ঋতুপর্ণ ঘোষে এবং মিমি চক্রবর্তী। —ফাইল চিত্র।
অভিনয়ের টানে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতায় মিমি চক্রবর্তী। ভর্তি হয়েছেন শহরের এক কলেজে। পড়াশোনার পাশাপাশি অভিনয় করবেন, এমনই ইচ্ছে। প্রথম দুটো বছর মন দিয়েই পড়াশোনা করেছেন। নিয়ম করে কলেজও গিয়েছেন। তৃতীয় বর্ষে ওঠার পরে তাঁকে সজাগ করেন বন্ধুরাই। এ বার যে স্বপ্নপূরের পালা! মিমি জলপাইগুড়ি ছেড়েছেন নায়িকা হবেন বলে। তার কী হবে?
তখনই পড়াশোনার পাশাপাশি মডেলিং শুরু করেছিলেন মিমি। প্রথম সুযোগ পান ধারাবাহিক ‘চ্যাম্পিয়ন’-এ। মাসিক উপার্জন ১৫ হাজার টাকা। অভিনেত্রী যেন হাতে স্বর্গ পেয়েছিলেন! মাত্র চার মাস চলার পরেই বন্ধ হয়ে যায় ধারাবাহিকটি। এর পরেই ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘গানের ওপারে’তে ডাক। পরিচালক সুদেষ্ণা রায়ের সৌজন্যে সেই প্রথম তিনি ‘ঋতুদা’র মুখোমুখি। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি উৎসব-এ। বাকিটা ইতিহাস!
সেই ইতিহাস শনিবার সন্ধ্যায় ফের ফিরে দেখলেন ঋতুপর্ণর ধারাবাহিকের নায়িকা। সৌজন্যে আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভ আড্ডা ‘অ-জানাকথা’। সেখানেই মিমি স্মৃতিমেদুর, ‘‘ ‘চ্যাম্পিয়ন’ শেষ হওয়ার পরে টুকটাক কিছু কাজ করেছি। তার পরেই একদিন সুদেষ্ণাদির ফোন। বললেন, ‘‘একটি গানের ধারাবাহিক ‘গানের ওপারে’ আসতে চলেছে। তোকে ঋতুদা দেখবেন। বুম্বাদার বাড়িতে আসবি?’’ সেই সঙ্গে নির্দেশ। সুন্দর করে মেয়ে মেয়ে সেজে আসার!’’
মিমির তখন না আছে ভাল পোশাক, না আছে সাজের সরঞ্জাম। চুলও ছোট করে কেটে কাঁধের উপরে তোলা। কোথাও যেতে গেলে ঠোঁটে লিপবাম আর গালে ক্রিম ঘষেই এত দিন কাটিয়ে দিয়েছেন। এ বার কী করবেন? অগত্যা বন্ধুদের থেকে চেয়েচিন্তে আনা লিপস্টিক, সালোয়ার-কামিজে সেজে নির্দিষ্ট দিনে হাজির। এসে দেখেন প্রসেনজিতের বাড়ির বাইরে লম্বা লাইন। অডিশনের জন্য। দেখেই ভয়ের চোটে তাঁর হাত-পা ঠান্ডা। সুদেষ্ণাকে ফোন করে রীতিমতো অনুনয়, ‘‘আমি কিচ্ছু পারব না। এত জনের মধ্যে থেকে কিছুতেই আমায় নেওয়া হবে না। আমি ফিরে যাচ্ছি।’’ কথাবার্তার মধ্যেই আচমকা সামনে তিনি! ঋতুপর্ণ ঘোষ।
তাঁকে এক ঝলক দেখেই উচ্ছ্বসিত ঋতুপর্ণ, ‘‘এই তো আমার পুপে!’’ তার পরে নিজের হাতে চোখে কাজল বুলিয়ে দিয়েছেন। গায়ে জড়িয়ে দিয়েছেন শাড়ি। খুঁটিয়ে দেখিয়েই সুদেষ্ণাকে পরিচালকের নির্দেশ, ‘‘আমি আমার পুপেকে পেয়ে গিয়েছি। আর কাউকে দেখতে হবে না। সবাইকে চলে যেতে বল!’’ হতবাক মিমি তখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘামছেন আর ভাবছেন, এ সব কী হচ্ছে তাঁর সঙ্গে!
দিনের পর দিন কাজ। মিমি ঋতুপর্ণের সাহচর্যে অভিনয় শিখেছেন। সাজতে শিখেছেন। সংলাপ বলতে শিখেছেন। জলপাইগুড়ির প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা মেয়েটির কথায় তখনও পাহাড়ি টান! পরিচালক যত্ন করে সেই উচ্চারণ বদলেছেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন অভিনেত্রী নিজেও। রাত জেগে সংলাপ মুখস্থ করতেন। পরের দিন সেটে এসে হুবহু উচ্চারণ করতেন সে সব। এর জন্য পরিচালকের খুব প্রিয়ও ছিলেন তিনি। তবু ঋতুপর্ণর একটি ছবিতেও তিনি নেই। কেন?
আক্ষেপ মিমির নিজেরও- ‘‘মৃত্যুর কয়েক দিন আগে ঋতুদা ডেকেছিল। বলেছিল, তোকে নিয়ে একটা ছবি করব। তাই নিয়ে কথা বলব। আসবি? সেই কথা আর হয়ে ওঠেনি আমাদের।" নায়িকার আজও দুঃখ, ‘‘মিমি চক্রবর্তী হয়ে উঠলাম যাঁর দৌলতে, তাঁর একটি ছবিরও অংশীদার নই! এ আমার আজীবনের আফশোস।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy