Advertisement
E-Paper

প্রয়াত ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র বাপিদা, ক্যানসার আক্রান্ত শিল্পী ভর্তি ছিলেন এসএসকেএমে

দীর্ঘ দিন ধরে ভুগছিলেন ফুসফুসের ক্যানসারে। চিকিৎসার খরচ জোগাতে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন দুই বাংলার শিল্পীরা। তাতেও হল না শেষরক্ষা। জীবনাবসান হল মহীনের অন্যতম ঘোড়া তাপস দাস ওরফে ‘বাপিদা’র।

Bapi Das in Moheener Ghoraguli

ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছিলেন ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র তাপস দাস ওরফে বাপিদা। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩ ১২:২১
Share
Save

প্রয়াত কিংবদন্তি বাংলা ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’-র তাপস দাস ওরফে ‘বাপিদা’। দীর্ঘ দিন ধরে ভুগছিলেন ফুসফুসের ক্যানসারে। এসএসকেএমে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। রবিবার শেষ হল লড়াই। মৃত্যুর সময়ে বয়স হয়েছিল ৬৮।

ছোটবেলা থেকেই গানবাজনা ও লেখালেখির প্রতি টান ছিল বাপিদার। সঙ্গ দিয়েছিলেন তপেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে ভানুদা। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জনপ্রিয় আধুনিক বাংলা গান গাইতেন দুই তরুণ। গান গাওয়ার বাঁধাধরা কোনও তালিম পাননি কোনও দিন। তবে ভানুদা ও বাপিদার গানের গলা শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন গৌতম চট্টোপাধ্যায় ওরফে মণিদা। শোনা যায়, তার পরেই ১৯৭৫ সালে তৈরি হয় ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। মহীনের অন্যতম জনপ্রিয় গান ‘ভালবাসি জ্যোৎস্নায় কাশবনে ছুটতে’ ভানুদা ও বাপিদারই সৃষ্টি। ব্যান্ডের ঘনিষ্ঠ সূত্রে শোনা যায়, সুন্দরবনের এক মায়াবী রাতে এই গানের সুর বেঁধেছিলেন মণিদা। ব্যান্ডের অন্দরে মণিদার ‘ডানহাত’ ছিলেন বাপিদা। এক সময় এ দিকে ও দিকে ছড়িয়ে যান মহীনের সদস্যরা। ১৯৯৯-এ গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর কলকাতায় ফেরেন তপেশ। মাঝে জাহাজের চাকরি নিয়ে বাইরে চলে গিয়েছিলেন তিনি। নতুন করে একটি ব্যান্ড তৈরি করেন তাপস ও তপেশ, নাম ‘বেহালা চৌরাস্তা’। একটি অ্যালবামও প্রকাশিত হয়েছিল সেই ব্যান্ডের তরফে। ১৯৯৯ সালের ২০ জুন মৃত্যু হয় মহীনের মণিদার। ২৪ বছর পর আবার সেই জুন মাসেই জীবনাবসান হল তাঁর সঙ্গী বাপিদার।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাস নাগাদ প্রকাশ্যে আসে বাপিদার অসুস্থতার খবর। মারণরোগে ভুগছিলেন তিনি। তিনি ফুসফুসে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন জেনেই পাশে এসে দাঁড়ান শহরের সঙ্গীতশিল্পীরা। চিকিৎসার খরচ জোগাতে তৈরি করা হয় তহবিল। ‘ফসিলস’ থেকে ‘বর্ণ অনন্য’, শিল্পীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে একাধিক কনসার্টের আয়োজন হয় শহরেই। পরে অবশ্য তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় রাজ্য সরকার। বাপিদার প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘দেশের প্রথম রক ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র তাপস দাস ওরফে বাপিদার প্রয়াণে আমি শোকাহত। গত কয়েক মাস ধরে মারণরোগে ভুগছিলেন বাপিদা। রাজ্য সরকার তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিল। এসএসকএম হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। বাপিদার পরিবারের সদস্য ও তাঁর অনুরাগীদের প্রতি আমার সমবেদনা।’’

এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। কিছুটা সুস্থ হয়ে কয়েক দিনের জন্য বাড়ি ফিরেছিলেন বাপিদা। পরে আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ফের এসএসকেএমেই নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। গত কয়েক দিন সেখানেই চলছিল চিকিৎসা। আর বাড়ি ফেরা হল না।

শিল্পীর প্রয়াণের খবর তখনও পাননি ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র আব্রাহাম মজুমদার। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কথা বলেন তাঁর স্ত্রী মধুশ্রী মজুমদার। আব্রাহাম নিজেও বেশ অসুস্থ। গত বছর স্ট্রোকের পরে বেশ ভেঙে গিয়েছে শরীর। মধুশ্রী জানান, শনিবার রাতেই নাকি বাপিদাকে নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলছিলেন আব্রাহাম। বাপিদার শক্তপোক্ত মানুষ, সব রোগভোগ পেরিয়ে ফিরে আসবেন তিনি, ভরসা ছিল আব্রাহামের। এক বন্ধুর প্রয়াণের খবর অন্য বন্ধুকে দিতে হবে, এ কথা ভাবতেই পারছেন না মধুশ্রী।

অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিদেশে গিয়েছেন গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র গৌরব চট্টোপাধ্যায়। সমাজমাধ্যমে বাপিদার প্রয়াণের খবর পান তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হলে তাঁর গলাতেও স্পষ্ট বিষাদের সুর। ‘‘বাবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গান গেয়েছেন বাপিকাকু। ছোটবেলায় সকলের মহড়া দেখে বড় হয়েছি। এখনও বিশ্বাস করতে অসুবিধা হচ্ছে যে, বাপিকাকু আর নেই।’’

বন্ধুর প্রয়াণে শোকাহত মহীনের অন্যতম ঘোড়া প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ওরফে বুলাদা। ভাল হয়ে উঠবেন বন্ধু, এই আশাই করেছিলেন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে রবিবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রদীপবাবু জানান, দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা আত্মীয়, পরিজনদের সবেমাত্র এই দুঃসংবাদ জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘বাপিদার দেহ হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসার ব্যবস্থা হচ্ছে। বিকেলে গড়িয়ার শ্মশানে শেষকৃত্য হবে।’’ সেখানেই শেষকৃত্য হয়েছিল ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র মণিদারও।

Moheener Ghoraguli Bengali singer Bengali Band

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}