Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Lookback 2022

আমাদের বিচারে ২০২২ সালের সেরা ৫ বাংলা ছবি

চলে-যাওয়া বছরে মুক্তি পাওয়া বাংলা ছবির সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু ভিড়ের মাঝেও ছিল এমন কয়েকটি ছবি, যারা বহুল প্রশংসিত এবং পাশাপাশিই বক্স অফিসেও সফল।

২০২২ সালে  দর্শকদের পছন্দ ও বক্স অফিসের নিরিখে শীর্ষে যে ৫ ছবি।

২০২২ সালে দর্শকদের পছন্দ ও বক্স অফিসের নিরিখে শীর্ষে যে ৫ ছবি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:০৯
Share: Save:

ছবি আসে, ছবি যায়। কিন্তু খুব কম ছবির সঙ্গে জুড়ে যায় ‘হিট’ এর তকমা। দর্শকের সেই ছবি পছন্দ হলে বক্স অফিসে মেলে লক্ষ্মীর আশীর্বাদ। বিগত বছরে সেরা ৫ বাংলা ছবি—

অনীক দত্ত পরিচালিত ‘অপরাজিত’ ছবির একটি দৃশ্য।

অনীক দত্ত পরিচালিত ‘অপরাজিত’ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।

১. অপরাজিত: বছরের সেরা ছবির তালিকায় স্বাভাবিক পছন্দ ‘অপরাজিত’। সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি ‘পথের পাঁচালী’ ছবিটি তৈরির নেপথ্যের অজানা আখ্যানই ছবির মূল উপজীব্য। সত্যজিতের জন্মশতবর্ষ স্মরণে রেখে এই ছবিকে প্রয়াত পরিচালকের প্রতি ‘শ্রদ্ধার্ঘ্য’ হিসাবেই দেখেছেন পরিচালক অনীক দত্ত। মে মাসে (সত্যজিতের জন্মমাস) মুক্তি পাওয়া আপাদমস্তক সাদা-কালো এই ছবির কাস্টিংও ইন্ডাস্ট্রিতে কৌতূহল তৈরি করেছিল। ছবিতে সত্যজিতের ভূমিকায় পরিচালকের প্রথম পছন্দ ছিলেন আবীর চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু পরে সেখানে জায়গা করে নেন জিতু কমল। চরিত্রের প্রয়োজনে জিতু পরিশ্রমে খামতি রাখেননি। প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু সকলকে চমকে দিয়ে পরিচালক শেষ পর্যন্ত তাঁর বাজি জিতে যান। সত্যজিৎরূপী জিতুকে সাদরে গ্রহণ করেন বাংলার দর্শক। বক্স অফিসেও তার প্রভাব নজরে পড়েছে। বছরের অন্যতম বড় হিট ‘অপরাজিত’।

‘বেলাশুরু’ ছবির একটি দৃশ্যে স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

‘বেলাশুরু’ ছবির একটি দৃশ্যে স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

২. বেলাশুরু: সত্যজিৎ রায়ের বৈগ্রহিক ছবি ‘ঘরে বাইরে’ মুক্তির তিন দশক পর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত জুটিকে ‘বেলাশেষে’ ছবিতে হাজির করেছিলেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায় জুটি। ছবি ‘সুপারহিট’। ২০২২ সালের মে মাসে মুক্তি পাওয়া ‘বেলাশুরু’ নিয়ে দর্শকের উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। ‘বেলাশেষে’র মজুমদার পরিবার এ বার সরকার পরিবার। চরিত্ররা প্রায় এক থাকলেও বদলে গিয়েছে তাদের পদবি। পার্থক্য এটুকুই। তবে সেখানে সঙ্কট বেড়েছে। জীবনসায়াহ্নে স্মৃতিভ্রষ্ট আরতি শেষ পর্ষন্ত বিশ্বনাথকে চিনতে পারবে কি না, এই প্রশ্ন সামনে রেখেই ছবির গল্প এগিয়েছে। সৌমিত্র বা স্বাতীলেখা— কেউই অবশ্য ছবিটি দেখে যেতে পারেননি। ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই দু’জনে চিরকালীন ছবি হয়ে গিয়েছেন। সম্ভবত তাই শেষ বারের মতো এই জুটিকে বড় পর্দায় দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের ভিড় দেখা গিয়েছে। ছবির গানগুলিও জনপ্রিয় হয়েছে। পাশাপাশি, ছবিটি ২০২২ সালের অন্যতম আলোচিত ছবির আখ্যা পেয়েছে।

‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’ ছবির একটি দৃশ্যে আবির চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন চক্রবর্তী এবং ইশা সাহা।

‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’ ছবির একটি দৃশ্যে আবির চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন চক্রবর্তী এবং ইশা সাহা। ছবি: সংগৃহীত।

৩. কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন: প্রথম ছবি থেকেই দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছে সোনাদা, আবির ও ঝিনুকের অভিযান। ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ এবং ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’— দু’টি ছবিই বক্স অফিসে সাড়া ফেলেছিল। তাই স্বভাবতই সোনাদার পরবর্তী অভিযান নিয়ে প্রত্যাশা ছিল। পুজোয় মুক্তি পেয়েছিল ধ্রুব মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘সোনাদা’ সিরিজ়ের তৃতীয় ছবি ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’। ছবির মূল ত্রয়ীর চরিত্রে যথাক্রমে আবির চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন চক্রবর্তী এবং ইশা সাহা। শশাঙ্কের গুপ্তধনের সন্ধানে তাদের অভিযান ছোট-বড় সকলেই চেটেপুটে খেয়েছেন। বক্স অফিসের ‘গুপ্তধন’ও পেয়েছে এই ছবি। পুজোর ছবি হিসেবে এই ছবির ব্যবসার অঙ্কও ছিল বাকিদের তুলনায় বেশি। শুধু তা-ই নয়, বছরের সবথেকে বেশি বাণিজ্যসফল ছবির তালিকাতেও উপরের দিকেই রয়েছে ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’।

‘বল্লভপুরের রূপকথা’ ছবির একটি দৃশ্য।

‘বল্লভপুরের রূপকথা’ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।

৪. বল্লভপুরের রূপকথা: অনির্বাণ ভট্টাচার্য এখন টলিপাড়ার ‘হটকেক’। তাঁকে ঘিরে উৎসাহ এবং প্রত্যাশা থাকা স্বাভাবিক। বলতে কি, কড়ায়গণ্ডায় সেই প্রত্যাশা পূরণও করছেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা— অভিনয় থেকে বেরিয়ে ছবি পরিচালনায় হাত দিয়েছেন। ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ নিজের পরিচালনায় তাঁর প্রথম ছবি । অনির্বাণের প্রথম পরিচালনা ছিল ‘মন্দার’ ওয়েবসিরিজ়। কিন্তু তার পরে অনেকে একটু নাক কুঁচকেছিলেন। তাঁদের ভুল ভেঙে দিয়েছে অক্টোবরে মুক্তি-পাওয়া ‘বল্লভপুরের রূপকথা’। বাদল সরকারের নাটক অবলম্বনে তৈরি ছবি। তথাকথিত কোনও ‘বড়’ তারকা নেই। তার পরেও শুধুমাত্র চিত্রনাট্য, অভিনয় এবং পরিচালনার গুণে সফল অনির্বাণের পরিচালিত ছবি। আট থেকে আশি প্রেক্ষাগৃহে পা বাড়িয়েছেন। ছবিটিতে হাস্যরসের পাশাপাশিই রয়েছে অতীত-বর্তমানের মধ্যে প্রতিনিয়ত চলতে থাকা দ্বন্দ্ব। পরিচালকের তরফে মুখ্য চরিত্রে সত্যম ভট্টাচার্য ও সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায় জুটি ইন্ডাস্ট্রি এবং দর্শককে উপহার। বক্স অফিসে ছবি যেমন লক্ষ্মীলাভ করেছে, তেমনই জনপ্রিয় হয়েছে ছবির গানও।

 ‘প্রজাপতি’ ছবির একটি দৃশ্যে মিঠুন চক্রবর্তী ও দেব।

‘প্রজাপতি’ ছবির একটি দৃশ্যে মিঠুন চক্রবর্তী ও দেব। ছবি: সংগৃহীত।

৫. প্রজাপতি: দেব ও পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের জুটিতে ‘টনিক’ ছিল গত বছরের অন্যতম বড় ‘হিট’। এ বছর বড়দিনে পরিচালক অভিজিৎ সেনের বাজি ‘প্রজাপতি’। এ বারের জুটি মিঠুন চক্রবর্তী ও দেব। তাঁরা বাবা এবং ছেলের চরিত্রে। ছবির একাধিক ‘ইউএসপি’। এক দিকে বাবা-ছেলের সম্পর্কের গল্প। অন্য দিকে, মৃণাল সেনের ‘মৃগয়া’র চার দশক পর আরও এক বার দর্শকের সামনে মিঠুন-মমতা শঙ্কর জুটি। দেবের বিপরীতে নতুন নায়িকা শ্বেতা ভট্টাচার্য। ছবি দর্শকের পছন্দ হয়েছে। শুরুতে এই মরসুমের বাকি ছবির সঙ্গে রেষারেষি থাকলেও এখন ‘প্রজাপতি’র প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা বেড়েছে। নতুন বছরেও ‘প্রজাপতি’র দৌড় যে বেশ কিছু দিন চলবে, তা অনুমান করা কঠিন নয়। বিশেষত, যখন দুই বিরোধী রাজনৈতিক শিবির বিজেপি এবং তৃণমূলের দুই নেতা-অভিনেতার একই ছবিতে অভিনয় ঘিরে খানিকটা হলেও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বিতর্ক হয়েছিল ছবিটি ‘নন্দন’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি না পাওয়াতেও। তার রেশ এখন থিতিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ছবিটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কৌতূহলও তৈরি করে দিয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE