Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বক্সিং রিং ছাপিয়ে জীবনের রিং-এ

‘মেরি কম’-এর হাওয়া বলিউডে প্রিয়ঙ্কার ইমেজ যে বদলে দিয়েছে সেটা নিশ্চিত করেই বলা যেতে পারে। লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধুমাত্র আনন্দবাজার ওয়েবসাইটের জন্য।‘মেরি কম’-এর হাওয়া বলিউডে প্রিয়ঙ্কার ইমেজ যে বদলে দিয়েছে সেটা নিশ্চিত করেই বলা যেতে পারে। লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধুমাত্র আনন্দবাজার ওয়েবসাইটের জন্য।

মেরির পাঞ্চ নিয়ে পর্দায় প্রিয়ঙ্কা।

মেরির পাঞ্চ নিয়ে পর্দায় প্রিয়ঙ্কা।

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৪ ১৮:৫৭
Share: Save:

ট্যুইট করেছেন বলিউডের মেরি, “হৃদয়। রক্ত। স্বেদ। আত্মা। আমি আমার সবটাই দিয়েছি ছবির জন্য!” মেরি কম পদকজয়ী অলিম্পিয়ান বক্সার, তাঁর বায়োপিকের নামভূমিকায় প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। খবরটা নেহাতই বাসি। ছবি মুক্তির আগে ধাপে ধাপে পোস্টার মুক্তি, তার পরে ট্রেলর, তার পরে একটা একটা করে গান— ভারতীয় ছায়াছবির বিপণন কৌশলে এ-ও আর নতুন কিছু নয়। তা হলে ‘মেরি কম’ ছবি নিয়ে, বিশেষ করে প্রিয়ঙ্কা চোপড়াকে নিয়ে কেন এত হইচই?

আসলে তলে তলে যেমন স্রোতই বয়ে যাক, বলিউডে পুরুষতান্ত্রিকতা হয়তো কিছুটা পিছু হটেছে মেরি কম-এর দৃপ্ত বিচ্ছুরণে! বলিউডে আলাদা করে মহিলাকেন্দ্রিক ছবি তৈরি হচ্ছে, বিশেষ বিশেষ নায়িকাকে নির্ভর করে। প্রিয়ঙ্কা চোপড়া অভিনীত, মেরি কম-এর বায়োপিকটি তারই হালফিলের জলজ্যান্ত নমুনা! সেই জন্যই এত উচ্ছ্বাস, এত শুভেচ্ছার জোয়ার! অবশ্য এ-ও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, নিজেকে রীতিমতো রপ্ত করে তুলেছেন প্রিয়ঙ্কা বক্সার অবতারে। ছবির পোস্টারে তাঁর মুখের জেদি চাহনি, পেশির দৃঢ়তা, এলোমেলো চুলের বাধ ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার জেহাদ, চমকে দিচ্ছে সবাইকে!

ওমং কুমারের পরিচালনায় এই সিনেমাটিতেও মেরির জীবন শুধুমাত্র বক্সিং রিং-এর মধ্যেই আবদ্ধ নেই। বরং রিং-এর বাইরের তাঁর আসল জীবনটাও এখানে উঠে আসবে। বলিউডের ‘গেম থিম’-এর ইতিহাসে মিলখা সিংহকে নিয়ে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিল। এ বার মেরির পালা। বিদেশে ক্রিকেটার হ্যান্সি ক্রোনিয়ের জীবন নিয়েও তৈরি হয়েছে বিখ্যাত ছবি ‘হ্যান্সি’। কিন্তু ভারতে এ বার মেরি কমকে নিয়ে উন্মাদনার পারদ উপরে ওঠার কারণ দু’টি। এক, ছবির প্রযোজক সঞ্জয় লীলা বনশালি। দুই, বি টাউনের ‘দেশি গার্ল’ প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। চরিত্রের খাতিরে মাথার সব চুল খুইয়েছেন এ বার প্রিয়ঙ্কা। তিনি বলেছেন, “ছবিতে চরিত্রের প্রতি ন্যায়বিচার করার জন্যই ন্যাড়া হয়েছেন তিনি। কোনও গিমিক নয়। অভিনেত্রী হিসেবে এটা তাঁর দায়িত্ব।” ব্রিটনি স্পিয়ার থেকে কেলি পিকলার হলিউডে এই ‘বাল্ড লুক’-এর চলন থাকলেও ‘ওয়াটার’ ছবির জন্য শাবানা আজমির পরে আর কোনও অভিনেত্রীকে বলিউড নিজের মাথার চুল খোয়াতে দেখেনি।

‘মেরি কম’-এর হাওয়া বলিউডে প্রিয়ঙ্কার ইমেজ যে বদলে দিয়েছে সেটা নিশ্চিত করেই বলা যেতে পারে। মাস কয়েক আগে বলিউড শাহরুখ খানের সঙ্গে গোপন প্রণয় নিয়ে কোণঠাসা করে রেখেছিল প্রিয়ঙ্কাকে। সেই সময়ে কেউই তো প্রায় কাজই দিতে চাইছিলেন না নায়িকাকে।

সেই সব মেঘ কাটল কেমন করে? হয়তো প্রীতি জিন্টার ট্যুইটে লুকিয়ে রয়েছে রহস্যভেদের সূত্র, “মন-প্রাণ দিয়ে কাজের কোনও বিকল্প হয় না!” প্রীতি বেশ উচ্ছ্বসিত ‘মেরি কম’-এর পোস্টার নিয়ে। তিনি বলছেন, “মেরি কম-এর পোস্টারটা ভীষণ ভাল লেগেছে। সো প্রাউড অফ ইউ! রীতিমতো অপেক্ষা করছি, কবে ছবিটা মুক্তি পাবে!” মধুর ভান্ডারকরেরও একই বক্তব্য, “এই নয়া জলবা দেখতেই হবে!”

হৃতিক রোশন খোলাখুলিই ট্যুইট করে জানিয়েছেন তাঁর ‘মেরি কম’-এর ফার্স্ট লুক দেখে বিস্ময় বিহ্বলতার কথা— “এহেন পাঞ্চগুলো প্রিয়ঙ্কাকেই মানায়! একেবারে জুতসই! কৃষ খুশি হয়েছে যে প্রিয়ঙ্কা একটা পাঞ্চিং ব্যাগ খুঁজে পেয়েছে অবশেষে। ছেলেরা আপাতত নিরাপদ! হা-হা...অ্যামেজিং পিসি!”

বলিপাড়ার দুই গুন্ডে-ও সমান উচ্ছ্বসিত প্রিয়ঙ্কার এই অবতার নিয়ে। “যে ভাবে পাঞ্চ মারছে, তাতে বরেলির এই মেয়েকে ঘাঁটানোর সাহস আর কেউ করবে না...একেবারে রেজিং বুলবুল।” ট্যুইট করেছেন অর্জুন কপূর। তাঁকে অনুসরণ করেই মেয়েকে একটা আলগা খোঁচা দিয়েছেন রণবীর সিংহ, “বাবা, এ যে দেখি রেজিং বুলবুল!”

অবশ্য শুধুই ছেলেরা নয়! প্রিয়ঙ্কার বক্সার অবতারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ মেয়েরাও। আলিয়া ভট্ট-ই যেমন হইচই করে উঠেছেন প্রিয়ঙ্কাকে পোস্টারে দেখে। একটু দুঃখ করে ট্যুইট করেছেন, “আমারও এ রকম পাঞ্চিং কিছু চাই!” অন্য দিকে, শ্রদ্ধা কপূরের বক্তব্য, “এই জন্যই তো প্রিয়ঙ্কা আমার নম্বর ওয়ান! ওর মতো বলিউডে আর কেউ নেই!” আবার বিপাশা বসু লিখেছেন যে তিনি মুখিয়ে আছেন মেরি কম দেখার জন্য। বলছেন, “লাভ ইউ ডার্লিং!”

কিন্তু তাই বলে কি মেরি কম স্বয়ং কোনও আগ্রহের কারণ নন? তিনি তো ছবির প্রাণকেন্দ্র। ঠিক দু’বছর আগে অলিম্পিকে পদক জিতে নিজের জাত চিনিয়েছেন মণিপুরের এই বক্সার। কিন্তু তাঁর শহরে কোনও সিনেমা হলে দেখানো হয় না হিন্দি ছবি। তা হলে কি নিজের শহরের মানুষরাই দেখতে পাবেন না পর্দার মেরিকে? মণিপুরে এক দশকেরও বেশি সময় জুড়ে বলিউডের ছবিকে ঘিরে নিষেধাজ্ঞা আছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কট্টরপন্থী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ফতোয়া জারি করেছেন ‘মেরি কম’ যাতে মণিপুরে না দেখা যায়। মেরি এর বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন। তিনি চাইছেন, কেবল ‘মেরি কম’-এর জন্য এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক। প্রিয়ঙ্কা নিজেও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে তাঁর ‘মেরি কম’ মণিপুরে দেখানোর আবেদন করেছেন। বাস্তব আর সেলুলয়েডের মেরির যুদ্ধ কোথাও এক হয়ে গিয়েছে। মেরি কম লড়ছেন প্রিয়ঙ্কার জন্য, আর প্রিয়ঙ্কা মেরির জন্য। সম্প্রতি না হলেও কিছু দিন আগের ট্যুইটে মেরি কম জানিয়েছিলেন নিজের মনের কথা। জানিয়েছিলেন, তাঁর বিশ্বাস, প্রিয়ঙ্কা সেলুলয়েডে তাঁকে ঠিক ভাবেই ফুটিয়ে তুলবেন। তাঁর কথায়, “ও খুব সাদামাটা আর একরোখা মেয়ে। আমি ওর মধ্যে ভাল ভাবেই নিজেকে দেখতে পাই। আমার ষোলো আনা বিশ্বাস, ও খুব ভাল কাজ করবে!”

মারকুটে, একরোখা, বুনো প্রিয়ঙ্কা শিক্ষক দিবসে এ বার কোন পাঞ্চটা মারবেন এখন তারই অপেক্ষা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy