudhir was a tragic hero in real life dgtl
Actor Sudhir
তাঁকে নিয়ে তৈরি হয় ফিল্ম, দুশোর বেশি ছবিতে অভিনয় করা এই খলনায়কের স্ত্রী গণধর্ষণের শিকার হন
পর্দায় যাঁকে দেখলে আতঙ্কে সিঁটিয়ে যেতেন দর্শক, সেই সুধীর বাস্তবে এক জন ‘ট্র্যাজিক হিরো’।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২০ ০৯:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
পর্দায় নিষ্ঠুর খলনায়কের চরিত্রে দেখা গেলেও, বাস্তবে নিপাট ভদ্রলোক, বলিউডে এমন অভিনেতার সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে পর্দায় যাঁকে দেখলে আতঙ্কে সিঁটিয়ে যেতেন দর্শক, সেই সুধীর বাস্তবে এক জন ‘ট্র্যাজিক হিরো’।
০২২০
দীর্ঘ কেরিয়ারে বহু হিট ছবিতে অভিনয় করেন সুধীর। স্ক্রিন শেয়ার করেন অমিতাভ বচ্চনের মতো মেগাস্টারের সঙ্গে। হাইপ্রোফাইল পার্টি থেকে রেসকোর্স, একসময় তারকাদের সঙ্গে নিত্য ওঠাবসা ছিল তাঁর।
০৩২০
কিন্তু গ্ল্যামারের চাকচিক্যের মধ্যে বুকে পাথর বেঁধে রেখেছিলেন সুধীর, জীবিত থাকাকালীন যা কাউকে ঘুণাক্ষরেও টের পেতে দেননি।
০৪২০
ষাট থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত হিন্দি ছবিতে চুটিয়ে অভিনয় করেন সুধীর। তাঁর আসল নাম ভগবানদাস মূলচন্দ লুথরিয়া। পঞ্চাশের দশকে সিলভার স্ক্রিনে হাতেখড়ি হয় তাঁর। ২০০৯ সাল পর্যন্ত ২০০টিরও বেশি ছবিতে দেখা যায় তাঁকে।
০৫২০
কেরিয়ারের শুরুতে ‘আপনা ঘর আপনি কহানি’, ‘হকিকত’, ‘এক ফুল এক ভুল’- এর মতো ছবিতে মুখ্য চরিত্রে দেখা যায় সুধীরকে। ‘আপনা ঘর আপনি কহানি’ ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন মুমতাজ।
০৬২০
এর পর ধীরে ধীরে খলনায়কের চরিত্রের দিকে ঝোঁকেন সুধীর। অভিনেতা দেব আনন্দ তাঁকে পছন্দ করতেন। ১৯৫৪ সালে ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ ছবিতে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন সুধীর। ছবিতে যদিও তাঁর নাম পর্যন্ত দেখানো হয়নি। তা সত্ত্বেও দেব আনন্দের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তাঁর।
০৭২০
এর পর দেব আনন্দ অভিনীত এবং প্রযোজিত একাধিক ছবিতে দেখা যায় সুধীরকে। যার মধ্যে অন্যতম ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’। সেই সময় খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে যাঁরা প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন, সেই অজিত, প্রেমনাথ এবং প্রাণের ডানহাত হিসেবেও একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। কখনও দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ অফিসার কখনও আবার অন্য খল চরিত্রে তাঁকে দেখা যেতে শুরু করে।
০৮২০
মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে একাধিক ছবিতে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন সুধীর, যার মধ্যে অন্যতম হল, ‘দিওয়ার’, ‘কালিয়া’, ‘শরাবি’, ‘মজবুর’, ‘সত্তে পে সত্তা’ এবং ‘শান’।
০৯২০
চুটিয়ে অভিনয়ের পাশাপাশি ঘোড়দৌড়ের প্রতি আকর্ষণ ছিল সুধীরের। রেসের মাঠে নিয়মিত মোটা টাকা বাজি রাখতেন তিনি। বিষয়টি এত ভাল বুঝতেন তিনি যে, কখনও দ্বিগুণ এবং কখনও প্রায় চার গুণ লাভও করতেন। তাই সমকালীন অভিনেতাদের সঙ্গে টাকাপয়সার ব্যাপারেও কোনও অংশে কম ছিলেন না তিনি।
১০২০
সেই সময় সুন্দরী মডেল শীলা রায়ের প্রেমে পড়েন সুধীর। অভিনেতা হিসেবে সুধীর যতটা জনপ্রিয় ছিলেন, বলিউডের গ্ল্যামার দুনিয়ায় তার চেয়েও বেশি ওঠাবসা ছিল শীলার। অল্প দিনের মধ্যেই তাঁদের প্রেম পরিণতি পায়। আগের পক্ষের এক সন্তান অশোককে নিয়ে সুধীরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শীলা।
১১২০
সুধীর ও শীলার দাম্পত্য নিয়ে সেই সময় নানা কথা শোনা যেত বলিউডে। কিন্তু দু’জনের কেউ কখনও তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে এক ভয়ঙ্কর অধ্যায় শুরু হয় তাঁদের জীবনে।
১২২০
মডেল হিসেবে সেই সময় রাত জেগে কাজ করতে হতো শীলাকে। শো শেষ হয়ে গেলে থাকত পার্টিও। এক দিন রাতে সেই রকমই একটি পার্টিতে গিয়েছিলেন শীলা। অনেক রাত পর্যন্ত পার্টি চলার পর লোকজন যখন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছিলেন, শীলাও বাড়ি ফিরতে উদ্যত হন।
১৩২০
হঠাৎই তিন-চার তাঁর উপর চড়াও হয়। শোনা যায়, মুম্বইয়ের অভিজাত এলাকার একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে শীলাকে সারা রাত ধর্ষণ করে তারা। এক ফোটোগ্রাফারও তাতে লিপ্ত ছিল। ধর্ষণের সময় শীলার বেশ কিছু ছবি তোলে সে। পরে তা নিয়ে শীলাকে ব্ল্যাকমেলও করা হয়।
১৪২০
রাতভর অত্যাচারের পর শীলাকে তাঁর বাড়ির সামনে ফেলে দিয়ে যায় ধর্ষকরা। আবাসনের এক নিরাপত্তারক্ষীর সাহায্যে কোনও রকমে নিজের ফ্ল্যাটে এসে পৌঁছন শীলা। সেই সময় তাঁর ১২ বছরের ছেলে অশোক দরজা খুলে মাকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে।
১৫২০
সেই সময়ের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে খবর করতে নেমে পড়ে। কিন্তু সুধীর এবং শীলা এ নিয়ে কোনও অভিযোগ জানাননি। বিষয়টি নিয়ে কোনও সংবাদ মাধ্যমে মুখও খোলেননি তাঁরা।
১৬২০
পরবর্তী কালে শীলার ছেলে অশোক গোটা ঘটনা সামনে আনেন। সেই রাতের ঘটনা নিয়ে একটি ‘বিউটিফুল অ্যান্ড আগলি’ নামের একটি ছবিও তৈরি করেন তিনি। লেখক হিসেবেও অশোক বেশ জনপ্রিয়।
১৭২০
অশোক জানান, সেই রাতে যাঁরা তাঁর মায়ের উপর অত্যাচার চালান, তাঁদের সকলকেই চিনতেন তাঁরা। ছবি তুলে ব্ল্যাকমেলের কথাও সামনে আনেন তিনি।
১৮২০
স্ত্রীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া বীভৎস ঘটনায় একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন সুধীর। কিন্তু তাই বলে স্ত্রীর হাত ছেড়ে দেননি। বরং ১৯৯০ সালে শীলার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত একে অপরকে সামলে রেখেছিলেন তাঁরা। সেই ঘটনার পরও অভিনয় চালিয়ে যান সুধীর। সুভাষ ঘাইয়ের ‘মেরি জঙ্গ’, ‘ধর্মাত্মা’ এবং শাহরুখ খানের ‘বাদশা’ ছবিতে দেখা যায় তাঁকে। শীলার মৃত্যুর পর একাকিত্বে ভুগতে শুরু করেন সুধীর। সেই সময় মদ্যপানে আসক্তি জন্মায় তাঁর।
১৯২০
২০০৭ সালে ‘ঝুম বরাবর ঝুম’-এ অভিনয়ের পর ২০০৯ সালে ‘ভিক্টোরিয়া হাউস’ ছবিতেই শেষ বার দেখা যায় সুধীরকে। দীর্ঘ দিন ধরে ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগছিলেন তিনি। ২০১৪-র ১২ মে তাঁর মৃত্যু হয়। সুধীরের ভাইপো মিলন লুথরিয়া এই মুহূর্তে বলিউডের অন্যতম সফল পরিচালকদের মধ্যে এক জন।
২০২০
সুধীরের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সম্প্রতি ‘কামিয়াব’ ছবিটি তৈরি করেন পরিচালক হার্দিক মেহতা। ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন সঞ্জয় মিশ্র। ছবিতে তাঁর চরিত্রের নামও ছিল সুধীর।