‘ভাগ্যলক্ষ্মী’ ছবির একটি দৃশ্যে শোলাঙ্কি রায় এবং ঋত্বিক চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।
দৃশ্য ১. গোল গলার প্যাস্টেল শেডের টি শার্ট, জিন্স, চশমা— নামজাদা এক ফাইভ ষ্টার হোটেলের সুইমিং পুলের ধারে ঋত্বিক চক্রবর্তী এমনই সাজে! তাঁর বসে থাকার কারণ জানলে আরও চমকে যাবেন। একটু পরেই তিনি হোটেলের ডিস্কো থেকে যাবেন!
দৃশ্য ২. একই হোটেলে ঋত্বিক যতখানি অলস মেজাজে শোলাঙ্কি রায়ের ততটাই তাড়া! হলুদ গেঞ্জি টপ, সাদা পালাজোতে সেজে তিনি ছটফট করছেন, কখন বেরোবেন! মুখোমুখি হতেই বলে উঠলেন, “আঙুলের কী দশা! নখের মেরামত দরকার। সময় দিয়ে রেখেছি। বেরোতেই পারছি না।!” অভিনেত্রীর ডিস্কো থেকের প্রতি আগ্রহই নেই।
বিষয়টা আরও ভাল করে বুঝতে পায়ে পায়ে কিছুটা এগোতেই সামনে পরিচালক মৈনাক ভৌমিক। তিনিই সবটা ফাঁস করলেন। জানালেন, তাঁর আগামী ছবি ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’-র শেষ শুটিং চলছিল। শোলাঙ্কির কাজ শেষ। তাই তাঁর বাড়ি যাওয়ার তাড়া। ঋত্বিকের তখনও শুটিং বাকি। পরের শটের ফাঁকে হালকা জিরিয়ে নিচ্ছেন।
এই সেটে সে দিন আমন্ত্রিত আনন্দবাজার অনলাইন। 'ভাগ্যলক্ষ্মী' কার ভাগ্য বদলাবে?
প্রশ্ন রাখতেই পরিচালকের সহাস্য জবাব, “আমাদের, ছবির, ছবির সঙ্গে জড়িত সকলের, বাংলা বিনোদন দুনিয়ারও হয়ত। এর বেশি আপাতত কিছু বলব না। বাকিটা পর্দা বলবে।” প্রেমের ছবি থেকে সোজা রহস্য রোমাঞ্চ ছবি। মৈনাক বড় হয়ে গেলেন? একটুও না ভেবে জবাব দিলেন, “অনেক মিষ্টি প্রেমের গল্প বলেছি। চারপাশটা অত মিষ্টি আর নেই। লোকে খুন হয়ে যাচ্ছে। কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হচ্ছে। মেরে, টুকরো করে ফ্রিজে ভরে রাখা আজকের দিনে কোনও ব্যাপার! এ সব দেখার পর আর প্রেমের গল্প আসে?”
পায়ে পায়ে সেখানে ঋত্বিক। আলোচনায় যোগ দিলেন তিনিও। ছবিতে তিনি সাংবাদিকের চরিত্রে। সে কথা উল্লেখ করতেই দাবি, "আমি একটি খবর বের করতে চাইব। কিন্তু সেটি বের করতে দেওয়া হবে না। সংবাদিক হিসেবে আমার ভূমিকা এটুকুই।" এর থেকেও বেশি জায়গা করে নেবে এক মধ্যবিত্ত দম্পতির জীবন। সেই দম্পতির এক জন ঋত্বিক, অন্য জন শোলাঙ্কি। এই প্রথম এই জুটিকে পর্দায় দর্শক দেখতে চলেছেন।
প্রেম করার সুযোগ পেলেন? অভিনয় করতে গিয়ে কী দেখলেন, শোলাঙ্কি কেমন বৌ? বলতেই হাসি ছবির নায়কের। তাঁর কথায়, "মৈনাক একটুও প্রেম করতে দেয়নি! টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত দম্পতি। আমার এক বন্ধু আমাদের বাড়িতে এসে রহস্যজনক ভাবে মারা যাবে। তাতে জড়িয়ে পড়ব আমরা। জোট বেঁধে নিজেদের মুক্ত করার চেষ্টাও করব। এত সমস্যা যেখানে সেখানে প্রেম কোথায়?"
এটা একটা দিক। এরই সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে চলবে বর্তমান টলিউড কথা। যেখানে দেখা যাবে স্বস্তিকা দত্তকে। এখনকার বাংলা বিনোদন দুনিয়ার সমস্যা দেখানো হবে? মৈনাক বললেন, “পেশী আস্ফালন বর্তমান বাংলা বিনোদন দুনিয়ার বড় সমস্যা। আমার ছবি সেই দিক দেখাবে।”
একটু দূরে উপস্থিত বাকি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন শোলাঙ্কি। এই প্রথম তিনি মৈনাকের ছবিতে, ঋত্বিকের বিপরীতে। মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, “গর্ব হচ্ছে। ঋত্বিকদার মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করা স্বপ্নের মতো। মৈনাককেও অনেক দিন ধরে বলছিলাম, কবে আমরা একসঙ্গে কাজ করব? অবশেষে হল।” ঋত্বিকের বিপরীতে অভিনয় ভয়ের? বাড়িতে অভ্যেস করেছেন? শোলাঙ্কির দাবি, তিনি কখনও আলাদা করে কিছুই অভ্যাস করেন না। চিত্রনাট্য পড়েন। পরিচালকের কথা শোনেন। আর ক্যামেরার সামনে নিজেকে ১০০ শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করেন। এও জানাতে ভুললেন না, তিনিও মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে। ফলে, সেই অনুভূতি নিজের চরিত্রে বুনে দিয়েছেন। বললেন, “ঋত্বিকদার সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁরা জানেন, খুবই সহযোগিতা করেন। দৃশ্য খেয়ে নেন না। কাজ করে এত আরাম যে কাজ কখন হয়ে যেত টের পেতাম না!”
আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে বর্তমান শহর জর্জরিত। কাজ করতে গিয়ে সে সব নিয়ে আপনাদের কথা হত? “অবশ্যই হত। আমরা পুরো ঘটনা বিশ্লেষণ করতাম। নিজেদের মত বিনিময় করতাম। তবে সবটাই হত কাজের ফাঁকে।” দাবি, তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যু তাঁদের মনে এতটাই বিষাদ তৈরি করেছিল যে তার থেকে বেরোনোর উপায় ছিল এই শুটিং বা কাজ। এঁরা ছাড়াও ছবিতে আছেন সুজন নীল মুখোপাধ্যায়, লোকনাথ দে, দেবপ্রিয়র মতো অভিনেতারা।
পরের শট তৈরি। শোলাঙ্কি কথা শেষ করে বাড়ির দিকে দৌড়! অনেক দিন পরে নিজের একটু যত্ন নেবেন। বাইরে মেঘ আর সন্ধ্যা হাত ধরাধরি করে ঘন হয়ে উঠছে। আয়নার সামনে সামান্য টাচ আপ। ঋত্বিক মন্থর পায়ে ডিস্কো থেকের পানে। ওখানে নিয়ন আলোয় সন্ধ্যা রঙিন, ঝলমলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy