Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Tollypara

গ্লাভস-মাস্ক পরে স্ক্রিপ্ট পড়ছেন রানি রাসমণি, ক্যামেরা চালু টলিপাড়ায়

দীর্ঘ ৮৩ দিন পর শুটিং শুরু হল টলিপাড়ায়। সব স্টুডিয়োরই গেট বন্ধ! যেমন বন্ধ ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োর গেটও।

 মাস্ক পরে চিত্রনাট্য পড়ছেন দিতিপ্রিয়া।—নিজস্ব চিত্র।

মাস্ক পরে চিত্রনাট্য পড়ছেন দিতিপ্রিয়া।—নিজস্ব চিত্র।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২০ ১৯:৫৭
Share: Save:

খোলনলচে বদলে বৃহস্পতিবারের টলিপাড়া যেন দুর্গ! দেখা গেল গুটিকয়েক মানুষ পিপিই কিট আর মাস্ক পরে ঘুরছেন। কে অভিনেতা? কে টেকনিশিয়ান? আজ যেন চেনাই যাচ্ছে না!

দীর্ঘ ৮৩ দিন পর শুটিং শুরু হল টলিপাড়ায়। সব স্টুডিয়োরই গেট বন্ধ! যেমন বন্ধ ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োর গেটও। গ্লাভস আর মাস্ক হাতে সকাল সকাল নতুন চিত্রনাট্য ঝালিয়ে নিচ্ছিলেন ‘রাণী রাসমণি’র দিতিপ্রিয়া। তবে রাসমণি পিরিয়ড ড্রামা, তাই শুটিং করার সময় যে মাস্ক বা গ্লাভস পরা যাবে না, সেই চ্যালেঞ্জটা মনে নিয়েই ফ্লোরে নামছেন ‘রানিমা’। ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োতে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে চলছে শুটিং। শুটিং পাড়ার লোকজন ছাড়া অন্য লোক দেখলেই নিরাপত্তারক্ষ্মী মুখের উপর গেট বন্ধ করে দিচ্ছেন। বলছেন, বাইরের

লোক ঢুকলে তাঁর চাকরি যাবে। জোর গলায় তিনি জানিয়ে দিলেন, স্টুডিয়ো এলাকা বার বার স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। বাইরের লোক ঢুকলে বিপদ বাড়বে। দিও কড়া নিরাপত্তা পেরিয়ে, থার্মাল স্ক্রিনিং আর হাতে স্যানিটাইজার নিয়ে দাসানি স্টুডিয়োর ভিতরে পৌঁছে গেল আনন্দবাজার ডিজিটাল টিম। দাসানি স্টুডিয়োয় অবশ্য নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নিজেই মেকআপ রুম থেকে বেরিয়ে এলেন ইন্দ্রাণী হালদার। ‘শ্রীময়ী’র মেকআপ সারা। শুটের প্রথম দিনেই শ্রীময়ী আর রোহিতের দৃশ্য আছে।

আরও পড়ুন:রাজনীতি নয়, গঠনমূলক কাজের ডাক অভিষেকের, সূচনা যুবশক্তির

তিনি বললেন, “আমি মেকআপ ম্যানের কাছেই মেকআপ করেছি। হেয়ার ড্রেসারের কাছে চুল বেঁধেছি। শিল্ড পরে আমার মেকআপ ম্যানের মেকআপ করতে অসুবিধা হচ্ছিল। বললাম, অভ্যেস কর।” ইন্দ্রাণী বললেন, তাঁর প্রযোজকেরা এই সময়ে সুরক্ষার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন। তিনি প্রোডাকশনের থেকে পোশাক নিলেও বাড়ি নিয়ে গিয়ে কেচে ইস্ত্রি করে আনবেন। আমূল বদলে গিয়েছে স্টুডিয়োপাড়া। সেই গাছের তলায় কলাকুশলী বা টেকনিশিয়ানদের আড্ডা বা জটলা নেই। সবাই দূরে দূরে কাজের মধ্যে।

সকাল থেকে টেকনিশিয়ান, কলাকুশলীরা স্টুডিয়োয় ঢোকার আগে তাঁদের থার্মাল স্ক্রিনিং চলছে। সকালেই জীবাণুমুক্ত করা হয় ক্যামেরা, লাইট, অন্যান্য যন্ত্রপাতি। স্যানিটাইজ করা হয় শুটিং ফ্লোর। মেকআপ রুম স্যানিটাইজ করে অভিনেতা, মেকআপ ম্যান আর হেয়ার ড্রেসার ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ম্যাজিক মোমেন্টেস-এর এগজিকিউটিভ প্রোডিউসার সুমিত রায় বললেন, “এক জন আর্টিস্ট মেকআপ রুম ছাড়ার পর অন্য জন ঢোকার আগেও রুম স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। আর ফ্লোরে যাওয়ার আগে কলাকুশলী থেকে টেকনিশিয়ান, সকলের আবার থার্মাল স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। শুটিং ফ্লোরে সকলের ফেস শিল্ড পরা বাধ্যতামূলক করেছে স্টুডিয়োপাড়া।

দুই রূপে রানি রাসমনি। করোনা-কালে দিতিপ্রিয়ার ভূষণ মুখাবরণ(বাঁ দিকে)। তখনও আতঙ্ক ছড়ায়নি(ডান দিকে)।

‘মোহর’ ধারাবাহিকের পোশাকের দায়িত্বে থাকা মিঠুন কুণ্ডু জানালেন, ধারাবাহিকের সব পোশাক স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। আর্টিস্টদের পোশাক ইস্ত্রি করে রুমে দিয়ে আসা হচ্ছে। আর্টিস্টরা নিজেরাই পরছেন। তিনি বললেন, “একান্ত দরকার হলে তবেই আমি আর্টিস্টদের কাছে যাচ্ছি, আর তখন মাস্ক, গ্লাভসের সঙ্গে ফেস শিল্ড পরে নিচ্ছি।”

চা থেকে লাঞ্চের ব্যবস্থা প্রোডাকশন করলেও স্টুডিয়োপাড়ায় শুরু হয়েছে বাফে সিস্টেম। “সকলে স্যানিটাইজ করে, দূরত্ব বজায় রেখে খাবার নিতে আসছে। একসঙ্গে অনেকে খাওয়া আর যাবে না। কলাপাতার প্লেটে খাওয়া হচ্ছে।” দাসানি স্টুডিয়ো থেকে জানালেন চন্দ্রশেখর চক্রবর্তী। যে কোনও ধরনের জমায়েত, আড্ডা টলিপাড়া থেকে কি তবে বাদ পড়ল? এক মাথা বৃষ্টি নিয়ে হাজির হলেন ‘মোহর’ আর ‘শ্রীময়ী’-র লেখক, প্রযোজক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়।

টলিপাড়ায় শুরু হল শুটিং। —নিজস্ব চিত্র

‘মোহর’-এর ফ্লোরে গিয়ে দেখা গেল, দু’জন অভিনেতার দৃশ্য চলছে। তা ছাড়া ফ্লোরে ৬ থেকে ৭ জন আছেন। সকলের মুখেই মাস্ক, কেউ পড়েছেন ফেস শিল্ড। অভিনেতারা এমনি সময় মাস্ক পরলেও অভিনয়ের সময় খুলে রাখছেন। লীনা বললেন, “সব ধারাবাহিকেই করোনার কথা আসবে এমন নয়। এটা তো ফিকশন। সেই অনুযায়ী গল্প চলবে। তবে শুট শুরুর এই দিনের জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। যে যে কাজ করুক না কেন সেই কাজের প্রতি একটা ভালবাসা থাকে। আর এটা আমাদের সকলের রুজি-রুটি। কাজ শুরু নিয়ে অমিল ছিল, সকলে তো এক রকম করে ভাববেন না। সেই বিবাদ মিটেছে। সরকার সহযোগিতা করেছে। সবাইকে নিয়ে আমরা কাজের মধ্যে থাকতে চাই।”

অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় নিজেকে আড়াই মাস ধরে তৈরি করছিলেন এই দিনটির জন্যই। তাঁর কথায়, ‘‘মাস্ক পরে থাকার ফলে বেশিরভাগ লোককেই চিনতে পারছি না। সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মানতে গিয়ে মনের দূরত্ব না বেড়ে যায়,’’

মেক আপ করছেন ভাস্বর চট্ট্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র

ঘুরে দেখা গেল ‘শ্রীময়ী’র ফ্লোর। অর্ণা আর সংকল্পের বেডরুমের দৃশ্য চলছে। অর্ণা রাত্রিবাস পরা, মুখে মাস্ক নেই! দেখা গেল, প্রোডিউসার গিল্ডের সভাপতি, ‘শ্রীময়ী’র প্রযোজক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় ফেস শিল্ড আর মাস্ক পরে, হাত স্যানিটাইজ করার পাশাপাশি গরম হারবাল টি খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। কথা বলার সময় মুখ থেকে মাস্ক না-নামানোর জন্য কড়া নির্দেশ দিচ্ছেন। আনন্দবাজার ডিজিটালকে শৈবাল বললেন, “অনেক জটিলতা, লড়াই, নানা বাধা পেরিয়ে শুটিং শুরু হল। এটা যেন একটানা সকলে চালাতে পারে। মানুষ পুলিশ দেখলে হেলমেট পরে। সিটবেল্টের ক্ষেত্রেও তাই। তাই বার বার মানুষকে সতর্ক করতে হবে। এ জন্যই সচেতনতার উপর জোর দিচ্ছি আমি।”

নিয়ম মেনে শুরু টলিপাড়ার শুটিং। ছবি: এএফপি

অনেকটা বুক ঢিপঢিপ আর একরাশ আনন্দ নিয়ে নাকি সেটে পা রেখেছেন স্টার জলসার অতি জনপ্রিয় মেগা ‘এখানে আকাশ নীল’-এর প্রধান দুই চরিত্র ‘উজান-হিয়া’। অর্থাৎ শন বন্দ্যোপাধ্যায় আর অনামিকা চক্রবর্তী। সারাদিন সব নির্দেশিকা মেনে, অভিনয়ের সময় ছাড়া বাকি সময় মাস্ক পড়ে, স্যানিটাইজারে হাত পরিষ্কার করে, দূরত্ব রেখে কাজ করে গেছেন দু'জনে। আরেক জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘প্রথমা কাদম্বিনী’র কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে সোলাঙ্কি রায়ের আজ শুধুই লুক টেস্টের জন্য ডাক পড়েছিল ফ্লোরে। বললেন, "সমস্ত নির্দেশিকা মেনে সারাদিন চলেছি"।

সে না হয় হল। কিন্তু শ্রীময়ী আর রোহিতের প্রেমের দৃশ্যের ক্ষেত্রে কী হবে? ‘শ্রীময়ী’র পরিচালক সুজিত পাইন বললেন, “টেকনিক্যাল শটের মাধ্যমে কাছে আসা দেখাব আমরা।” এই ভয়টাই কি পেয়েছেন অভিনেতা জিতু কামাল? দাসানির অন্য ফ্লোরে শুরু হয়েছে সুরিন্দর ফিল্মস প্রযোজিত ধারাবাহিক ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’-এর শুটিং। এই ধারাবাহিকে অভিনয় করেন নবনীতা দাস। তারা মায়ের ভূমিকাতেই নবনীতাকে দেখা যায়। তাই তাঁকে বাদ দিয়ে শুটিং সম্ভব নয়। ২৫ লক্ষ টাকার বিমা থাকলেও বেশ ঝুঁকি নিয়েই শুটিং ফ্লোরে যেতে হয়েছে তাঁকে। কারণ অভিনেতাদের তো মাস্ক পড়ার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন:একটার পর একটা দেহ উঠছে পুরসভার গাড়িতে, ভাইরাল ভিডিয়ো ঘিরে বিতর্ক

সে জন্য বেশ চিন্তিত হয়ে একটি আবেগঘন পোস্ট করেছেন তাঁর স্বামী জিতু কামাল। তিনি লেখেন, “আজ, আজ থেকে কি হবে? আজ থেকে যে তোমাকে একা ছাড়তে হবে। কে দেখবে আজ থেকে তোমায়... তুমি নিজের অজান্তেই মুখে হাত দিয়ে ফেল, হাত ধুতে গিয়ে ভাল করে দু’হাত ধোওয়ো না, মুখের মাস্কটা বার বার পরে যায় নাক থেকে, অন্য কেউ মাস্ক ছাড়া কাছে এগিয়ে এলে একটু চড়া সুরে না বলতে পার না। আরও না জানি কত কি। সবটাই আমি লক্ষ্য করতাম। খুব বকাও দিতাম। কিন্তু আজ থেকে? মাস্কটাই থাকবে না। উল্টে লাল রঙের ঝলকানি থাকবে মুখ জুড়ে। জানি অর্থের দরকার আছে সংসার চালাতে।” নিজেদের সংসার বাঁচাতে তাই আবার সরগরম টলিপাড়ার যৌথ সংসার!

অন্য বিষয়গুলি:

gloves Tollypara Mask PPE Kit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy