লোলিতা চট্টোপাধ্যায়।
২০১৭ সালের কথা। লোলিতা চট্টোপাধ্যায় তখন জীবিত। সুস্থ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাতি রণদেব বসু। মানালি দে তখন ছোট পর্দায় রাজত্ব করছেন। আর অভিনয় দুনিয়ায় পরিচিত মুখ মাফিন। পরিচালক সায়ন্তন মুখোপাধ্যায় সে সময়ে সমকামীদের নিয়ে একটি গল্প লিখেছিলেন, ‘ছায়া মারীচ’। যে জুটির অন্যতম ৮৫ বছরের লোলিতা!
সাহসী গল্প। ততোধিক দুরন্ত চুম্বন, শয্যাদৃশ্য। সিগারেটের ধোঁয়া, সুরার নেশায় আচ্ছন্ন প্রায় প্রতি মুহূর্ত। তৈরির পরে তাই দীর্ঘকাল সেন্সর বোর্ডের টেবিলেই পড়েছিল ছবিটি। সাতটি দৃশ্য বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল পরিচালককে। সায়ন্তন এক কথায় সেই নির্দেশ নাকচ করতেই মুখ ফেরায় বোর্ডও। ফলাফল, ‘ছায়া মারীচ’ কোনও ছাড়পত্রই পেল না!
সেই ছবি এ বার মুক্তি পেতে চলেছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। কোনও দৃশ্য বাদ না দিয়েই! আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে পরিচালকের আফশোস, ‘‘বলিউডে কত সাহসী দৃশ্য, সাহসী বিষয়, সাহসী অভিনয়! আমার এই ছবি যদি বড় পর্দায় মুক্তি পেত বাঙালি হয়তো চমকে যেত। অনবরত ‘গোয়েন্দা’ আর ‘খোকা-খুকু’র গল্পের বদলে নতুন ভাবনার রসদও পেত। নতুন রূপে দেখতে পেত উত্তমকুমারের নায়িকাকে। যাঁকে ইন্ডাস্ট্রি ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারেনি! আবিষ্কার করত রণদেবকেও। দুর্ঘটনার শিকার না হলে তিনিই হতেন আজকের অন্যতম তারকা অভিনেতা।’’
সমকামিতার গল্প ইদানীং অনেক ছবিতেই উঠে আসছে। সায়ন্তনের ছবির বিশেষত্ব কোথায়?
গল্প বলছে, এই সমকামী প্রেমের পটভূমিকায় ১৯৫৭ সাল! সেই সময়ে রেবতী নন্দিনী রায় এবং মধুবালা মুখোপাধ্যায় একে অন্যের প্রেমে পড়েছিলেন। সম্পর্কে তাঁরা তুতো বোন! মধুবালার প্রতি তাঁর প্রেম রেবতী অনেক দেরিতে টের পেয়েছিলেন। তত দিনে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। এর পরেই তিনি স্বামীর হাত ধরে চলে যান বিদেশে। সঙ্গে নিয়ে যান অপূর্ণ প্রেম। এর ঠিক পঞ্চান্ন বছর পরে প্রবীণ মধুবালার মুখোমুখি রিনি। রেবতীর মেয়ে। সে তার মায়ের একটি ডায়েরি দিতে কলকাতায় মধুবালার কাছে এসেছে। সেখানেই সে আবিষ্কার করে, তাকে দেখতে হুবহু তার মায়ের মতো! যা দেখে ফের নতুন করে আকর্ষণ জন্মায় মধুবালার। তাঁর টানে রিনিও দূরে ঠেলতে থাকে তাঁর ‘যৌন সঙ্গী’ ‘অগাস্টিন’ ওরফে রণদেবকে। যে পেশায় বিমান চালক ছিল। নেশাসক্তির কারণেই চাকরিটি চলে যায় তার। এর পরেই সে রকস্টার!
‘ছায়া মারীচ’ সম্ভবত সায়ন্তনের প্রথম ছবি। ‘ঝরা পালক’-এর আগে এই ছবির কাজে হাত দিয়েছিলেন পরিচালক। কলকাতা আর বেঙ্গালুরু জুড়ে ছবির শ্যুট হয়েছিল। সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রে মানালি, লোলিতা। এঁরাই পরিচালকের দুই বয়সের ‘মধুবালা’। কাজের কেমন অভিজ্ঞতা? সায়ন্তনের দাবি, ‘‘অভিনয়ের প্রতি প্রেম না থাকলে ৮৫ বছর বয়সে ‘মধুবালা’ হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। লোলিতা চট্টোপাধ্যায়ের তা ছিল। ফলে, অভিনয়ের পাশাপাশি অনায়াসে অংশ নিয়েছিলেন সমকামী চুম্বন দৃশ্য, শয্যাদৃশ্যেও!’’
রেবতীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মাফিন। মানালিও চরিত্রের খাতিরে নিজের খোলস ছেড়েছিলেন। অনেক সাহসী দৃশ্যে দর্শকেরা তাঁকে এই ছবিতে দেখবেন। একই কথা প্রযোজ্য অভিনেতা রণদেবের ক্ষেত্রেও। পরিচালক আরও জানিয়েছেন, আগের তুলনায় অনেকটাই ভাল আছেন কিংবদন্তি অভিনেতার নাতি। নতুন কোনও সমস্যা দেখা না দিলে ২-৩ বছরের মধ্যে তিনি পুরোদমে অভিনয় শুরু করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy