Look at the stardom and personal life of Bollywood ‘Jubilee Kumar’ Rajendra Kumar dgtl
jubilee kumar
দুই নায়িকার সঙ্গে প্রেমে ভাঙতে বসেছিল বলিউডের ‘জুবিলি কিং’য়ের সংসার!
বিবাহিত হলেও সায়রা বানুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে ফিসফাস শুরু হয়েছে। শোনা যায়, স্ত্রী-সংসার ছেড়ে সায়রাকে বিয়ে করার জন্য উন্মুখ ছিলেন রাজেন্দ্র।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:০৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
তিনি ‘মাদার ইন্ডিয়া’-র ছেলে। বলিউড তাকে চেনে ‘জুবিলি কুমার’ নামেও। দিলীপ কুমারের আগের জমানায় তিনিই বলিউডের ‘ট্রাজেডি কিং’। এই ক’টি তথ্য যদি দিয়েই দেওয়া হয়, তা হলে আলাদা করে আর কোনও বিস্তারিত পরিচয়ের গৌরচন্দ্রিকাই লাগে না বলিউডের এই অভিনেতার জন্য।
০২১৯
পঞ্চাশ-ষাটের দশক ধরে বলিউড শাসন করা নায়কদের অন্যতম রাজেন্দ্র কুমার। ১৯২৯ সালের ২০ জুলাই ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের শিয়ালকোটে (অধুনা পাকিস্তান) জন্ম হয় তাঁর। রাজেন্দ্রর পিতামহ ছিলেন সেনাবাহিনীর চুক্তিবদ্ধ কর্মী। বাবা ছিলেন করাচির বস্ত্র ব্যবসায়ী। দেশভাগের পর তাঁদের পরিবার পাকিস্তান ছেড়ে মুম্বইয়ে এসে বসবাস করতে শুরু করে। অবিভক্ত ভারতের ছবির পাশাপাশি দেশভাগের ক্ষত, দুই-ই মিশেছিল তাঁর শৈশব-কৈশোর জুড়ে।
০৩১৯
ভারত যখন স্বাধীন হয়, তখন রাজেন্দ্র সবে আঠারো পেরিয়েছেন। দেশ স্বাধীনের পরবর্তী রাজনৈতিক অবস্থা, সামাজিক পরিকাঠামো তাঁর সেনাবিহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছেকে উস্কে দিত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে উঠল না। বরং ছোটবেলা থেকেই নাটকে আনন্দ খুঁজে পাওয়া ছেলেটা বেছে নিল লাইট, ক্যামেরা অ্যাকশনের জগৎ।
০৪১৯
তবে হিরো নয়, প্রথম জীবনে ক্যামেরার পিছনে কাজ করতেই ভালবাসতেন রাজেন্দ্র। যোগ দিয়েছিলেন পরিচালক এইচ এস রাওয়ালের সঙ্গে। ‘পতঙ্গ’, ‘সাগাই’, ‘পকেটমার’-এর মতো নানা ছবিতে তাঁর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন রাজেন্দ্র।
০৫১৯
পরিচালনার পর ধীরে ধীরে অভিনয়েও হাত পাকাতে শুরু করেন রাজেন্দ্র। দেশভাগের যন্ত্রণা যখন বলিউডের নানা ছবির বিষয় হয়ে উঠছে, সেই সময় মাত্র ২১-এই ‘জোগান’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। ফিল্মি কেরিয়ারে সেটিই তাঁর প্রথম ব্রেক।
০৬১৯
‘জোগান’-এ তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন প্রযোজক দেবেন্দ্র গয়াল। তাঁর প্রযোজিত ছবি ‘বচন’ (১৯৫৫)-এ অভিনয়ের অফার দেন। সেখানেও নজর কাড়েন তিনি। এর পর ১৯৫৭-য় নার্গিস দত্তর জীবনের অন্যতম সেরা ছবি মেহবুব খানের ‘মাদার ইন্ডিয়া’-তে তাঁর ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করে ফিল্ম সমালোচক, সাধারণ দর্শক, প্রযোজক, পরিচালক সকলেরই প্রশংসা অর্জন করেন।
০৭১৯
এর পর থেকেই পর পর ছবির অফার আসতে থাকে রাজেন্দ্র কুমারের কাছে। তাঁর অভিনীত ‘সঙ্গম’, ‘সূরয’, ‘ধুল কা ফুল’, ‘মেরে মেহবুব’-এর মতো বেশ কিছু ছবি দিনের পর দিন হল থেকে সরতই না। প্রায় অনেক ছবিই পার করত ‘সগৌরবে চলিতেছে’-র ২৫ সপ্তাহ। এমন মানুষকে ‘জুবিলি কুমার’ ছাড়া আর কীই বা নাম দেওয়া যায়! এই সময় বিভিন্ন নায়িকার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথাও প্রকাশ্যে আসে।
০৮১৯
তত দিনে বিবাহিত হলেও সায়রা বানুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে ফিসফাস শুরু হয়েছে। শোনা যায়, স্ত্রী-সংসার ছেড়ে সায়রাকে বিয়ে করার জন্য উন্মুখ ছিলেন রাজেন্দ্র। এই সময় সেই প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন সায়রার মা নাসিম বানু। বিবাহিত ও সন্তানের বাবা রাজেন্দ্রকে মেয়ের প্রেমিক হিসেবে কিছুতেই মানতে পারলেন না তিনি। পরিণতি পেল না প্রেম। পরে নূতনের সঙ্গেও তাঁর বিশেষ বন্ধুত্ব তৈরি হলেও তা অত গাঢ় হতে পারেনি।
০৯১৯
রাজেন্দ্র কুমারের সঙ্গেও প্রেম ঘন হয় বৈজয়ন্তীমালারও। এমনকি, বৈজয়ন্তীমালাকে বিয়ের প্রস্তুতি নিলে রাজেন্দ্রের স্ত্রী তাঁদের সন্তান-সহ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। রাজেন্দ্র বাধ্য হন বৈজয়ন্তীমালাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসতে।
১০১৯
রাজেন্দ্র কুমার আছেন শুনে প্রযোজকরা গল্প তেমন পছন্দ না হলেও টাকা ঢালতেন, জানতেন লভ্যাংশ উঠে আসবে ঠিকই। ‘দিল এক মন্দির’, ‘সঙ্গম’, ‘আয়ি মিলন কি বেলা’, ‘আরজু’, ‘ঝুক গয়া আশমান’, ‘তলাশ’ ইত্যাদি ছবিতে তাঁর অভিনয় আজও মনে রেখেছেন সিনেমাপ্রেমীরা।
১১১৯
পঞ্চাশ থেকে শুরু করে সত্তরের দশকের শুরুর দিক পর্যন্ত মোটামুটি বলিউডে তিনি একাই রাজত্ব করে গিয়েছেন। ১৯৬৯-এ পেয়েছেন ‘পদ্মশ্রী’-ও। তবে ১৯৭২-এর পর থেকে রাজেশ খন্নার সঙ্গে তাঁর পেশাগত প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এই সময় কিছু ছবি ফ্লপও করে রাজেন্দ্র কুমারের।
১২১৯
তখন নায়কের ভূমিকা থেকে সরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেন রাজেন্দ্র। এই সময় নূতনের বিপরীতে ‘সজন বিনা সুহাগা’ ছবিতে ফের ঝলকে ওঠেন ‘নায়ক’ রাজেন্দ্র কুমার।
১৩১৯
তবে শুধু হিন্দিই নয়, বহু পঞ্জাবি ছবিতেও একচেটিয়া অভিনয় করেছেন রাজেন্দ্র। তার মধ্যে অন্যতম ‘তেরি মেরি এক জিন্দারি’। ভাই নরেশ কুমারের পরিচালনাতেও পঞ্জাবি ছবি ‘দো জাসুস’-এ অভিনয় করেন তিনি।
১৪১৯
ফিল্মি কেরিয়ার যখন তুঙ্গে তখনই বিয়েটা সেরে ফেলেন রাজেন্দ্র। পরিচালক-প্রযোজক ও পি রালহানের বোন শুক্লাকে বিয়ে করেন তিনি। তাঁদের পুত্র কুমার গৌরবও বলিউডে অভিনয়ের জগতে এসেছিলেন।
১৫১৯
ছেলের ফিল্মি কেরিয়ারকে একটু গতি দিতেই ছবি প্রয়োজনার কাজে যুক্ত হন রাজেন্দ্র। ছেলে কুমার গৌরবকে নায়ক করে ১৯৮১-তে প্রয়োজনা করেন ‘লভ স্টোরি’। এই ছবিতে অভিনয়ও করেন তিনি। সিনেমাটি বিপুল জনপ্রিয় হয়। কিন্তু তার পর ‘নাম’ (১৯৮৬) ছাড়া কোনও ছবিতেই সে ভাবে দাগ কাটতে পারেননি প্রযোজক রাজেন্দ্র কুমার ও নায়ক কুমার গৌরবের জুটি।
১৬১৯
‘নাম’ ছবির শুটিং চলাকালীন হংকং থেকে ভারতে বহু ফোন করেছিলেন ছবির নায়িকা অমৃতা সিংহ। এর ফলে বিপুল অঙ্কের এসটিডি বিল ধরানো হয় প্রযোজনা সংস্থাকে। এর ‘শাস্তি’ হিসাবে অমৃতা সিংহের বেতন থেকে একটা অংশ কেটে নিয়েছিলেন সিনেমার প্রযোজক রাজেন্দ্র। এই ঘটনা তাঁকে পেশাদার প্রযোজক হিসাবে বিখ্যাত করে তোলে।
১৭১৯
১৯৯৫-তে টেলি ধারাবাহিক ‘অন্দাজ’-এর অভিনয় দিয়েই অভিনেত-জীবনে দাঁড়ি টানেন রাজেন্দ্র কুমার। অভিনয় চলাকালীন শত ব্যস্ততার মধ্যেও শেষ করেছিলেন পিএইচ.ডি-র কাজ।
১৮১৯
পেশাগত জীবনে বন্ধু রাজ কপূরের সঙ্গে এতটাই সখ্য তৈরি হয়েছিল যে, ছেলে কুমার গৌরবের বিয়ে ঠিক করেন রাজের মেয়ে রিমার সঙ্গে। যদিও সে বিয়ে টেকেনি। পরে সুনীল দত্ত ও নার্গিসের মেয়ে নম্রতাকে বিয়ে করেন কুমার গৌরব।
১৯১৯
নব্বইয়ের শেষ ভাগে ক্যানসারে আক্রান্ত হন এই প্রবাদপ্রতিম তারকা। ১৯৯৯ সালে জন্মদিনের মাত্র ৮ দিন আগে ১২ জুলাই মৃত্যু হয় তাঁর। থেকে যায় তাঁকে ঘিরে তৈরি হওয়া ভক্তেদর অকুণ্ঠ ভালবাসা ও রাশি রাশি সম্মান।