টেলিপাড়ায় ফের অশনিসঙ্কেত। সংগৃহীত
আবার টেলিপাড়ায় আশঙ্কার মেঘ। আশঙ্কা বকেয়া পাওনা না মেটানোর। আবার আশঙ্কা কয়েকটিধারাবাহিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার।
কিছুদিন আগেই বকেয়া পারিশ্রমিক না মিটিয়ে বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল প্রযোজক রানা সরকারের বিরুদ্ধে। সেই সমস্যায় আলোড়িত হয়েছিল গোটা টেলিইন্ডাস্ট্রি। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ থেকেফেডারেশন,নড়েচড়ে বসেছিল সবাই। আর্টিস্ট ফোরাম থেকে টেকনিশিয়ান’স গিল্ড জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছিল। এমনকি,ফেডারেশনের বার্ষিক সাধারণ সভারমূল আলোচ্য বিষয় ছিল বকেয়া পারিশ্রমিক আদায়ের দিনক্ষণ ঠিক করা। সেই সমস্যার সমাধান হতে না হতেই সুব্রত রায় প্রোডাকশনস-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বিপুল পরিমাণ বকেয়া পাওনা না মেটানোর।সিরিয়াল পাড়ার হিসেবে শোনা যাচ্ছে, বকেয়া পাওনার পরিমাণ প্রায় ১৪ কোটি টাকা। প্রশ্ন উঠেছে, এই পরিমাণ বকেয়া আদৌ কি মেটাবেন সুব্রত রায়?
‘ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অবইস্টার্ন ইন্ডিয়া’-র (এফসিটিডব্লিউইআই) সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসবললেন, “বকেয়া পাওনার বিষয়টি আমার জানা নেই। যেটা আমি জানি সেটা হল, তিনি টিডিএস জমা দেননি। দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে আমরা বলছি যে টিডিএস যেন তিনি জমা করে দেন। এবং ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন প্রোডিউসারস’ (ডব্লিউএটিপি)-এরসভাপতিকেও আমরা বলেছিলাম যাতে টিডিএস ইমিডিয়েটলি জমা দেওয়া হয়। উনি বলেছিলেন, কিছুটা জমা হয়েছে, কিছুটা বাকি আছে। কিন্তু কাজ বন্ধ করে দেওয়াটা ফেডারেশন সাপোর্ট করে না।”
আরও পড়ুন: বলিউডে তাঁর প্রথম ক্রাশ কে? বলতে গিয়ে লজ্জায় লাল করিনা
আরও পড়ুন:এই ইন্টারনেট সেনসেশনের প্রেমে হাবুডুবু বলিউডের এক স্টার কিড, কে জানেন?
অনেক অডিও-ভিজুয়াল কর্মীর তিন-চার মাসের পারিশ্রমিকও বকেয়া আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বরূপবাবু বলেন, “সেটা নিয়ে আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ নেই এই মুহূর্তে। যাঁদের যাঁদের ছিল তাঁদের ক্লিয়ার হয়ে গেছে।” স্বরূপবাবু জানান, রানা সরকারের কাছে যা বকেয়া ছিলওগুলো তাঁরাপেয়ে গিয়েছেন। তাহলে রানা সরকার কি আবার কাজ শুরু করতে পারবেন? স্বরূপবাবুর জবাব: “না। রানা সরকারের প্রচুর টাকা টিডিএস বাকি আছে। টিডিএস যদি জমা দেন, ফেডারেশনের সঙ্গে যদি আলোচনায় বসতে চান... নিশ্চয় এবার আমরা রানা সরকারের সঙ্গে খুব সতর্কভাবে কাজ করবো যাতে এই সমস্যা ভবিষ্যতে আমাদের ফেস করতে না হয়।”
এই মুহূর্তে সুব্রত রায় প্রোডাকশনস-এর হাতে তিনটি ধারাবাহিক—‘করুণাময়ী রানি রাসমণী’, ‘দেবী চৌধুরানী’ এবং ‘মা মনসা’। প্রাথমিকভাবে ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’ এবং ‘সৌদামিনীর সংসার’, এই দুই ধারাবাহিকের সঙ্গে সুব্রত রায় জড়িত থাকলেও পরে সরে আসেন। এই মুহূর্তে প্রথমটি সুরিন্দর ফিল্মস্-এর ম্যাক্স এন্টারটেনমেন্ট এবং দ্বিতীয়টি জেপি প্রোডাকশনস্-এর হাতে, যার কর্ণধার জয়দেব মণ্ডল।
‘মা মনসা’ ধারাবাহিকও বিশ বাঁও জলে
ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে জানা গিয়েছে,বেশ কিছুদিনধরেই বকেয়া পাওনার কারণে মাঝে মাঝেই শুটিং বন্ধ হয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের কিছু কিছু কর্মী পারিশ্রমিক না পেয়ে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু আর্টিস্ট ফোরাম শুটিং বন্ধ করার আগে সেসব খবর সংবাদমাধ্যমে আসেনি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউনিট সদস্য জানিয়েছেন, তাঁরা কেউ কেউ পোস্ট ডেটেড চেক পেয়েছেন, কারও বা তিন থেকে চার মাসের পারিশ্রমিক বাকি এবং এটা আজকের সমস্যা নয়। এ সমস্যা চলছে লাগাতার। সব মিলিয়ে তাঁরা বকেয়া পাওনার বিষয়ে গভীর অন্ধকারে।
বিপদের মুখে ‘দেবী চৌধুরানী’-ও
স্বরূপবাবুর মন্তব্য: “ফেডারেশন বনধ্-এর বিরোধী। আমরা কোনকিছুই বন্ধ করতে চাই না। আমাদের এমন কিছু টেকনিশিয়ানস আছেন যারা দিন আনে দিন খায়, প্রতিদিন রোজগার না করলে তাঁদের সংসার চলে না। এরকম অবস্থায় ফেডারেশন কখনই কাজ বন্ধ করার পক্ষে নয়।”
আর্টিস্ট ফোরামের সম্পাদক অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় ফোন ধরেননি। আর্টিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকে সপ্তর্ষি রায় বকেয়া পারিশ্রমিক এবং টিডিএস সংক্রান্ত বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত। তিনি বলেন, “আমরা প্রেস রিলিজ রেডি করছি। আপনারা সেটা পেয়ে গেলেই সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।”
গত সোমবার পরিচালকদের সংগঠন থেকে ফেডারেশনে এ বিষয়ে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে বলে খবর। যদিও অভিযোগপত্রেরবিষয়ে মুখ খুলতে চাননি কেউই।বকেয়া পারিশ্রমিক এবং টিডিএস না মেটালে মঙ্গলবার থেকে পরিচালকরা প্রযোজকদের সঙ্গে অসহযোগিতায় যাবেন বলে একটি সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে। সেইসঙ্গে আর্টিস্ট ফোরামও ধর্মঘট চালাবে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবারপর্যন্তমেলেনি বকেয়া পারিশ্রমিক বা টিডিএস। তাহলে ফ্লোরগুলোতে ঠিক কী ঘটছে?
সোমবার সুব্রত রায় প্রোডাকশনস-এর তিনটি ধারাবাহিকের শুটিং শুরু হলেও সন্ধ্যের মধ্যে সবগুলোর শুটিং বন্ধ হয়ে যায়।সুব্রত রায় প্রোডাকশনস-এর তিন ধারাবাহিকের ভবিষ্যৎ কী কেউই জানেন না। কলাকুশলীদের কণ্ঠে হতাশার সুর। পুরো ফ্লোর বিষণ্ণ।ইউনিটের প্রত্যেক সদস্যই হতাশ হয়ে গন্তব্যে ফিরেছেন সোমবার। মঙ্গলবার তিনটি ধারাবাহিকের একটিরও শুটিং হচ্ছে না। ফ্লোরে যখন এই অবস্থা টেলিকাস্টের কী হাল?
‘রানি রাসমণি’র অনুরাগীরা সোমবার দেখতে পারেননি ধারাবাহিকটি। পরিবর্তে ‘জয়ী’ ধারাবাহিকের এক ঘণ্টার এপিসোড চলেছে। ‘দেবী চৌধুরানী’ও সম্প্রচারিত হয়নি। পরিবর্তে ‘ফাগুন বউ’-এর এক ঘণ্টার এপিসোড চালানো হয়েছে।‘মা মনসা’-র ব্যাঙ্কিং ছিল বলে সোমবার সম্প্রচার হতে পেরেছে। মঙ্গলবারের এপিসোডও সম্প্রচারিত হবে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু নতুন এপিসোড তৈরি না হলে বুধবার সম্প্রচার হবে না এই ধারাবাহিকের। তাতে সমস্যাও নেই। কারণ ৩১ অগস্ট –এর পর ধারাবাহিকটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল আগে থেকেই। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাসমণি-র যেটুকু শুটিং হয়েছে সেই ফুটেজ থেকে একটা এপিসোড রেডি করে মঙ্গলবার টেলিকাস্টে ধরানোর তোড়জোড় চলছে বলে একটি সূত্রে খবর। পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে সুব্রত রায়েরই কুঁদঘাটের অফিসে। কিন্তু একটা এপিসোড এখান থেকে তৈরি করা গেলেও নতুন করে শুটিং শুরু না হলে বুধবার থেকে রাসমণির সম্প্রচার চালানো সম্ভব হবে না।এরকম অবস্থায় দাঁড়িয়ে কলাকুশলী, টেকনিশিয়ানস কেউই জানেন না ঠিক কী হতে যাচ্ছে। মানে মঙ্গলবার থেকে আদৌ রাসমণি বা ‘দেবী চৌধুরানী’-র টেলিকাস্ট দেখা যাবে কিনা কেউই নিশ্চিত নন।
‘করুণাময়ী রানি রাসমণি’ ধারাবাহিকের সম্প্রচার বন্ধ
এদিকে এক সূত্র অনুযায়ী কলাকুশলী ও টেকনিশিয়ানদের কাছে খবর এসেছে যে সুব্রত রায়ের অফিসে আয়কর দফতরঅভিযান চালায়।মঙ্গলবার আর একটি সূত্র জানাচ্ছে,আগামী শুক্রবার আয়কর দফতরে সুব্রত রায়কে হাজিরা দেওয়ার জন্য নোটিস পাঠানো হয়েছে।এ খবর ভুয়ো না সত্যি কেউ নিশ্চিত নন। এরকম পরিস্থিতিতে কী সিদ্ধান্ত নেবেন ইউনিট সদস্যরা? যদিও সুব্রত রায়েরহ সঙ্গে টেলিফোনেযোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,“পেমেন্ট ডিউ আছে, আজকালের মধ্যে হয়ে যাবে।”মানে মঙ্গল বা বুধবারের মধ্যে বকেয়া পারিশ্রমিক ও টিডিএস মিটিয়ে দেবেন?সুব্রতবাবু বলেন, “হ্যাঁ।” আয়কর দফতর থেকে হাজিরা দেওয়ার জন্য আপনাকে নোটিস পাঠানো হয়েছে?সুব্রতবাবু বলেন, “আমার কাছে এরকম কিছু আসেনি।” তাঁর দফতরেআয়কর হানার খবরও অস্বীকার করেন সুব্রতবাবু।তাহলে শুটিং কবে থেকে শুরু হচ্ছে?সুব্রতবাবুর উত্তর: “শুটিং আজ থেকেই শুরু হয়ে যাবে... বিকেল থেকে।”কিন্তু এখনওপর্যন্ত যা খবর তাতেতাঁর কোনও সিরিয়ালের শুটিং শুরু হয়নি।সুব্রতবাবুর মন্তব্য: “হবে...শুরু হয়ে যাবে।”
আদৌ কি বকেয়া পাওনা পাবেন কলাকুশলী ও টেকনিশিয়ানস? ফের কি শুরু হবে শুটিং? ‘করুণাময়ী রানি রাসমণি’র মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকও সঙ্কটে। এই পরিস্থিতিতেফেডারেশন, আর্টিস্ট ফোরাম এবং চ্যানেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কী হবে বোঝা যাবে আগামী কয়েক দিনেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy