Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Tele Serial

অল্প দিনে একের পর এক বন্ধ মেগা সিরিয়াল! ধারাবাহিকের দৈর্ঘ্য কমছে? কী বলছে টেলিপাড়া?

কারও মতে, দায়ী দর্শকদের ধৈর্যের অভাব। কারও দাবি, চ্যানেল কর্তৃপক্ষও অধৈর্য। ফলে, রেটিংসর্বস্ব যুগে ‘মেগা’ শব্দটা অস্তিত্ব হারাচ্ছে।

Image Of Leena Ganguly, Snehasish Chakraborty, Saheb Bhattacharjee, Manali Dey, Riju Biswas

ধারাবাহিক নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন লীনা, স্নেহাশিস, সাহেব, ঋজু, মানালি। গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ১৮:৩২
Share: Save:

ঘটনা এক: ধারাবাহিক ‘জল থই থই ভালবাসা’ সম্প্রচারের শুরু থেকে দর্শকমনে ভাল জায়গা করে নিয়েছিল। রেটিং চার্টেও খুব খারাপ ফল করেনি। তার পরেও মাত্র আট মাসে শেষ। এই তালিকায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় প্রযোজিত ধারাবাহিক ‘আলোর কোলে’ রয়েছে।

ঘটনা দুই: কিছু ধারাবাহিক শুরুতেই শেষ। তালিকায় প্রযোজক অর্ক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অষ্টমী’, সুরিন্দর ফিল্মসের ‘ভক্তির সাগর’। সম্প্রচারের দু’মাসের মধ্যেই বন্ধ দু’টি ধারাবাহিকই।

সেই জায়গা থেকে টেলিপাড়ায় প্রশ্ন উঠেছে, ইদানীং ধারাবাহিকের দৈর্ঘ্য কি কমছে? ‘মেগা’ শব্দটি কি ক্রমশ অস্তিতত্বহীন হয়ে পড়ছে?

উত্তর খুঁজতে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল কাহিনি-চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, প্রযোজক-পরিচালক স্নেহাশিস চক্রবর্তী, অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য, ঋজু বিশ্বাস, মানালি দে-র সঙ্গে। এঁরা কেউ বিষয়টি অস্বীকার করেননি। সমস্যাকে আড়ালও করেননি। কী বলছেন তাঁরা?

এখন দর্শক বেশি ধৈর্যহীন, না চ্যানেল কর্তৃপক্ষ? যার জেরে দ্রুত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক ধারাবাহিক। প্রশ্ন রাখা হয়েছিল লীনার কাছে। তাঁর মতে, ‘‘অস্থির দু’পক্ষই। দর্শকের অস্থিরতাও নিশ্চয়ই একটি কারণ। যার প্রতিফলন পড়ছে রেটিং চার্টে। শুধু বাংলায় নয়, বিশ্বের দর্শকের মধ্যে এই অস্থিরতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। সেটা প্রমাণিত।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, চ্যানেলও আর ধৈর্য ধরতে চায় না। তাদেরও চাপ থাকে নম্বরের। কারণ, দিনের শেষে ব্যবসাই শেষ কথা বলে। ফলে, ইদানীং ধারাবাহিকের দৈর্ঘ্য কমছে। সাধারণত, বিনোদন দুনিয়ায় ১০ বছর অন্তর নতুন যুগ আসে। তার আগে-পরে এই অস্থিরতা দেখা যায়।

স্নেহাশিস সরাসরি আঙুল তুলেছেন চ্যানেল কর্তৃপক্ষের দিকে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ‘‘এক পরিবারের সব বাচ্চা পরীক্ষায় সমান ফল করে না। আমরা কি যারা পিছিয়ে পড়ে, তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিই? চ্যানেল কর্তৃপক্ষ কিন্তু সেটা করছেন। যে ধারাবাহিক শুরুতেই ভাল ফল করতে পারছে না, তাকে সরিয়ে দিচ্ছেন। এটা কি কাম্য?’’ তাঁর মতে, দর্শকের ধৈর্য কমেনি। তাঁরা ধারাবাহিকের গল্প বুঝে ওঠার আগেই সেটি দেখানো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতি হচ্ছে প্রযোজকের। চ্যানেল কর্তৃপক্ষের সে দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।

বিষয়টি নিয়ে একমত সাহেব, মানালি, ঋজুও। তাঁরা রেটিং চার্টের দিকটিও তুলে ধরেছেন। সাহেবের কথায়, ‘‘অতিমারির পর দর্শকের ধৈর্য কমেছে। কারণ, তাঁদের হাতে এখন বিনোদনের নানা উপকরণ। প্রত্যেক দিন গল্পে মোচড় না থাকলে তাঁরা চ্যানেল ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। যার ছাপ পড়ছে রেটিং চার্টে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ধারাবাহিক।’’ মাত্র দু’মাসে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঋজু অভিনীত ধারাবাহিক ‘ভক্তির সাগর’। সেই রেশ টেনে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘‘বৌ কথা কও’ বা ‘তোমায় আমায় মিলে’র মতো ধারাবাহিক যথাক্রমে তিন বছর, দু’বছর চলেছে। আমরা অভিনয় করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। দর্শক কিন্তু ক্লান্ত হত না!’’ এই পট পরিবর্তনের জন্য তাঁর অভিযোগের আঙুল অতিমারি এবং বিনোদনের অন্যান্য উপকরণের উপর। আগে টেলিভিশন সেট ছাড়া ধারাবাহিক দেখা যেত না। এখন ওটিটি বা মুঠোফোনেও দিব্যি সে সব দেখছেন দর্শক। এতে চ্যানেলের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে না। কিন্তু, প্রযোজক বা অভিনেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মানালিও মেনে নিয়েছেন ছোট পর্দার সাম্প্রতিক পরিবর্তনের কথা। তাঁর যুক্তি, ‘‘আগে ছোট পর্দার বিনোদন বলতে ছিল শুধুই ধারাবাহিক। এখন ওটিটি, সিরিজ, মুঠোফোনে পূর্ণ দৈর্ঘের ছবি ছাড়াও টেলিভিশন সেটে বিশ্বের নানা প্রান্তের খেলা দেখা যাচ্ছে। দর্শক কেনই বা আর নিজেকে শুধু ধারাবাহিকে আটকে রাখবেন? এটিও দর্শকসংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।’’

Image Of Susmita Dey, Saheb Bhattacharjee

‘কথা’ ধারাবাহিকে সুস্মিতা দে, সাহেব ভট্টাচার্য। সংগৃহীত।

সমস্যা থাকলে তার সমাধানও থাকবে। কী করলে এই অস্থিরতা কমবে?

লীনার মতে, নতুন বিষয় নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাতেই হবে। নম্বরের উপরে নির্ভরশীলতার পাশাপাশি দর্শকের রুচি বদলাতে এবং বুঝতে নতুন ধারার গল্প আনতে হবে। স্নেহাশিসের দাবি, ‘‘চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে ধৈর্য ধরতে হবে। যে ধারাবাহিক শুরু থেকে রেটিং চার্টে ভাল ফল করতে পারছে না, তাকে সময় দিতে হবে। যে ধারাবাহিক ভাল ফল করছে, তাকে দিয়ে বাকি ধারাবাহিকের মান বিচার করলে চলবে না। এগুলোই সমস্যা সমাধানের উপায়।’’ ঋজুর আবেদন, ‘‘বাংলা ছবিমুক্তির তিন মাস পরে ওটিটিতে আসে। এতে প্রেক্ষাগৃহেও বাণিজ্য করার সুযোগ পায় ছবিটি। এই পদ্ধতি চালু করতে হবে ধারাবাহিকের ক্ষেত্রেও। সম্প্রচারের কয়েক মাস পরে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখানো শুরু হলে দর্শক টিভি সেটেই চোখ রাখতে বাধ্য হবেন। এতে রেটিং চার্টে ভাল ফল করবে প্রত্যেক নতুন ধারাবাহিক।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy