মনোজ বাজপেয়ী।
বাঁচা আর মরার মধ্যে নাকি এক চুল তফাৎ ছিল। সেই চুলচেরা ফারাকটুকুই নাকি মৃত্যুর মুখ থেকে জীবনের পথে ফিরে আসতে সাহায্য করেছে মনোজ বাজপেয়ীকে। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যু এত জোর ধাক্কা দিয়েছে সবাইকে, যার জেরে বলি-টলির অনেক তারকাই ফিরে দেখেছেন নিজেদের অতীত। সোশ্যালে ভাগ করে নিচ্ছেন সেই অভিজ্ঞতা।
সুশান্তের মৃত্যুকে আরও অনেকের মতোই সহজ ভাবে নিতে পারেননি মনোজও। সেই সূত্রে ‘হিউম্যানস অফ বম্বে’-কে দেওয়া খুব সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে মন খুলেছেন অভিনেতা।
কতখানি স্ট্রাগল করতে হয়েছিল মনোজকে? এই প্রশ্নে মনোজের জবাব, ‘‘জিজ্ঞেস করুন, কতটা নয়! চার বছর এক বেলা খেয়ে, এক ঘরে পাঁচ বন্ধুর সঙ্গে থেকে, ইন্ডাস্ট্রি থেকে রোজ গলা ধাক্কা খেতে খেতে একটাই জেদ ধরে রেখেছিলাম। আমি অভিনেতা হবই।’’
যাঁর এত জেদ তিনি আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন কেন? ফিরতি জবাব অভিনেতার, ‘‘ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামাতে তিন বার অ্যাপ্লাই করার পরেও মনোনীত হইনি। কোথাও, কোনও কাজ নেই। একটা বড়া পাও কিনে খাব, সেই পয়সাও থাকত না পকেটে। এর পরেও আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসবে না?’’
বেঁচে গেলেন কী ভাবে? এর পুরো কৃতিত্বই মনোজ দিয়েছেন তাঁর সেই সময়ের বন্ধুদের। তাঁরা সারাক্ষণ চোখে চোখে আগলাতেন মনোজকে। যাতে উল্টো-পাল্টা কিছু করে না বসেন তিনি। তাই যত বার তিনি নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তত বার ধরা পড়ে গেছেন বন্ধুদের কাছে। কখনও মনোজকে একা থাকতে দিতেন না, কোথাও একা ছাড়তেন না তাঁরা।
বিহারের কৃষকের সন্তান মনোজরা পাঁচ ভাই। ৯ বছর বয়স থেকে অমিতাভ বচ্চনের ছবি দেখতে দেখতে ঠিক করেন তিনিও অভিনেতা হবেন। সেই স্বপ্নের তাড়নায় মাত্র ১৭ বছর বয়সে পড়া ছেড়ে, বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক করতেন শুরুতে। শুধু বাবাকে একটি চিঠিতে জানিয়ে এসেছিলেন, তিনি কোথায়, কী করছেন।
অবাক কাণ্ড! বাবা ছেলের এই কীর্তিতে রাগ না করে ২০০ টাকা মানি অর্ডার করে পাঠিয়েছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি ভরার জন্য।বাড়ির লোকেদের চোখে মনোজ ততদিনে ‘গুড ফর নাথিং’। মনোজ নিজে কিন্তু হাল ছাড়েননি। এ ভাবেই একদিন চায়ের দোকানে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন তিগমাংশু ধুলিয়া আর শেখর কপূর। 'ব্যান্ডিট কুইন' ছবিতে অভিনয়ের জন্য। কিন্তু সেখানেও সুবিধে করে উঠতে পারেননি তিনি। ফলে, প্রথম দিনেই তাঁকে বের করে দেওয়া হয় সেটের বাইরে।
এর পর মহেশ ভট্টর একটি টেলি সিরিয়ালে নিয়মিত কাজের সুযোগ পান মনোজ। অভিনেতার ভাষায়, ‘‘সেটাই ছিল আমার প্রথম রোজগার। প্রতি পর্ব পিছু দেড় হাজার টাকা।’’ ওই ধারাবাহিকে কাজ করতে করতেই অন্য পরিচালকদের চোখ পড়ে তাঁর উপর। শেষমেশ ‘সত্য’ ছবি জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। মনোজ উবাচ, ‘‘ওই ছবির রোজগারেই প্রথম নিজের বাড়ি কিনি।’’
আরও পড়ুন- ‘শ্রীময়ী-রোহিতরা এক হয় না, মা-কাকিমার প্রেমিক ফিরলে মানতে পারবেন সবাই?’
লকডাউনেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে মনোজের নতুন ছবি ‘ভোঁসলে’। দর্শকেরা তো বটেই, সমালোচকেরাও প্রশংসা করেছেন অভিনেতার।
তার পরেও কিন্তু মুম্বই নগরী নিয়ে মনোজের আক্ষেপ, ‘‘বি টাউন আউটসাইডারদের একটুও রেয়াত করে না। আমিও তো সুশান্তের মতোই এখানে ‘বাইরের লোক’ ছিলাম। তাই আমাকে জমি ছাড়ার আগে নিংড়ে নিয়েছে মায়া নগরী, ভাল মতো।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy