মাসাবা।
‘মাসাবা মাসাবা’
অভিনয়: নীনা গুপ্ত, মাসাবা গুপ্তপ্রমুখ
পরিচালনা: সোনম নায়ার
এপিসোড সংখ্যা: ৬
গভীর রাতে লম্বা রাস্তায় হাঁটছেন মাসাবা।লাল টকটকে স্কিন হাগিং গাউন। মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে তিনি বেরিয়ে এসেছেন মায়ের বাড়ি থেকে। ঠিক তার আগেই ছেড়ে দিয়েছেন তিনি তাঁর গল্পের স্বামী ভিনিৎ(সত্যদীপ মিশ্র) আর নিজের তৈরি বাড়ি।কোথায় থাকবেন তিনি এ বার?সেলিব্রিটি ডিজাইনার, ডিভোর্সি মাসাবা ‘নিজের বাড়ি’-র কথা তো কখনও ভাবেননি! মায়ের বাড়িতেও তিনি স্বচ্ছন্দ নন। তা হলে? কোথায় তাঁর নিজের বাড়ি?
বলে রাখা ভাল, ‘মাসাবা মাসাবা’ ওয়েব সিরিজের প্রথম পর্বের ছ’টি এপিসোড যদিও মাসাবার আত্মজীবনী নয়।বহুচর্চিত এই সিরিজে নাকি ভিভ রিচার্ডস আসতে পারেন এমনও শোনা গিয়েছিল। আপাতত এই সিরিজ সেরকম কোনও ইঙ্গিত অবধি দেয়নি। তবে বড় হয়ে ওঠা মাসাবার ছটফটে মনের ওঠানামা বোঝাতে পরিচালক এখানে ছোট্ট মাসাবাকে বার বার ইমেজ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাতে মনে হয় পরবর্তী পর্বে মাসাবার ছোটবেলা হয়তো উঠে আসবে।
তা হলে ‘মাসাবা মাসাবা’ কী?
বলা যায়, এ প্রজন্মের যে কোনও মেয়ের কাহিনি এই সিরিজ। যেখানে বিয়ে, প্রেম, বিচ্ছেদ, শরীরের খিদে আর প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন ফর্ম ধরা আছে।এ এক অন্য প্রজন্ম! হ্যাশট্যাগ, কালো কফি আর উন্মুক্ত ক্লিভেজের আত্মবিশ্বাসেযাদের দিন শুরু। আর মধ্য রাতে বিয়ার বা ওয়াইন সঙ্গে একাকীত্বের বইয়ের মলাট— এ ভাবেই তাদের রাত যাপন।কখনও মনের তাড়নায় আচমকা ছোঁয়া মোবাইলের স্ক্রিনে সেক্স চ্যাট... এই মানুষগুলোর কথাই বলতে চেয়েছে ‘মাসাবা মাসাবা।’ তবে কোথাও ‘জাজমেন্টাল’ নয় এই সিরিজ।কোনও তথাকথিত মূল্যবোধ দিয়ে ‘ঠিক’ বা ‘ভুল’-এর পথে যাননি পরিচালক।
মাসাবার বিয়ে ভাঙা থেকেই সিরিজের শুরু।মাসাবা একে সেলিব্রিটি, তায় ‘সিঙ্গল ওম্যান’, কেউ তাঁকে একা থাকার জায়গা দিতে চায় না।বাড়ির দালাল জানায়, এমন খোলামেলা পোশাক পরলে বিল্ডিংয়ের বাবা-মায়েরা জানিয়েছেন, তাঁদের ছেলেমেয়েরা মানুষ হবে না। পোশাকের জন্য বাড়ি জোটে না তাঁর। এ তো গেল সমাজের কথা!
মায়ের বাড়িতেও তিনি স্বচ্ছন্দ নন। তা হলে? কোথায় তাঁর নিজের বাড়ি?
আর মাসাবা নিজে?
মাসাবা একলা, তিনি পুরুষের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য যখন মরিয়া তখন ডেটিং অ্যাপ থেকে বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে ডেট করেন, কিন্তু মনের মতো কাউকেই পান না। বড্ড ফাঁকা লাগে তাঁর। থেরাপিস্টের কাছে যান মন ঠিক করতে।নিজেকে একটু একটু করে খুঁজতে থাকেন, বুঝতে থাকেন।অবশেষে বাড়ি পানতিনি।নিজের স্বাধীনতার বাড়ি। মাসাবার হাউজওয়ার্মিং পার্টিতে তাঁর প্রাণের বন্ধু জিয়া তাঁকে মজা করে ভাইব্রেটর উপহার দেন। মাসাবা আর থাকতে পারেন না, পুরনো বন্ধু ‘মানব’ বিদেশ থেকে ফিরলে তাঁর সঙ্গে শরীরের খিদে মেটান।
সেই উদ্দাম রাতেই মাসাবা জানতে পারেন মানবের ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর কথা! মুহূর্তে মানবকে আর মেনে নিতে পারেন না মাসাবা, তাঁর মনে হয় মানব তাঁর বান্ধবী এবং তাঁকে একসঙ্গে ঠকাচ্ছে! খটকা লাগে! সিরিজে সেক্সকে যে প্রজন্ম শরীরের খিদে মেটানোর মাধ্যম ভাবছে সেই প্রজন্ম হঠাৎ পুরনো বন্ধুর নতুন বান্ধবী নিয়ে এত চুলচেরা বিচারে বসল কেন? তা হলে কি এটাই ভাবতে হবে? যে প্রজন্মই হোক, বাইরের ক্লিভেজের সাহসিকতায় (পড়ুন বোল্ডনেস) ভেতরের পুরনো মূল্যবোধে কি কোনও বদল হয় না? মাসাবাও তাই? পরিচালক এই জায়গাটাই কি ধরতে চাইলেন? বাস্তব ছবি তুলে ধরাই এই সিরিজের প্রধান উদ্দেশ্য। প্রথম পর্বেই তাই এই সিরিজের নাম দিলেন ‘হট মেস!’
মানুষের বৈপরীত্য যেমন চমৎকার ধরা পড়েছে এই ছবিতে, তেমনই ব্যর্থতা কেমন করে নতুন কিছুকে সৃষ্টি করে তার হদিশ দিয়েছে এই ছবি। মাসাবার প্রিয় বন্ধু জিঁয়া তাকে ভুল বোঝে, মাসাবার মা তাঁকে ঘরছাড়া করেন, মাসবার জীবনে প্রেম নেই, মাসাবার ব্যাঙ্ক আকাউন্ট শুন্য, মাসবার নতুন কালেকশনের ফ্যাশন শো মুখ থুবড়ে পড়ে...মাসাবা কি সেখান থেকে ফিরতে পারবেন?
মাসাবা একে সেলিব্রিটি, তায় ‘সিঙ্গল ওম্যান’, কেউ তাঁকে একা থাকার জায়গা দিতে চায় না
৩১ বছরে অভিনয় জগতে এলেন ভিভ রিচার্ডস আর নীনা গুপ্তর এই মেয়ে। নীনা প্রথম দিকে চাননি মাসবা ছবিতে কাজ করুন। কিন্তু মাসবার অভিনয়, অভিব্যক্তি, কালো চামড়ার সেক্স অ্যাপিল চমকে দেবে দর্শকদের। তবে ‘মাসাবা’ চরিত্রের বাইরে তিনি অভিনয়ে কতটা দক্ষ? সেই পরীক্ষা এখনও বাকি আছে তাঁর। মায়ের চরিত্রে নীনা গুপ্ত ৬০ বছরের যৌবন নিয়ে ফেরা মহিলা। প্রয়োজনে মেয়েকে যিনি সামলান আবার আবেগহীন হয়ে মেয়েকে রাস্তায় নামিয়ে দেননিজের লড়াইটা বুঝে নেওয়ার জন্য। সত্যিই, মায়েদের আবেগহীন হওয়াও দরকার! নীনা এ ছবিতে রোজ নতুন করে নিজের জন্য বাঁচেন।যা যা জীবনে হয়নি, তা ৬০ বছরে পূর্ণ করবেন নীনা।তাঁর হলুদ স্লিভলেস ব্লাউজের সেক্স অ্যাপিল আজকের যে কোনও যুবতীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে। ঝগড়া হওয়া মা-মেয়ের ইনস্টাগ্রামে হ্যাশট্যাগে ভাব বিনিময় দেখতে বেশ লাগে। এটা সত্যি নতুন পৃথিবীর চরিত্র।তবে মহিলাদের আড্ডা, ঠাট্টার দৃশ্যে অ্যামাজন প্রাইমের ‘ফোর মোর শটস প্লিজ’সিরিজের দৃশ্য মনে করিয়ে দেয়!
সরাসরি আত্মজীবনী না হলেও একজন প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন ডিজাইনারের জীবন দেখাতে গিয়ে পরিচালক সোনম নায়ার তাঁর সিরিজের প্যালেটে ভরে দিয়েছেন রং, প্রিন্ট, আবহের ছন্দ। ইনস্টাগ্রাম যে এখন কার্যত মানুষের ডায়েরির পাতা, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বুঝিয়ে দেয় এই ছবি। হ্যাশট্যাগ, ইমোজি, সেক্স চ্যাট, বোল্ড রাইটিং— কিছুতেই আড়ষ্ট নয় এই প্রজন্ম! শুধু এক সময়েই তারা আশ্রয়ের কাছে ফিরতে চায় যখন নিজের সিদ্ধান্তে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। সে আশ্রয় হতে পারে ‘মা’, হতে পারে বন্ধু, হতে পারে বিজনেস ইনভেস্টর।
সোনম নায়ার, নন্দিনী গুপ্ত, অনুপমা রামচন্দ্রনের লেখার গুণে মা-মেয়ের এই গল্প থেকে উঠে এসেছে অনেক মানুষের গল্প। যে গল্পে বিনোদন থেকে ফ্যাশন দুনিয়ার হালহকিকত হাল্কা হাসির মোড়কে ধরা পড়েছে।সাফল্যের লড়াই আর অন্য দিকে আছে বিয়ে, প্রেম আর যৌনতার টানাপড়েন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy