‘কারাগার’-এ চঞ্চল চৌধুরী(ডান দিকে), ‘মহানগর’-এ মোশাররফ করিম(মাঝখানে), ‘কাইজ়ার’-এ আফরান নিশো(বাঁ দিকে)।
সোনিলিভের প্রশংসিত সিরিজ় ‘তব্বর’-এর পরিচালক অজিতপাল সিংহ সিরিজ়ের সাফল্য প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘কনটেন্ট যত বেশি স্থানীয় হবে, তত বেশি গ্লোবাল দর্শকের কাছে তা পৌঁছবে।’’ দেশ-বর্ণ-জাতি-ভাষা নির্বিশেষে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে কথাটি সারসত্য। তার প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে বারবার।
গত অগস্টে এসভিএফ ফিল্মসের হইচই প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে সৈয়দ আহমেদ শকি পরিচালিত সিরিজ় ‘কারাগার’-এর প্রথম সিজ়ন। এখনও অবধি হইচই-এ বাংলাদেশের অরিজিনালগুলির মধ্যে সর্বাধিক ভিউজ় পেয়েছে এই শো। এর পরে রয়েছে ‘মহানগর’ এবং ‘কাইজ়ার’।
ওটিটির দৌলতে যে কোনও দেশের সিরিজ়-সিনেমা এখন দর্শকের হাতের মুঠোয়। আন্তর্জাতিক সিরিজ়ের সঙ্গে অভ্যস্ত ‘গ্লোবাল’ বাঙালির একাংশের দাবি, ‘কারাগার’-এর মতো কনটেন্ট তাঁরা আগে দেখেননি বাংলায়। এটা কি নেহাত অত্যুক্তি বা ভাবের উচ্ছ্বাস? হইচই-এর চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) সৌম্য মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়াতে ‘কারাগার’ খুবই সাহায্য করেছে। আমরা গর্বিত এই শো নিয়ে।’’ হইচই-এর পাশাপাশি আড্ডা টাইমস, প্ল্যাটফর্ম এইট, ক্লিকের মতো একাধিক ওটিটি এসেছে বাজারে, যারা বাংলা সিরিজ় তৈরি করছে। প্রতিযোগিতার বাজারে সব কিছুকে ছাপিয়ে কোন জাদুমন্ত্রে নজর কাড়ছে ও-পার বাংলার সিরিজ়গুলি?
‘কারাগার’ ছাড়া ‘তকদির’ (হইচই) সিরিজ়টির পরিচালনা করেছেন শকি। ‘কাইজ়ার’-এর অন্যতম প্রযোজক তিনি। ফোনে আনন্দ প্লাসকে শকি বললেন, ‘‘দর্শক কোনও কনটেন্টকে কী ভাবে গ্রহণ করবেন, তা আগে থেকে বলা যায় না। এত প্রশংসা পেয়ে ভালই লাগছে। তবে আমি যা বানাতে চাই, যা দর্শককে দেখাতে চাই, তেমন কনটেন্ট বানাই।’’ শকির মন্ত্রও কি, লোকাল ইজ় দ্য নিউ গ্লোবাল? একটা গল্প শোনালেন পরিচালক, ‘‘হইচই-এর কাছে প্রথমে আমি একটা গল্প নিয়ে এসেছিলাম। ওরা জিজ্ঞেস করেছিল, গল্পটার ভৌগোলিক অবস্থান টেক্সাস করে দিলে কি একই আবেদন থাকবে? আমি বলেছিলাম, থাকবে। তখন ওরা বলেছিল, এমন কিছু ভাবতে যাতে বাংলাদেশের গন্ধ থাকবে, বাংলাদেশকে ভালমতো চিনতে পারবেন দর্শক।’’ খানিক থেমে শকির সংযোজন, ‘‘দক্ষিণ কোরীয় সিরিজ়গুলির কথা যদি বলেন, ওই সিরিজ়গুলিতেও দক্ষিণ কোরিয়াকে খুব ভাল ভাবে চেনা যায়। আমাদের সিনেমা-সিরিজ় বানানোর পদ্ধতি বিদেশ থেকেই অনুপ্রাণিত। তাই গল্পগুলিকে ‘লোকাল’ হতেই হবে।’’
‘কারাগার’-এর মুখ্য চরিত্রে এক কয়েদি, যার দাবি সে মীরজ়াফরকে হত্যা করেছিল! ঢাকার এক পরিত্যক্ত জেলে সিরিজ়টির শুট হয়েছে। অন্য দিকে, ‘তকদির’-এর মুখ্য চরিত্রে শববাহী গাড়ির এক চালক। দু’টি সিরিজ়েই অনবদ্য অভিনয়ের জোরে দর্শকের পরিধি বাড়িয়েছেন বাংলাদেশের শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী।
ওটিটির পছন্দের জ়ঁর থ্রিলার। যে কোনও ভাষার কনটেন্টে থ্রিলারের পাল্লা ভারী। বাংলাদেশের সিরিজ়গুলিও তার ব্যতিক্রম নয়। ‘মহানগর’ একটি পলিটিক্যাল থ্রিলার, যার মুখ্য চরিত্রে মোশাররফ করিম। ‘কাইজ়ার’ও থ্রিলার ঘরানার, মুখ্য চরিত্রে আফরান নিশো। ব্যবসায়িক দিক থেকে থ্রিলার বানানো ‘সেফ’। অবশ্য হিট করানোয় ঝক্কি রয়েছে। কারণ অনেক ধরনের কনটেন্ট আগেই দেখে ফেলেছেন দর্শক। শকির মতে, ‘‘ওটিটিতে দর্শক টাকা দিয়ে দেখছেন। তাঁরা মেনু চান, যেখানে নানা স্বাদের কনটেন্ট থাকবে। থ্রিলার এখন বেশি চলছে। অন্য কনটেন্টও পরে বানাব।’’
বাংলাদেশের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’তে নুহাশ হুমায়ুনের ‘ষ’ সিরিজ়টি প্রশংসিত হয়েছে। এখানে ফ্যান্টাসির সঙ্গে মেশানো হয়েছে হরর। আবার সামাজিক বার্তাও রয়েছে সিরিজ়টিতে।
কনটেন্টের লড়াইয়ে বাংলাদেশের কাছে টলিউড কি পিছিয়ে পড়ছে? মানতে নারাজ সৌম্য মুখোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘‘তা-ই যদি হত, তা হলে পরপর বছরে এত অরিজিনালস আনতে পারত না হইচই। এখানকার শোগুলির মধ্যে ‘দার্জিলিং জমজমাট’, ‘মন্দার’, ‘ইন্দু’, ‘সম্পূর্ণা’, ‘একেনবাবু’ ভাল চলেছে।’’
ভাবনা, গল্প, পরিবেশন সর্বোপরি নতুন কিছু করার অঙ্গীকারেই আপাতত নজরে ও-পার বাংলার ওটিটি কনটেন্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy