Manav Kaul established himself as a strong actor after struggling years dgtl
Bollywood
নর্মদায় ঝাঁপ দিয়ে পয়সা তুলতেন, লজেন্সের দোকান চালানো এই অভিনেতা সফল ‘বিদ্যার স্বামী’ হিসেবেও
বাবা মায়েরও বিশেষ প্রত্যাশা ছিল না মানবের কাছ থেকে। জানতেন, ছেলে বেশি দূর এগোবে না পড়াশোনায়।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২১ ১১:৩১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
জাতীয় স্তরের সাঁতারু ছিলেন। সরকারি চাকরির সুযোগ ছিল প্রচুর। কিন্তু সে সব উপেক্ষা করে পা রেখেছিলেন অভিনয় জগতে। প্রথম দিকে অভিনয় করতেন ছোটখাটো ভূমিকায়। পরিশ্রমের বহু পর্ব পেরিয়ে আজ তিনি বলিউডে প্রতিষ্ঠিত। পাশাপাশি তিনি লেখক এবং পরিচালকও। থিয়েটার জগতেও আজ মানব কৌল গুরুত্বপূর্ণ নাম।
০২২০
কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারের সন্তান মানবের জন্ম কাশ্মীরে। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনাও উপত্যকার স্কুলে। কিন্তু তার পর কাশ্মীরের পরিস্থিতি ক্রমে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বাধ্য হয়ে কৌল পরিবার চলে যায় মধ্যপ্রদেশের ছোট শহরে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন মানবের বাবা।
০৩২০
পড়াশোনায় মন ছিল না কোনওদিনই। স্কুলে পরিচয় ছিল পিছিয়ে পড়া দুর্বল ছাত্র হিসেবেই। বাবা মায়েরও বিশেষ প্রত্যাশা ছিল না মানবের কাছ থেকে। জানতেন, ছেলে বেশি দূর এগোবে না পড়াশোনায়।
০৪২০
তবে ছোট থেকেই মানব উপার্জনের জন্য নানারকম চিন্তাভাবনা করতেন। কখনও বন্ধুদের সঙ্গে লজেন্সের দোকান খুলছেন। কখনও আবার ঘুড়ির মরসুমে বসে পড়তেন ঘুড়ির দোকান সাজিয়ে।
০৫২০
এক বার তো মানব নিজের পাড়ায় নাচের দলও খুলে ফেললেন। দাবি করতেন, তিনি ব্রেক ডান্স জানেন। ৫০ টাকার বিনিময়ে নাচ শেখাতেন। অংশ নিতেন স্থানীয় অঞ্চলের বিভিন্ন অনু্ঠানেও। সে ক্ষেত্রে অবশ্য বাড়িয়ে নিতেন পারিশ্রমিক।
০৬২০
মধ্যপ্রদেশে মানবের শৈশব কেটেছিল নর্মদা নদীকে ঘিরে। নদীতে পুণ্যার্থীরা পয়সা ফেলতেন। মানব এবং তার বন্ধুরা নদীতে ডুব দিয়ে সেই পয়সা তুলে আনতেন। ঝুঁকির এই কাজই ছিল তাঁদের মনোরঞ্জন। সে সময়েই এক সাঁতার প্রশিক্ষকের চোখে পড়ে যান মানব।
০৭২০
তিনি তিল তিল করে তৈরি করেন মানবকে। পরে জাতীয় স্তরে মধ্যপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। সে সময় দু’বছর তিনি ভোপালে ছিলেন। খেলার কোটায় সরকারি চাকরির সুযোগও পান মানব। কিন্তু জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় একটি নাটক। সেটি দেখার পরে মানব ঠিক করেন তাঁকে অভিনেতা হতেই হবে।
০৮২০
ধীরে ধীরে সাঁতার চলে যায় পিছনের আসনে। মানবের জীবনে মুখ্য হয়ে ওঠে অভিনয়। ভোপালে থাকার সময় তিনি ফ্লপি বিক্রির কাজ করতেন। বেতন পেতেন ৮০০ টাকা। তার থেকে ঘরভাড়া দিতেন ৪০০ টাকা। বাকি টাকায় অন্যান্য খরচ চালাতেন। দিনভর চাকরির পরে যখন সন্ধ্যায় নাটকের মহড়ায় অংশ নিতেন, মানবের সব পরিশ্রম দূর হয়ে যেত।
০৯২০
কিছু দিন এ ভাবে চলার পরে মানব বুঝলেন ভোপালে পড়ে থাকলে কিছু হবে না। তিনি মুম্বই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। টিকিটের টাকা জোগাড় করতে বিক্রি করে দেন নিজের বাইক। ১৯৯৭ সালে ভোপাল থেকে মুম্বই চলে যান তিনি। নতুন শহরে মাথা গোঁজার জায়গা ছিল না। বন্ধুদের সঙ্গে ঘর ভাড়া করে থাকতেন মানব।
১০২০
তিনি মুম্বই পৌঁছবার কিছু দিন পরেই গুলশন কুমারের হত্যারহস্যে উত্তাল হয়ে ওঠে বিনোদন দুনিয়া। ব্যাপক পুলিশি ধরপাকড় থেকে রেহাই পাননি মানব ও তাঁর বন্ধুরাও। তাঁদের সকলকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। এক রাত থানায় কাটাতে হয়েছিল তাঁদের।
১১২০
ভুল বুঝতে পেরে পরের দিন তাঁদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। এসেই এই ভীতিজনক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার পরেও হাল ছাড়েননি মানব। থেকে গিয়েছিলেন মুম্বইয়ের মাটি কামড়ে। সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছিলেন অভিনয়ের চেষ্টা। দীর্ঘ দিন চেষ্টার পরে ফল পেলেন মানব। সানি দেওলের ‘চ্যাম্পিয়ন’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ এল।
১২২০
প্রথম ছবিতেই জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হলেন তিনি। সামান্য পারিশ্রমিকের জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল সন্ধ্যা অবধি। এর পরই তিনি ঠিক করেন হিন্দি ছবিতে জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে আর কাজ করবেন না। তার থেকে বেছে নেবেন থিয়েটারের মঞ্চ।
১৩২০
সত্যদেব দুবের ওয়ার্কশপে সুযোগ পান মানব। পৃথ্বী থিয়েটারে সে সময় নিয়মিত অভিনয় করতেন তিনি। কাজের সূত্রে পরিচয় হয়েছিল ইরফান খানের সঙ্গে। প্রথম কাজের সুযোগও পান ইরফানের দৌলতেই। টেলিভিশনে ‘বনেগি আপনি বাত’ ধারাবাহিকের কিছু পর্বে অভিনয় করেছিলেন মানব।
১৪২০
এর পর তিনি অভিনয় করেন ‘যযন্তরম মমন্তরম’ ছবিতে। কিন্তু ছবিতে অভিনয় করেও তৃপ্তি পাচ্ছিলেন না মানব। মনে হচ্ছিল, চরিত্রগুলি চিত্রনাট্যে যেমন থাকছে, সে ভাবে রূপায়িত হচ্ছে না। ছবি থেকে সরে এসে এ বার তিনি লিখতে শুরু করলেন।
১৫২০
তাঁর লেখা নাটক ‘শক্কর কে পাঁচ দানে’ অনূদিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। বহু বার পৃথ্বী থিয়েটারের মঞ্চে অভিনীতও হয়েছে। মানবের লেখা আর একটি নাটক ‘পিলে স্কুটারওয়ালা আদমি’ নাটকও পুরস্কৃত।
১৬২০
লেখার পাশাপাশি নাটক পরিচালনাও করতেন তিনি। ২০১২ সালে তিনি ‘হংস’ ছবি পরিচালনা শুরু করেন। সে সময় সম্বল ছিল মাত্র ১২ হাজার টাকা। শেষ অবধি ছবিটি শেষ করতে খরচ হয়েছিল ৫ লাখ টাকা। এই খরচ জোগাড় করতে বিশেষ পরিশ্রম করতে হয়নি মানবকে। তাঁর প্রতিভার কথা জেনে অনেকেই সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন।
১৭২০
২০১৩ সালে মুক্তি পায় ‘কাই পো চে’। ছবিতে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের পাশাপাশি দর্শকদের নজর কেড়ে নেন রাজকুমার রাও এবং মানব কৌলও। এই ছবিই বলিউডে মানবকে নিয়ে আসে প্রচারের বৃত্তে। অথচ এই ছবিতে প্রথমে সুযোগ পাননি তিনি। পরে তাঁর অডিশন দেখে মত বদলান পরিচালক অভিষেক কপূর।
১৮২০
‘সিটিলাইটস’, ‘ওয়াজির’ ছবিতেও মানবের অভিনয়ও পছন্দ করেছিলেন দর্শক। পরিচালক বিজয় নাম্বিয়ার তো মানবকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, যাতে তিনি ‘ওয়াজির’ ছবিতে নিজের মতো করে অভিনয় করতে পারেন। ছবিতে মানব তাঁর বলিষ্ঠ অভিনয়ে পাল্লা দিয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গেও।
১৯২০
মানবের সবথেকে বেশি বাণিজ্যসফল ছবি ‘তুমহারি সুলু’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১৬ সালে। ছবিতে বিদ্যা বালন অর্থাৎ সুলোচনা বা সুলুর স্বামীর ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ছবিতে বিদ্যা বালনের মতো অভিনেত্রীর পাশেও যথেষ্ট উজ্জ্বল লেগেছিল মানবকে।
২০২০
এর পর ‘বদলা’, ‘থাপ্পড়’, ‘নেলপলিশ’-সহ পর পর বেশ কিছু ছবিতে মানবের অভিনয় তাক লাগিয়ে দেয়। বলিউডে সাফল্য পেলেও থিয়েটারের মঞ্চ ছেড়ে দেননি মানব। তিনি চান, মাধ্যম নির্বিশেষে তাঁর পরিচয় হোক একজন ভাল অভিনেতা হিসেবে।