মন নিয়ে মনামী
প্রশ্ন: বাংলা এখন ‘টাপাটিনি’ময়, গোটা দেশ নাচছে যে গানে, পর্দায় সেই নাচে পা মিলিয়ে কেমন লেগেছিল?
উত্তর: তোমরাই ‘বছরের বেস্ট’ অনুষ্ঠানের দিন যখন আমায় 'টাপাটিনি গার্ল' বলে ডাকলে, খুব ভাল লেগেছিল। আসলে নাচটার কোরিওগ্রাফি করেছিলাম আমিই। বিয়েবাড়িতে যেমন তাৎক্ষণিক নেচে নিই আমরা, তেমনই এটাও নিজেরাই পেরেছিলাম। গানটাই যে এমন সুন্দর! আমার প্রিয় গান।
প্রশ্ন: নাচের প্রতি ঝোঁক তো আপনার বরাবর, এত দিন অভিনয়ের পাশাপাশি কী ভাবে ধরে রেখেছেন?
উত্তর: নাচ সেই তিন বছর বয়স থেকে সঙ্গী। শুরুতে কত্থক, তার পর ভরতনাট্যম। তবে এখন তো লোকে বলে আমি ওয়েস্টার্ন নাচই ভাল পারি। আসলে সবটা শিখে হয় না। নাচতে ভালবাসি বলে দ্রুত বুঝে নিই। নতুন ছন্দে নতুন মুদ্রা আমায় সব সময় টানে।
প্রশ্ন: নাচ, গান, আবৃত্তি, যোগব্যায়াম কিংবা অভিনয় আপনি তো সব পারেন! এর থেকে অভিনয়টাকেই বাছলেন কেন?
উত্তর: অভিনয়ের সুযোগ এসেছিল বাবার যোগাযোগে। যে কোনও ভাল কিছুর স্বাদ বাবা-মাই দিয়েছেন। বসিরহাটে ছোট থেকে সেই পরিবেশে বড় হয়েছি, অনেক কিছু স্বাভাবিক ভাবেই শিখেছিলাম। তবে অভিনয় কেন বাছলাম সেটা বলা মুশকিল। বরং অভিনয় আমায় বেছেছিল। আর আমিও দেখলাম কাজটা ভাল লাগছে। তাই এটাই মুখ্য ভাবে রয়ে গেল।
প্রশ্ন: 'এক আকাশের নীচে', 'কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে'-এর মতো একের পর এক হিট ধারাবাহিকে পরিচিত মুখ হওয়ার পর নতুন কিছু করতে ইচ্ছে করেনি?
উত্তর: করেছে তো। তবে তেমন পছন্দমতো চরিত্রে ডাক পেলাম কোথায়? যদিও বা দুয়েকটা বড় সুযোগ এল, গেলাম না।
প্রশ্ন: কোথায় ডাক পেয়েছিলেন? কেন গেলেন না?
উত্তর: তখন সবে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছি। মুম্বই থেকে ডাকলেন একতা কপূর, 'কস্তুরী' ধারাবাহিকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলেন। আর আমি গেলাম না। বয়স কম, ভাবলাম এখানে এত কাজ, সব ফেলে চলে যাব? সাহসই হল না।
প্রশ্ন: সে জন্য আফসোস হয়?
উত্তর: হয় বৈকি। নাচ আর অভিনয় দুটো একসঙ্গে মেলে ধরার সুযোগ এখানে পাইনি। তখনই মুম্বই গেলে জাতীয় স্তরে পরিচিতি তৈরি হত। পছন্দমতো কাজ পেতাম হয়তো।
প্রশ্ন: এখনও তো যাওয়া যায়? আরও তৈরি অবস্থায়...
উত্তর: যায় হয়তো। কিন্তু ওই যে, সময় নেই। কাজের পর কাজ, হয়ে ওঠে না। তবে সে ভাবে ডাক পেলে নিশ্চয়ই ভেবে দেখব।
প্রশ্ন: কেমন চরিত্রের অপেক্ষায় রয়েছেন? আপনার ড্রিম রোল কী?
উত্তর: 'হাঙ্গার গেমস'! জেনিফার লরেন্স যেমন তেজি নারীর ভূমিকায় জঙ্গলের খেলায় টিকে থেকেছেন, ওইরকম চরিত্র করতে চাই। কিন্তু পাই কোথায়? বাংলায় এমন চিত্রনাট্য কোথায়?
প্রশ্ন: আপনার জন্য আলাদা করে চিত্রনাট্য লিখলে করবেন তো?
উত্তর: অবশ্যই। সব কাজ ম্যানেজ করে ওদিকেই যাব।
প্রশ্ন: আপনি তো আবার নিজে থেকে চাইতে পারেন না, সে জন্যই কি দু'দশক অভিনয় জগতে থাকার পরও ছবিতে সে ভাবে মূল চরিত্রে দেখা গেল না?
উত্তর: হয়তো। প্রস্তাব না পেলে আমি আগ বাড়িয়ে কোনওদিন কাজ করতে যাইনি। সে যে কাজই হোক।
প্রশ্ন: এখন তো অনেক নারীকেন্দ্রিক ছবি হচ্ছে...
উত্তর: এটা একটা ভাল দিক সত্যিই। তবে এখনও বাংলা সিনেমাজগৎ নায়িকাদের দিয়ে নাচ, গান আর প্রেম করানোর বাইরে বেরোতে পারেনি। অ্যাকশন কোথায়? মেয়েদের জন্য চ্যালেঞ্জিং চরিত্রের বড্ড অভাব। গল্প হবে সবকিছু নিয়েই, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। যেমন 'ব্ল্যাক'এর রানি মুখোপাধ্যায় থাকবেন তেমনই 'গঙ্গুবাই'-এর আলিয়াও। তবে আরও অন্য কিছুও চাই, নতুন রকম।
প্রশ্ন: যখন যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন সেই চরিত্র হয়ে উঠেছেন, ভক্তরা গুলিয়ে ফেলেননি?
উত্তর: হ্যাঁ! হয়েছে তো। গ্রামেগঞ্জে তো ধারাবাহিকের চরিত্রের নাম ধরেই ডাকত। একটা সময় গিয়েছে যখন এক দল 'মোহর' ডেকেছেন তো আরেক দল 'ইরাবতী', আবার বেশ খানিকটা সময় 'দীপাবলি' হয়ে থেকেছি দর্শকের কাছে।
প্রশ্ন: শুধু পর্দায় অভিনয় নয়। ইউটিউব চ্যানেল, অভিনয় শেখানো, ভ্লগ করা, এমনকী ইনস্টাগ্রামেও আপনি ভাইরাল, কী ভাবে সামলান এত দিক?
উত্তর: ক্লান্তি আসে, কিন্তু কাজ ছাড়াও যে থাকতে পারি না। সব সময় কিছু না কিছু করতে করতে এত কিছু হয়ে গেছে কখন বুঝতেই পারিনি। ছবি তুলতে ভালবাসি বলে ছবি তুলতাম, সেগুলো তো কোথাও রাখতে হবে তাই রেখেছিলাম। তখনও ইনস্টাগ্রামে পয়সা রোজগারের ব্যবস্থা ছিল না। একই ভাবে লকডাউনে নাচের ভিডিয়ো ইউটিউবে আপলোড করেছি। সে সব সবার এত ভাল লাগবে জানতাম না। কিছু করব ভেবেই কিছু করা নয়, ভাললাগে তাই করেছি।
প্রশ্ন: বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়নি বাড়ি থেকে?
উত্তর: বিয়ের জন্য আত্মীয়স্বজনরা তো বলেই থাকেন। কিন্তু এত কাজ, এত স্বপ্ন...এখন তো কিছু শুরুই হয়নি। সে সব স্বপ্নের ভিড়ে বিয়েটা একেবারেই নেই। করব হয়তো, তবে এখন নয়।
প্রশ্ন: এত বছরে একবারও রাজনীতিতে আসার কথা ভাবেননি?
উত্তর: ভোরবেলা ঠিক সময়ে শ্যুটিং স্পটে পৌঁছে যাব কিন্তু রাজনীতির প্রচারে বেরোতে বললে আমার গায়ে জ্বর আসবে। ভাল লাগে না ওসব। আমার কাজ নয়।
প্রশ্ন: যে সব জায়গায় বেড়ানোর ভ্লগ করেন সে সবই কি শ্যুটিংয়ে গিয়ে?
উত্তর: ধুর, শ্যুটিংয়ে ছুটতে হয়। আজ কলকাতা তো কাল বোলপুর। আমি বেড়াতে যাই নিজের মতো। ওই একটাই বড় সখ। বছরে সবকিছু সামলে ওই সময়টা নিজের রাখি।
প্রশ্ন: অভিনয় জগতে এসে সারল্য এবং নিজস্বতা ধরে রাখা যায়?
উত্তর: সারল্য? কে জানে! আমি বলব বোকামিগুলো কমে যায়। কাল যে ভুলটা করেছি এর পর আর করব না। কীসে কী হয় সেই ধারণা মানুষের সারল্য হয়তো কমিয়ে দেয়। কিন্তু নিজস্বতা? ওটাই তো সব। দিব্যি ধরে রাখা যায়।
প্রশ্ন: এখনকার প্রজন্ম, যাঁরা অভিনয়ে আসছেন তাঁদের কোনও উপদেশ দেবেন?
উত্তর: না, ওরা খুবই প্রতিভাধর, অনেক কিছু জেনেই আসে। তবে একটা কথা বলব, নিজস্বতা ধরে না রাখলে সবাই একইরকম হয়ে যাবে। কারও সঙ্গে কারও তফাৎ করা যাবে না।
প্রশ্ন: আপনার ছিপছিপে চেহারার মন্ত্র কী?
উত্তর: আমার কাজ। নাচলে তো শরীর ঠিক থাকেই, শ্যুটিংয়েরও ব্যস্ততা থাকে। তা ছাড়া খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারেও আমি সচেতন। তবে মাঝেমধ্যে বিরিয়ানি তো খেয়েই থাকি। নিজেকে ভাল রাখাই আসল কাজ।
প্রশ্ন: হঠাৎ শরীরচর্চা শুরু করেছেন?
উত্তর: সামনে একটা চমৎকার কাজ করব। তার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তবে এখনই বলব না ওটা নিয়ে। আগে 'টাপাটিনি' আসুক, আমরা সবাই ওটার জন্যই অপেক্ষা করছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy