অনেক বছর পরে মনোজকে একটি নাটকে অভিনয় করতে বলা হয়। যাতে চরিত্রাভিনয়ের মধ্যে দিয়ে প্রতিহিংসা মেটান তিনি। ফাইল চিত্র
নাচতে খুব ভাল লাগত মনোজ বাজপেয়ীর। সে কথা নানা সময়ে জানিয়েছেন ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ অভিনেতা। তবে তাতে মিশেছিল ক্ষোভ। বিহারের গ্রামে জন্ম তাঁর। ছোটবেলায় নাচ শেখার ইচ্ছাপ্রকাশ করলে হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন গুরুজনেরা। কারণ, পুরুষরা নাচলে সে গ্রামে তাঁদের রূপান্তরকামী বা সমকামী বলে ধরে নেওয়া হত। ‘মেয়েলি পুরুষ’ তকমা দিয়ে অসম্মান করা হত।
তবে ভাল লাগাকে প্রশ্রয় না দিয়ে থাকতে পারেননি মনোজ। লুকিয়ে লুকিয়ে যাত্রাপালা, নাটক দেখতেন। মুগ্ধ বিস্ময়ে চেয়ে থাকতেন মহলায়, নাচ তুলে ফেলতেন।
সহ-অভিনেতা সয়াজি শিন্ডের সঙ্গে এক কথোপকথনে, মনোজ সম্প্রতি অতীতের কিছু সুখস্মৃতি ফিরে দেখলেন। গোপনে নাচের অনুষ্ঠান দেখেছিলেন সে বারও। তার কয়েক বছর পর নাটকের একটি চরিত্রে সে ভাবেই নেচে প্রশংসা পান। থিয়েটারের জগতেও খ্যাতি অর্জন করেন। কিন্তু বেঁকে বসে গ্রামের লোক।
মনোজের কথায়, “আমাদের গ্রামে রামলীলা হতো। তবে অভিনয় তখন খুব একটা সম্মানজনক পেশা ছিল না বিহারের গ্রামে। তারা একে বলত ‘ভাণ্ড’। আমি যে অভিনেতা হতে চাই, তা বলতেও পারিনি। স্কুলের পর নাটক করতে পারিনি, রামলীলাও করতে পারিনি। আমার পরিবার রক্ষণশীল ছিল। আমি একবার শিস দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম, তখনই আমার কাকা এসে আমাকে পিছন থেকে মারধর করল। আমি নিজে যেমন চেয়েছিলাম, তেমন হতে পারিনি। এমনকি নাটক দেখতে গেলেও আমাকে লুকিয়ে থাকতে হত।” মনোজ আরও জানান, তাঁদের গ্রামে ‘নাচ’ নামের এক অনুষ্ঠানের চল ছিল। যেখানে এক জন পুরুষ এক জন মহিলা হিসাবে অভিনয় করেন, কারণ মহিলাদের তখন অভিনয় করার অনুমতি ছিল না। কিন্তু যে পুরুষরা নাচ করতেন, তাঁদের সমকামী বলে ধরে নেওয়া হত।
অভিনেতার কথায়, “স্থানীয় ভাষায় ‘লউন্ডা নাচ’ বলে। আমি সেটা দেখার জন্যই লুকিয়ে থাকতাম।”
অনেক বছর পরে মনোজকে একটি নাটকে অভিনয় করতে বলা হয়। যাতে চরিত্রাভিনয়ের মধ্যে দিয়ে প্রতিহিংসা মেটান তিনি। ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। এর পর সিনেমাতেও পা রাখেন তিনি। তবু দিনের শেষে মনোজ এখনও স্বীকার করে নেন, সেই ‘নাচ’ অনুষ্ঠানগুলিই তাঁর আত্মবিশ্বাস মজবুত করেছে। যা কিছু শিখেছেন, ওখান থেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy