বলিউডে সুযোগ পাওয়ার থেকেও শক্ত জনপ্রিয়তা ধরে রাখা। নিজেকে প্রতি মুহূর্তে প্রস্তুত রাখতে হয়। সিদ্ধার্থ সেটা পেরেছিলেন। কিন্তু কী হল তার পর?
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৬:০৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
‘বিগ বস’ জয়ী এবং সদ্যপ্রয়াত সিদ্ধার্থ শুক্ল-র একটি ‘বদনাম’ ছিল। তিনি অলস। তাঁর ১৭ বছরের কেরিয়ারে এক ঝলক নজর দিলে অপবাদটি সত্যিও মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে ব্যক্তিগত জীবনে আলস্যের কোনও জায়গাই ছিল না সিদ্ধার্থের।
০২১৬
উচ্চতা ৬.০৭ ফুট। খেলোয়াড় সুলভ সুগঠিত চেহারা। সুদর্শন অভিনেতা সিদ্ধার্থ আসলে নিজের শরীর সুন্দর রাখতেই পরিশ্রম করতেন বেশি।
০৩১৬
স্বাস্থ্য নিয়ে ‘অতি সচেতন’ এই অভিনেতা দিনের একটা লম্বা সময় শরীরচর্চা করেই কাটিয়ে দিতেন। নিয়মিত খেলাধুলোর অভ্যাসও ছিল। হাতে গোনা কয়েকটি টিভি ধারাবাহিক আর একটি মাত্র সিনেমায় অভিনয় করে বলিউড তারকাদের সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সিদ্ধার্থ। নেটমাধ্যমে সে ভাবে সক্রিয় না থেকেও ৪০ লাখের কাছাকাছি অনুগামী। এই জনপ্রিয়তা আলস্যে নয় পরিশ্রম করেই অর্জন করতে হয়েছিল।
০৪১৬
মডেলিংয়ের দুনিয়ায় এসে পড়েছিলেন হঠাৎ করেই। ইলা অরুণের একটি গানের ভিডিয়োয় প্রথম অভিনয় সিদ্ধার্থের। সুদর্শন। তাই সুযোগ পেতে দেরি হয়নি। কিন্তু বলিউডে সুযোগ পাওয়ার থেকেও শক্ত জনপ্রিয়তা ধরে রাখা। মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হয়। নিজেকে প্রতি মুহূর্তে প্রস্তুত রাখতে হয়। সিদ্ধার্থ সেটা পেরেছিলেন।
০৫১৬
যদিও সিদ্ধার্থ অভিনেতা হতে চাননি। তাঁর ইচ্ছে ছিল ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হওয়ার। অন্দরসজ্জা নিয়ে পড়াশোনা এবং ডিগ্রি দুই-ই ছিল সিদ্ধার্থের।
০৬১৬
মুম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স হাইস্কুলের ছাত্র সিদ্ধার্থ খেলাধুলোতেও আগ্রহী ছিলেন। টেনিসে স্কুলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এমনকি ইটালির ফুটবল ক্লাব এসি মিলানের বিরুদ্ধে ফুটবলও খেলেন সিদ্ধার্থ।
০৭১৬
সিদ্ধার্থ তখন স্কুল ছাত্র। এসি মিলানের অনূর্ধ্ব-১৯ দল মুম্বইয়ে এসেছিল তাদের ‘ফেস্টা ইটালিয়ানা’র কোনও একটি অনুষ্ঠানে। তাদের বিরুদ্ধেই খেলেছিলেন সিদ্ধার্থ।
০৮১৬
গানের ভিডিয়োয় অভিনয়ের প্রস্তাব যখন আসে, তখন সিদ্ধার্থ মুম্বইয়ের একটি অন্দরসজ্জার সংস্থার কর্মী। বছর খানেক হল পছন্দের কেরিয়ারে মনোনিবেশ করেছেন। তবে তার ফাঁকেই একটি মডেলিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে খেতাবও জিতে ফেলেছেন।
০৯১৬
২০০৪ সালে মুম্বইয়ে আয়োজিত ওই মডেলিং প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন সিদ্ধার্থ। এক বছর পরে মডেলিংয়ের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাতেও অংশগ্রহণ করেন। তুরস্কে আয়োজিত ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল ৪০টি দেশের প্রতিযোগী। সিদ্ধার্থ প্রথম হন।
১০১৬
বিশ্ব মডেলিংয়ে খেতাব জয়ের পর একের পর এক বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করে। তবে সিদ্ধার্থ ততদিনে অভিনয় নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। নিজেকে তৈরি করার পাশাপাশি প্রযোজকদের কাছে যাতায়াত শুরু করেছেন।
১১১৬
প্রথম সুযোগ আসে সোনি টিভিতে। ‘বাবুল কা অঙ্গনা ছুটে না’ নামে একটি মেগা ধারাবাহিকে মূল চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান সিদ্ধার্থ। প্রথম ধারাবাহিক সাড়া ফেলেনি। তবে দীর্ঘদেহী, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং সুদর্শন সিদ্ধার্থ দর্শকদের নজর কেড়েছিলেন। এক বছর পর ধারাবাহিকটির সম্প্রচার শেষ হতে না হতেই পরের ধারাবাহিকের প্রস্তাব চলে আসে।
১২১৬
এরপর বেশ কয়েকটি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। তবে ২০১২ সালে ‘বালিকা বধূ’ ধারাবাহিকটিই সিদ্ধার্থকে তাঁর কাঙ্ক্ষিত জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
১৩১৬
সেখান থেকেই বলিউডেও প্রবেশ। বরুণ ধবন এবং আলিয়া ভট্টের সঙ্গে পর্দায় দেখা দেন সিদ্ধার্থ ছবির নাম ‘হাম্পটি শর্মা কি দুলহনিয়া’। সিদ্ধার্থের চরিত্রটি ছিল দ্বিতীয় নায়কের। যিনি কিছুটা খলনায়কও।
১৪১৬
ছবিটিতে সিদ্ধার্থের অভিনয় প্রশংসিত হয়। তবে কার্যক্ষেত্রে তার বিশেষ প্রভাব দেখা যায়নি। বলিউডে এরপর আর কোনও সিনেমায় অভিনয় করেননি সিদ্ধার্থ। ওয়েবসিরিজ করেছেন। তা-ও একটি।
১৫১৬
তবে এরপরও নিজের যত্ন নেওয়া বন্ধ করেননি। শরীরচর্চা চলেছে পুরোদমে। মৃত্যুর আগের দিনও জিমে গিয়েছেন। রাতে হেঁটেছেন মায়ের সঙ্গে।
১৬১৬
তাঁর ঘনিষ্ঠদের অনেক মনে করছেন, অতিরিক্ত শরীরচর্চা কাল হয়েছে সিদ্ধার্থের। একদিকে কেরিয়ারে কাঙ্ক্ষিত স্তরে পৌঁছতে না পারার চাপ। অন্যদিকে, নিজের কাছেই নিজের অতিরিক্ত প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা পূরণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখা। এ সবই বোধ হয় কোথাও না কোথাও প্রভাব ফেলেছিল অভিনেতার স্বাস্থ্যে। হয়তো তার তল পাননি সিদ্ধার্থ।