Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Mimi Chakraborty

Mimi Chakraborty: প্রজারা মাথা কুটে মরে গেলেও দিল্লির রাজা কিছু করবেন না

আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব তো কেন্দ্রীয় সরকারের উপরই বর্তায়। সেই সুরক্ষা দেশের মানুষ কোথায় পেল?

মিমি চক্রবর্তী।

মিমি চক্রবর্তী।

মিমি চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২১ ১১:২২
Share: Save:

সকালে ঘুম ভেঙে মোবাইলটা চালু করতেই একের পর এক মেসেজ আসতে থাকে। তার মধ্যে ৯০ শতাংশ ফরওয়ার্ড করা। কী কী খেলে করোনা হবে না, তার তালিকা। কালো ছত্রাক এসেছে, সব শেষ হয়ে যাবে। আর এখন ইয়াস। আমরা ধ্বংসের পথে। মা, বাবা শিলিগুড়ি থেকে চিন্তিত হয়ে সারা ক্ষণ হোয়াটসঅ্যাপ পাঠাচ্ছে। অমুক ডাক্তারের নাম লেখা একটা প্রেসক্রিপশন। কে তিনি? কারা নেট জুড়ে এ সব পাঠাচ্ছেন? তার কোনও উত্তর নেই। আতঙ্কের খবর যত দ্রুত ছড়ানো যায়। একেক সময় মনে হয়, এগুলো বন্ধ করা যায় না? কিছু মেসেজ তো ক্ষতিকারক, যেখানে হয়তো লেখা আছে অমুক অমুক খেলেই আর করোনা হবে না।

দুর্ভাগা দেশ আমাদের! রামদেবের মতো লোক তাই সাধারণ মানুষের কাছে বড় বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছেন। তিনি বলছেন, অক্সিজেন লাগবে না, অমুক খাও, করোনা হবেই না। ব্যস! তাঁকেই অনেক বেশি বিশ্বাস করছে দেশের মানুষ।

এখন আর গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। দিল্লিতে এমন এক রাজা বসে আছেন, প্রজারা মাথা কুটে মরে গেলেও তাদের জন্য কিছু করবেন না তিনি। এই তো সে দিন দেখলাম এলাহাবাদের গঙ্গায় একের পর এক মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হচ্ছে। বিহারে গঙ্গায় ভেসে উঠছে শব। শিউরে উঠি। রাতে ঘুম আসতে চায় না। এ ভাবে দিনের পর দিন গঙ্গাকে দূষিত করা হচ্ছে। কেউ পরিবেশের কথা ভাবছেনই না! তার উপর শুরু হয়েছে ব্যক্তিগত আক্রমণ। নেটমাধ্যমে মানুষ ক্ষোভ উজাড় করে দিচ্ছেন। খেয়াল করে দেখেছি, এখন যদি কেউ টিকা নেওয়ার ছবি দেন, সেই ছবির তলায় কিছু সংখ্যক মানুষ গালিগালাজ করতে শুরু করেন। বিষয়টা এমন যে ‘আমি’ টিকা পেলাম না। অন্য কেউ কেন পাবে? এই মুহূর্তে দেশের মানুষ যে যার অবস্থান অনুযায়ী টিকা নিচ্ছেন। এই নিয়ে এত ক্ষোভ! করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসবে জেনেও কেন্দ্রীয় সরকার তার কোনও রকম ব্যবস্থাই নেয়নি, উল্টে ৮ দফায় নির্বাচন করে পশ্চিমবঙ্গে অতিমারির প্রকোপ বাড়িয়ে তুলেছে। এমন তো নয় যে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে খবর ছিল না করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসবে। তবুও তারা মানুষকে সাবধান করেনি। আর আমাদের দেশের মানুষ? ধরেই নিয়েছিল করোনা চলে গিয়েছে।

পথে নেমে কাজ করেছেন সাংসদ।

পথে নেমে কাজ করেছেন সাংসদ।

আমেরিকার মতো দেশে প্রায় ১ বছর লকডাউন চলেছিল। এই কড়া নিয়ম সে দেশের মানুষ মানতে পেরেছিল বলেই আজ তারা মাস্ক ছাড়া রাস্তায় হাঁটতে পারছেন। আমি মানছি, আমাদের তৃতীয় বিশ্বের মতো দেশে ১ বছর লকডাউন সম্ভব নয়। মানুষ না খেতে পেয়ে মরে যাবে। কিন্তু তাই বলে সরাসরি কুম্ভ মেলায় চলে যাবে? যেমন প্রধানমন্ত্রী কোটি টাকার বাড়ি করবেন, তেমনই তার তো দেখা উচিত দেশের হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন আছে কি না! টিকার পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে কি না! আমরা সকলে কর দিই সরকারকে। আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব তো কেন্দ্রীয় সরকারের উপরই বর্তায়। সেই সুরক্ষা দেশের মানুষ কোথায় পেল? উল্টে অতিমারির সময় অক্সিজেন মজুত না রেখে ভোটের প্রচারে চাটার্ড বিমান ব্যবহার করা নিয়ে অনেক বেশি মনোযোগী ছিল এই সরকার।

পশ্চিমবঙ্গ ৫০ কোটি টাকার টিকা কিনেছে। কিন্তু সেই টাকায় কতজনের টিকাকরণ হবে? বাংলা বিজেপি-কে ভোট দিল না, ফলে প্রধানমন্ত্রী রাগ করে পশ্চিমবাংলায় টিকা পাঠাবেন না? এ তো ছেলেখেলা হয়ে যাচ্ছে। উনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী! উনি সাহায্য না করলে বাংলা মাথা তুলে দাঁড়াবে কী করে?

করোনার দ্বিতীয় ঢেউকে অগ্রাহ্য করে ভোট যুদ্ধের জন্য একের পর এক মন্ত্রী দিল্লি থেকে হাজির হয়েছিল ‘সোনার বাংলা’-র জন্য। ভোট নেই তাই বাংলাও আর নজরে নেই।

গত বছর পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যু হয় রাস্তায়। কৃষকরা আন্দোলন করতে গিয়ে রাস্তায় জীবন দিয়ে দিল। এখন অক্সিজেন না পেয়ে করোনা রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। আর কত মৃত্যু দেখব আমরা? এটা কি আমাদের দেশ? এমন তো আগে হতো না।

আজ যদি আমার কোভিড হয় তা হলে সাংসদ হিসেবে আমি হাসপাতালে শয্যা পেয়ে যাব। বঞ্চিত হবে সাধারণ মানুষ। এটা কেন হবে? শয্যা সংখ্যা কম মানে তো কমই। আমি পেলে সত্যিটা তো মিথ্যে হবে না। এভাবেই চলছে...

আর টিকা নেওয়ার প্রসঙ্গে একটা কথা বলি। আমি নিজে এখনও টিকা নিইনি। দেখবেন, আবার এই বাক্যটা পড়ে সবাই আমাকে আক্রমণ করতে শুরু করবেন না যেন! বিষয়টা পুরো জেনে নিন। টিকা নিইনি কারণ আমার মনে হয়েছে গত ১ বছর ধরে রাস্তায় নেমে আমপানের জন্য, ভোটের জন্য, লকডাউনে আমি যে ভাবে মানুষের সঙ্গে মিশেছি তাতে আমার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে গিয়েছে। আমি করোনার সময় গত বছরও বিদেশে গিয়ে শ্যুট করে এসেছি। তাই বলে আমি কাউকে টিকা নিতে বারণ করছি কি? একেবারেই না। টিকার এই হাহাকারের সময়ে যাঁদের সবচেয়ে বেশি টিকার প্রয়োজন, তাঁরা আগে টিকা পেয়ে যাক। বয়স্ক মানুষরা বা যাদের রোজ কাজে বেরোতে হয় তারা টিকার সুবিধাটা নিক। সময় এলে আমি নিশ্চয়ই নিয়ে নেব।

আমি কিন্তু নিজেকে যথেষ্ট সাবধানে রাখি। মাস্ক পরা, হাতমোজা পরা, নিজের প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য উপযুক্ত খাবার খাওয়া— এ সব কিছুই আমার দৈনন্দিন নিয়মের মধ্যে থাকে। আমি যথেষ্ট সচেতন নিজের সম্পর্কে। আমি তো আর বাইরে বেরোচ্ছি না রোজ। তাই আমার টিকার নেওয়ার জন্য তাড়া নেই। করোনার সঙ্গে লড়াই করার একমাত্র পথ টিকা নেওয়া। আরও ১ মাস আমার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমায় বাঁচিয়ে রাখবে। তার পরে না হয় টিকা নিয়ে নেব। তবে এখন ইয়াসের সঙ্গে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। অবস্থা সত্যি ভয়ঙ্কর হলে ঝড়ের পরের দিনই রাস্তায় নামব।

অপেক্ষা করে আছি প্রকৃতি এ বার আমাদের কী শিক্ষা দেয়!

অন্য বিষয়গুলি:

Tollywood Actress Mimi Chakraborty coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE