Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মোহন গােন মোহিত বাদলসাঁঝ

ভাদ্র-সন্ধ্যায় কৃষ্ণনগর রবীন্দ্রভবনে তিনি যখন এ কথা বলছেন, তখন এসরাজ আর তবলার সুর মেলানোর পর্ব চলছে।

গাইছেন মোহন সিংহ। কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

গাইছেন মোহন সিংহ। কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৩৫
Share: Save:

ভাদ্রে তিনি সাধারণত অনুষ্ঠান করেন না। কেননা এই সময়ে গলা ভাল থাকে না।

ভাদ্র-সন্ধ্যায় কৃষ্ণনগর রবীন্দ্রভবনে তিনি যখন এ কথা বলছেন, তখন এসরাজ আর তবলার সুর মেলানোর পর্ব চলছে। কৌতুকের সুরে বলছেন তিনি শান্তিনিকেতন থেকে কৃষ্ণনগর আসার বেহাল পথে ঠোকাঠুকি খাওয়ার কথাও। এক সময়ে সুরে সুর মিলে যায়। আর অমনি ‘নিভৃত প্রাণের দেবতা’ জেগে ওঠেন মোহন সিংহের গন্ধর্ব কণ্ঠে।

রবীন্দ্রনাথের গানে দিনু ঠাকুর, শান্তিদেব ঘোষ প্রমুখের উত্তরাধিকার যাঁর ওজস্বী কন্ঠ ধারণ করে রয়েছে, তিনি মোহন সিংহ খঙ্গুরা। পরের দু’টি ঘণ্টা তাঁর অননুকরণীয় গায়নে মোহিত হয়ে রইল কৃষ্ণনগর। রবিবার সন্ধ্যায় দ্বিজেন্দ্রলালের শহরের মানুষ প্রাণ ভরে শুনলেন তাঁর গান।

কৃষ্ণনগরের তারকনাথ সরকার মেমোরিয়াল ট্রাস্ট নিবেদিত এবং সাহিত্য পত্রিকা ‘মুদ্রা’র উপস্থাপনায় এই প্রথম কৃষ্ণনগরে গান গাইতে আসা মোহন সিংহের। সহযোগিতায় ছিল কৃষ্ণনগর সেন্ট্রাল ক্লাব। গানে ও কথায় এই মোহন সন্ধ্যায় সঙ্গীত রসিকদের প্রাপ্তি যেন প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।

নির্ধারিত সময়ে খানিকটা পরেই অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল। তবে পর্দা উঠতেই অনুষ্ঠানের গাম্ভীর্যের সঙ্গে মানানসই মঞ্চসজ্জা মন ভাল করে দেয়। শুরুতে আয়োজকদের তরফে সংক্ষিপ্ত দু’একটি কথার পরে শিল্পী এবং তাঁর সহযোগীদের সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। সঞ্চালক তমাল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘মুদ্রা’ পত্রিকার পরের বিশেষ সংখ্যা রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে হবে। মোহন সিংহের উপস্থিতি এবং গান সেই কাজেরই নান্দীমুখ।

অনুষ্ঠানের বাকি সবটুকু জুড়ে শুধু মোহন সিংহ। ‘নিভৃত প্রাণের দেবতা’ দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করার পর একে-একে তিনি গেয়ে চলেন ‘কার মিলন চাও বিরহী’ ‘কোথা হতে বাজে প্রেম বেদনারে’ ‘আমার যা আছে আমি সকল দিতে পারি নি’, ‘আমার মিলন লাগি তুমি’, ‘কাঁদালে তুমি মোরে ভালবাসারই ঘায়ে’, ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি’, ‘যেতে যেতে একলা পথে’, ‘শুধু তোমার বাণী নয় গো’, ‘মম অঙ্গনে স্বামী’, ‘রাখো রাখো হে জীবনে’, ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে’। গানের ফাঁকে কখনও তিনি বলেন গুরুদেবের গানের গতি-লয় নিয়ে ভ্রান্ত গায়নভঙ্গীর কথা বা গেয়ে দেখান ‘কাঁদালে তুমি মোরে’ গাইতে গিয়ে কেঁদে ভাসিয়ে দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই, তাতে গানটাই নষ্ট হয়ে যায়। আবার কখনও ধামার গাইতে গিয়ে হাতে গুনে সম-ফাঁক দেখান। অঞ্জন বসুর অপূর্ব এসরাজ শিল্পীকে যথাযথ সঙ্গত করে।

এক সময় গান থামে। কথা বলতে শুরু করেন মোহন সিংহ। বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব তাঁর দরাজ গলার মতোই সপাট। আলোচনা উঠে আসে রবীন্দ্রগানের গায়কী থেকে যন্ত্রানুষঙ্গ। অনুষ্ঠান যখন শেষ হচ্ছে বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি।

ভিজছে কৃষ্ণনগর। তার অনেক আগেই রবীন্দ্রগানে ভিজে গিয়েছেন কৃষ্ণনাগরিকেরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Mohan SIngh Khangura Musi Krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE