Meghna Gulzar Established Her As A Successful Director dgtl
bollywood
রাখীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে পরিচালক হন তাঁর মেয়ে, মাকে নিয়েই ছবি করতে চান গুলজারের আদরের ‘বস্কি’
দেশে ফিরে মেঘনা তাঁর বাবার ইউনিটে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ‘মাচিস’ এবং ‘হুতুতু’ ছবিতে তিনি ছিলেন গুলজারের সহকারী। একইসঙ্গে নিজের ছবি পরিচালনার কথাও ভাবনাচিন্তা করছিলেন মেঘনা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ১০:৪৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
পঞ্জাবের ভূমিপুত্র হয়েও তাঁর বাবা মনেপ্রাণে বাঙালি। অভিনেত্রী মায়ের প্রথম জীবন কেটেছে গ্রামবাংলায়। একমাত্র মেয়ের নাম দু’জনে ‘মেঘনা’ ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারেননি। বাবা মায়ের ধারা নিয়ে নদীর মতোই বয়ে চলেছেন তিনি। হিন্দি সিনেমার ছক ভাঙা পরিচালক মেঘনা গুলজার।
০২২০
কবি, গীতিকার, সাহিত্যিক, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক গুলজার এবং অভিনেত্রী রাখীর মেয়ে মেঘনার জন্ম ১৯৭৩-এর ১৩ ডিসেম্বর। তাঁর যখন মাত্র এক বছর বয়স, আলাদা হয়ে যান গুলজার ও রাখী।
০৩২০
বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে দু’জনে মুখ খোলেননি। তবে শোন যায়, গুলজারের মানসিকতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি রাখী। বিয়ের পরে রাখীর অভিনয় নিয়ে নাকি তীব্র আপত্তি ছিল গুলজারের। সেটা মেনে নিতে পারেননি রাখী।
০৪২০
তবে তাঁরা কোনওদিন খাতায়কলমে ডিভোর্স করেননি। মেয়ে যাতে কোনও দিন বাবা-মায়ের সাহচর্য থেকে বঞ্চিত না হয়, সে দিকেও খেয়াল রেখেছেন দু’জনেই। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে মেঘনা বার বার জানিয়েছেন, তাঁর জীবনে বাবা ও মা, দু’জনেরই প্রভাব গভীর।
০৫২০
রাখী চেয়েছিলেন মেঘনাও তাঁর মতো অভিনেত্রী হন। কিন্তু মেঘনার কোনওদিন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে ইচ্ছে হয়নি। বরং, বাবার মতো তিনি বেছে নিয়েছেন বাবার মতো ক্যামেরার নেপথ্যে থাকার সৃজনশীলতা।
০৬২০
মুম্বইয়ে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে সোশ্যিয়োলজিতে স্নাতক মেঘনা প্রথমে
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতেন। পরে পরিচালক সৈয়দ মির্জার সহকারী পরিচালক হয়ে কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি নিউইয়র্কের নামী প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালনার উপরে একটি কোর্স করেন।
০৭২০
দেশে ফিরে মেঘনা তাঁর বাবার ইউনিটে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ‘মাচিস’ এবং ‘হুতুতু’ ছবিতে তিনি ছিলেন গুলজারের সহকারী। একইসঙ্গে নিজের ছবি পরিচালনার কথাও ভাবনাচিন্তা করছিলেন মেঘনা। সে সময় দূরদর্শনের জন্য বেশ কিছু তথ্যচিত্র এবং মিউজিক ভিডিয়ো পরিচালনা করেন তিনি।
০৮২০
পরিচালক মেঘনার প্রথম ছবি ‘ফিলহাল’ মুক্তি পেয়েছিল ২০০২ সালে। পাঁচ বছর পরে দ্বিতীয় ছবি ‘জাস্ট ম্যারেড’ পরিচালনা করেন তিনি। ‘দশ কহানিয়াঁ’-র জন্য তিনি পরিচালনা করেন ‘পূরণমাসি’ বলে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি। ২০০৭-এ মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দশ কহানিয়াঁ’-তে ছ২জন পরিচালক দশটি ছবি পরিচালনা করেছিলেন।
০৯২০
কেরিয়ার ভাল করে শুরুর আগেই দাম্পত্যে পা রেখেছেন মেঘনা। ২০০০ সালে বিয়ে করেছেন তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু ব্যবসায়ী গোবিন্দ সন্ধুকে। তাঁদের একমাত্র ছেলের নাম সময়। ছেলের জন্য বেশ কয়েক বছর কাজ থেকে দূরে ছিলেন মেঘনা।
১০২০
‘দশ কহানিয়াঁ’-র পরে দীর্ঘ আট বছর তিনি কোনও কাজ করেননি। ২০১৫-এ মুক্তি পায় মেঘনার পরিচালনায় ‘তলওয়ার’। ২০০৮ সালে নয়ডায় এক চিকিৎসক দম্পতির বাড়িতে খুন হন তাঁদের কিশোরী কন্যা আরুষি এবং পরিচারক হেমরাজ। এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের উপর নির্মিত এই ছবি প্রশংসিত হয় সমালোচক মহলে।
১১২০
বিদেশেও সাড়া ফেলে দেয় মেঘনার ছবি ‘তলওয়ার’। তিনি যে বেশ কয়েক বছর কাজ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন, তার কোনও ছাপ এই পরিণত ছবিতে নেই।
১২২০
পরের ছবি ‘রাজি’-তেও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন মেঘনা। ১৯৭১ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে হরিন্দর সিক্কার লেখা ‘কলিং সেহমত’ অবলম্বনে এই ছবি তৈরি হয়েছে বাস্তবের এক কাশ্মীরি গুপ্তচরকে ঘিরে। যিনি দেশের স্বার্থে বিয়ে করেছিলেন পাকিস্তানি সেনা আধিকারিকের পরিবারে।
১৩২০
সেহমতের (নাম পরিবর্তিত) ব্যক্তিগত জীবন বলিপ্রদত্ত ছিল দেশসেবায়। তাঁর আত্মত্যাগই ‘রাজি’-র মূল উপজীব্য। তবে এই ছবি ঘিরে বিতর্কও দেখা দেয়। লেখক সিক্কার অভিযোগ ছিল, ছবির শেষ অংশের চিত্রায়ণ তাঁর লেখা থেকে অনেকটাই আলাদা। তাছাড়া মেঘনার জন্য এই ছবিতে তিনি প্রাপ্য পরিচিতি পাননি বলেও অভিযোগ সিক্কার।
১৪২০
নারীকেন্দ্রিক ছবির ধারায় মেঘনার পরবর্তী সংযোজন ‘ছপাক’। এই ছবির মূল চরিত্রও বাস্তব থেকে উঠে এসেছেন। অ্যাসিড হামলার শিকার লক্ষ্মী-ই এই ছবির মালতী। তাঁর জীবনযুদ্ধই পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন দীপিকা পাড়ুকোন। বক্স অফিসে প্রত্যাশিত সাফল্য না পেলেও সমালোচকদের কলমে প্রশংসিত হয়েছে ‘ছপাক’।
১৫২০
মেঘনার ছবি বরাবরই অন্যরকম। বিভিন্ন বিষয়বস্তুর মধ্যেই গল্পের বুনন তাঁর ছবির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নিজে ছবি দেখতেও ভালবাসেন মেঘনা। তাঁর প্রিয় অভিনেতা ইরফান খান, অমিতাভ বচ্চন এবং আমির খান। অভিনেত্রীদের মধ্যে পছন্দ তব্বু এবং আলিয়া ভট্টকে।
১৬২০
অবসরে ভালবাসেন বই পড়তে, ছবি আঁকতে, বাগানের যত্ন করতে এবং গান শুনতে। প্রিয় সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমান এবং বিশাল ভরদ্বাজ। পছন্দের শিল্পীরা হলেন লতা মঙ্গেশকর, কিশোর কুমার এবং কে এস চিত্রা।
১৭২০
দিল্লির রাস্তার গোলগাপ্পার ভক্ত মেঘনার বেড়ানোর জায়গা কাশ্মীর। বাবা মায়ের সঙ্গে শুটিং ইউনিটে থাকতে থাকতে তাঁর শৈশবের বড় অংশ কেটেছে কাশ্মীরে। ভৌগোলিক সৌন্দর্যের তুলনায় উপত্যকাবাসীদের জীবনকেই তাঁর ছবিতে তুলে ধরতে চান গুলজারকন্যা।
১৮২০
তাঁর পরবর্তী ছবি অবশ্য নারীকেন্দ্রিক নয়। এ বার মেঘনা তৈরি করছেন ভারতের প্রথম ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ’-র বায়োপিক। তাঁর পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকায় আছেন ভিকি কৌশল। আগামী বছর ছবিটির মুক্তি পাওয়ার কথা।
১৯২০
নিজের কাজের জায়গাকে ‘বলিউড’ বলায় ঘোরতর আপত্তি মেঘনার। তিনি বরং পছন্দ করেন ‘হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি’ শব্দবন্ধ। জানিয়েছেন গুলজারের আদরের ‘বস্কি’। একমাত্র মেয়ের ডাকনামেই নিজের বাংলোর নাম তিনি রেখেছেন ‘বস্কিয়ানা’।
২০২০
বাবার তুলনায় মা অনেক বেশি তাঁর ছবির সমালোচক। জানিয়েছেন মেঘনা। মেয়ের কাজ খুঁটিয়ে দেখে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন রাখী। এখন তাঁর সময় কাটে পানভেলে নিজস্ব ফার্ম হাউজের নির্জনতায়। মেঘনার সুপ্ত ইচ্ছে, তাঁর মাকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে রেখে একটি ছবি পরিচালনার।