Advertisement
E-Paper

এই শহরে তো বাবাকে নিয়ে কিছুই হয়নি! তাঁকে ঘিরে থাকা স্বপ্নগুলো যেন বাইরে চলে না যায়

সোমবার জাদুকর পি সি সরকার সিনিয়রের মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনে বাবার স্মৃতিচারণ এবং বাবাকে ঘিরে তাঁর স্বপ্নের কথা লিখলেন পুত্র প্রদীপচন্দ্র সরকার।

image of magician P C Sorcar Senior

জাদুকর পি সি সরকার সিনিয়র। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

পি সি সরকার (জুনিয়র)

পি সি সরকার (জুনিয়র)

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:৩৭
Share
Save

আজ বাবার মৃত্যুদিন। ৫৩টি বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু আজও বাবা আমার খুব কাছেই রয়েছেন। আমার তো মনে হয়, তিনি সব সময়েই আমাকে খুব কাছ থেকে দেখছেন। কারণ আজ আমি যেখানে রয়েছি, তার সবটাই তো আমার বাবার দৌলতে।

বাবার কর্মকাণ্ড বৃহৎ। তা নিয়ে আজ লিখতে চাই না। তার চেয়ে বরং বাবাকে নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা, কিছু স্বপ্নের কথা লিখি। বাবা আমাকে শুরুতে ম্যাজিক দুনিয়ায় আসতে দেননি। কারণ তিনি ভাবতেন, এ সব করলে ছেলের আর পড়াশোনা হবে না। আমার তখন বছর দশেক বয়স। বাবা বাড়িতে ‘অল ইন্ডিয়া ম্যাজিশিয়ানস্‌ ক্লাব’ চালাতেন। পরে সেটার নাম দিয়েছিলেন ‘অল ইন্ডিয়া ম্যাজিক সার্কল’। প্রতি মাসের শেষ শনিবার সেখানে এসে উপস্থিত হতেন নানা প্রান্তের জাদুকরেরা। তাঁরা ম্যাজিক দেখাতেন। ম্যাজিক নিয়ে চর্চা হত। আর আমি সকলকে চা দেওয়ার বাহানায় একটা ট্রে-তে কাপ সাজিয়ে নিয়ে বাবার অফিসে ঢুকতাম। খুব ধীরে ধীরে চা দিতাম। কাছ থেকে ম্যাজিক দেখার সুযোগ পাওয়া যেত। আর ওই চায়ের থেকে লুকিয়ে এক কাপ চা আমিও খেয়ে নিতাম। তখন আমাদের বাড়িতে ছোটদের চা খাওয়ার নিয়ম ছিল না। সারা দিনে আমি তিন-চার কাপ চা খেয়ে নিতাম। তার পর রাতে আর ঘুম আসত না। অন্ধকার ঘরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে সারা দিনের দেখা ম্যাজিকের কথা ভাবতাম।

Magician P C Sorcar junior remembers his father P C Sorcar Senior on his 53rd death anniversary

মঞ্চে খেলা দেখাচ্ছেন পি সি সরকার সিনিয়র। পিছনে সহকারীর ভূমিকায় পুত্র প্রদীপ। ছবি: সংগৃহীত।

১৯৭১ সালের ০৬ জানুয়ারি। জাপান থেকে বাড়িতে ফোন এল— বাবা আর নেই! আমার জীবনের অন্যতম কঠিন একটা দিন। নিজের গুরু, সব থেকে প্রিয় মানুষকে হারালাম। আমারও জীবনের পেশাগত যাত্রা শুরু হল। আজ সেই দিনটার কথা বেশি করে মনে পড়ে। আমার তো মনে হয়, আমার নাম পি সি সরকার জুনিয়র রাখা ভুল। আমার নাম হওয়া উচিত ছিল ‘পি সি সরকার কন্টিনিউয়েশন’। কারণ আমি বাবারই আরও একটা অংশ।

প্রত্যেক বছর আজকের দিনটায় বালিগঞ্জের ‘ইন্দ্রজাল ভবন’-এ বাবার অফিসে বসে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটাই। চেষ্টা করি নিজের মতো লেখালিখি করতে। চেষ্টা করি বাবার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোকে মনে করতে, তাঁর রেখে যাওয়া জিনিসপত্রগুলি একটু নেড়েচেড়ে দেখতে। তার মধ্যে দিয়েই যেন বাবাকে আরও একবার অনুভব করতে পারি। পরিবারের সকলেই উপস্থিত থাকেন। এ বারেও তার অন্যথা হয়নি।

বাবার মৃত্যুদিনে দেশ-সহ সারা বিশ্বের ম্যাজিক সোসাইটি থেকে প্রচুর ফোন আসে। কোথায়, কী ভাবে তাঁকে স্মরণ করা হচ্ছে, সে ছবি এবং ভিডিয়ো পাঠান অনেকেই। আমার খুব ভাল লাগে। কিন্তু আমরা বাঙালিরাই হয়তো বাঙালিকে সব সময় মনে রাখি না। বাবাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। দীর্ঘ দিনের ইচ্ছে তাঁকে নিয়ে একটি জাদুঘর তৈরির। ‘ইন্দ্রজাল ভবন’ বাবা আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সেখানে আমার অংশে বাবার অফিস রয়েছে। নীচের তলায় ‘মাদারি মঞ্চ’ রয়েছে। তাই ওই বাড়িতে বাবার সব জিনিসপত্র আঁটবে না।

Funeral procession of Magician P.C. Sorcar Jr.

১৯৭১ সালে কলকাতায় শেষযাত্রায় পি সি সরকার সিনিয়রের মরদেহ। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

আমাদের বারুইপুরের বাড়িতে আমি ধীরে ধীরে বাবাকে নিয়ে একটা সংগ্রহশালা তৈরির কাজ শুরু করেছি। ওখানে বাবার নামে একটা মঞ্চও তৈরি করেছি। সংলগ্ন বাড়িটিকে বাবার স্মৃতিতে সংগ্রহশালা হিসাবে তৈরি করতে চাইছি। বাবার জন্য এখনও আমি রাজ্য সরকারের তরফে কোনও রকম সাহায্য পাইনি। তারা কোনও ভাবে উদ্যোগী হয়েছে বলেও জানি না। আসলে এখানে অনেক আওয়াজ তো! তাই হয়তো বিষয়টা এখনও তাঁদের কানে গিয়ে পৌঁছয়নি। এই শহরে বাবার নামে একটা রাস্তার নামকরণ হয়েছে মাত্র। কিন্তু একডালিয়া রোডে এখন দুর্গাপুজোর এমন প্রতিপত্তি, যার ফলে কোথাও বাবার নামটার আর গুরুত্ব নেই। যেখানে পি সি সরকার সিনিয়রের অন্তত একটা আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা যেত, সেখানে শুনেছি ক্লাবঘর তৈরি হয়েছে!

দুঃখের বিষয়, বাবাকে নিয়ে সংগ্রহশালা তৈরির জন্য বাংলার তুলনায় অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, কর্নাটক সরকার অনেক বেশি উৎসাহী। সে রাজ্যের সরকার আমাকে জমিও দিতে আগ্রহী। আমরা তো ও পার বাংলা থেকে এ খানে এসেছিলাম। বাংলাদেশে আমাদের পৈতৃক বাড়িটিতে বাবার নামে একটি জাদুঘর তৈরির বিষয়ে উদ্যোগ শুরু হয়েছে। তাঁরা আমার থেকে বাবার বেশ কিছু পোস্টার, হাতের লেখা এবং বাবার ব্যবহৃত জিনিসপত্র চেয়েছিলেন। আমি কিছু দিয়েও দিয়েছি। কী আর করা যাবে! এখন শুধু ভয় হয়, বাবাকে ঘিরে আমার স্বপ্নগুলো যেন বাংলার বাইরে না-চলে যায়। আর চলে গেলেও আমি তো নিরুপায়। আমি তো কারও হাতে-পায়ে ধরতে পারব না। কাউকে অনুরোধ করব না। কারণ পি সি সরকার সিনিয়র তো শুধু আমার বাবা নন, তিনি সর্বজনীন এক ব্যক্তিত্ব। আমাদের সকলের। তাই সকলে মিলে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে, তখন দেখা যাবে।

(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত।)

pc sorcar PC Sorcar Junior Magician Interview tribute Memory Death Anniversary

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।