শ্যুটিঙের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় পড়াশোনা এবং অভিনয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা কঠিন হয়ে পড়ছিল। শেষে ছবির সেটেই বইখাতা নিয়ে যেতেন রাজু। অভিনয়ের পাশাপাশি চলত পড়াশোনাও। পরে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ওই বয়সে নায়কনায়িকাদের ফ্লার্টও দিব্যি বুঝতেন তিনি। ছোট বলে তাঁর উপস্থিতি ধর্তব্যের মধ্যে আনতেন না তারকারা। কিন্তু তাঁদের ‘বিশেষ আলাপ’ সকলের অজান্তেই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতেন এই শিশুশিল্পী।
‘চিতচোর’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পান মাস্টার রাজু। অথচ এই ছবিতে রাজুর কাজ করার ব্যাপারে প্রথম থেকে নিমরাজি ছিলেন তাঁর মা। অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জীবকুমারের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করে আসে রাজু কি না কাজ করবে নবাগত অমল পালেকর, জারিনা ওয়াহাবের সঙ্গে! শেষে প্রযোজক তারাচাঁদ বরজাতিয়া জানান, তিনি রাজু ছাড়া কাউকে নেবেন না। তখন তাঁর মা রাজি হন।
‘চিতচোর’ রাতারাতি পাল্টে দিয়েছিল জীবন। মাস্টার রাজুর পারিশ্রমিক ১০ হাজার থেকে বেড়ে হয়ে যায় লক্ষাধিক। ডোংরি ছেড়ে তাঁরা সপরিবার উঠে আসেন বান্দ্রার নতুন বাড়িতে। গুলজার, বাসু চট্টোপাধ্যায়ের মতো পরিচালকও পছন্দ করতেন মাস্টার রাজুর অভিনয়। তাঁর পরিচালনায় ‘খট্টা মীঠা’, ‘হমারি বহু অলকা’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি।
কিন্তু তাঁর সেই ইচ্ছে পূর্ণ হয়নি। শিশুশিল্পীর পরিচয় ছাপিয়ে তাঁকে নায়ক হিসেবে মেনে নিতে রাজি ছিল না বলিউড। ‘আফসানা প্যায়ার কা’, ‘শতরঞ্জ’, ‘খুদ্দর’, ‘সজন চলে সসুরাল’, ‘দিলজ্বলে’, ‘মসীহা’-সহ কিছু ছবিতে তিনি ছোটখাটো ভূমিকায় অভিনয় করেন। সে সময় রাজেশ খন্নার প্রযোজনা সংস্থায় কিছু দিন সহ-পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। মুলক আনন্দের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয় কাজের সূত্রে। ‘মহাসংগ্রাম’ ছবিতে মাস্টার রাজুকে অভিনয়ের সুযোগ দেন মুলক রাজ আনন্দ।
শেষে বাধ্য হয়ে তিনি পা রাখেন টেলিভিশন দুনিয়ায়। নিজের নাম ‘মাস্টার রাজু’ থেকে পাল্টে করে নিয়েছিলেন ‘রাজু শ্রেষ্ঠ’। কিন্তু কোথাও যেন শিশুশিল্পীর পরিচয় তাঁর সঙ্গে থেকেই গিয়েছিল। যে সময়ে তিনি তারকা ছিলেন, সে সময়ে প্রচুর উপার্জন করেছিলেন। সেই অর্থ তাঁর বাবা মা বিনিয়োগ করেছিলেন যথার্থভাবে। ফলে অর্থাভাবে তাঁকে পড়তে হয়নি। টেলিভিশনের জন্য কাজের অভাবও হয়নি।
শিশুশিল্পী রাজু বড় হয়ে জনপ্রিয় হলেন ছোটপর্দার জগতে। ‘হরর শো’, ‘জয় হনুমান’, ‘দম দমা দম’, ‘শসসসস ফির কোই হ্যায়’, ‘আদালত’, ‘সিআইডি’, ‘ভারত কা বীর পুত্র-মহারানা প্রতাপ’-সহ বহু জনপ্রিয় ধারাবাহিকের তিনি ছিলেন অন্যতম অভিনেতা। ‘লাইফ অব পাই’ ছবির হিন্দি সংস্করণে তিনি ডাবিং করেছিলেন মূল চরিত্র সুরয শর্মার চরিত্রে।
শিশুশিল্পীদের বিস্মৃত হয়ে যাওয়া দেখতে বলিউড অভ্যস্ত। মাস্টার রাজু সেই তালিকায় নাম লেখাননি। শিশুশিল্পী হিসেবে যে জনপ্রিয়তা এবং খ্যাতি তিনি পেয়েছিলেন, বড় হয়ে তার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেননি ঠিকই। কিন্তু ছোটপর্দার অভিনেতা হিসেবে নিজের জায়গা মজবুত করেছেন। উপার্জনের অর্থ সঠিক বিনিয়োগের জন্য কাজ না থাকলেও তাঁকে অর্থকষ্টের মুখোমুখি হতে হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy