শচিনদেব বর্মণ এবং রাহুলদেব বর্মণের সঙ্গে।
যুগাবসান। এ ছাড়া আর কী বলা যায় দিনটিকে? লতা মঙ্গেশকর ছিলেন আমার বড় দিদির মতো। প্রবল খ্যাতি সত্ত্বেও তিনি ছিলেন এতটাই উদার, বিনম্র এবং বিনয়ী যে বলে বোঝানোর নয়। আমার স্ত্রী শুভলক্ষ্মীকে সর্বদা ‘ভাবী’ বলে সম্মান দিয়ে সম্বোধন করতেন। বহু বা বৌমা বলতেই পারতেন চাইলে, কিন্তু তা না বলে ‘ভাবী’ বলেই ডাকতেন। দিল্লিতে উনি আমার বাড়ি এসেছেন, আমরা অনেক বার গিয়েছি মুম্বইয়ে ওঁর বাড়ি প্রভুকুঞ্জে। ওঁর পুরো পরিবারের সঙ্গেই আমাদের বরাবরের সুসম্পর্ক। আশাজি অতুলনীয় গায়িকা আর ওঁর ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর খুবই গুণী সঙ্গীত পরিচালক। হৃদয়নাথের পুত্র আদিনাথ আমার কাছে সরোদ শিখত। সেও খুবই প্রতিভাবান।
লতাদিদি ক্লাসিকাল মিউজ়িক রপ্ত করে সিনেমার জগতে এসেছিলেন। কিন্তু শুধু গানের ব্যাকরণ জানলেই তো কেউ লতা মঙ্গেশকর হন না। ক্লাসিকাল শেখার পর আপনি কী ভাবে তা ‘প্রেজ়েন্ট’ করছেন, তা খুবই বড় ব্যাপার। লতাদিদি তিন মিনিটের গানে এমন আবেদন এবং নিবেদন ঢেলে দিতে পারতেন, যা অমর হয়ে যেত। অনেক ক্লাসিকাল গায়ক-গায়িকা রয়েছেন, যাঁরা তিন ঘণ্টাতেও সেই আবেদন তৈরি করে উঠতে পারেন না। কিন্তু লতাদিদির তিন মিনিটের গানে মানুষ কেঁদেছে, হেসেছে, ভালবাসার ঘোর তৈরি হয়েছে। বড়ে গুলাম আলি সাব এক বার মজা করেই লতাদিদি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘কামবখত কভি ইয়ে বেসুরা নেহি গাতি! অ্যায়সি লড়কি হ্যায় ইয়ে!’
আসলে মা সরস্বতী স্থায়ী ভাবে ওঁর কণ্ঠে বাসা বেঁধেছিলেন। ঠিক সুরে অনেকেই গান। সাধনা, রেওয়াজ, ব্যাকরণও অনেকেরই আয়ত্তে থাকে। কিন্তু কণ্ঠে যদি আবেদন না থাকে, তা হলে সেই ম্যাজিক তৈরি হয় না। আবেদন না থাকলে তা সঙ্গীতই নয়। এখানেই লতা মঙ্গেশকরের বৈশিষ্ট্য। আজ অস্ট্রেলিয়া হোক বা ব্রিটেন — যে কোনও দেশে গেলে, কোনও প্রবাসী ভারতীয়ের গাড়িতে যখন বসি, গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পরই লতাদিদির পুরনো গান বেজে ওঠে। লতাদিদির পুরনো গান এখনও সমান জনপ্রিয়। আজ মনে পড়ছে আনন্দী রাগে তাঁর গাওয়া অনবদ্য গানটি— ‘তু যাঁহা যাঁহা চলেগা/ মেরা সায়া সাথ হোগা..।’
এটাও আমাদের স্মরণ করতে হবে, সঙ্গীতজগতের বহু প্রতিভাবান সুরকার এবং গীতিকারের আশীর্বাদ ও সান্নিধ্য লতাদিদি পেয়েছেন। সি রামচন্দ্রন, মদনমোহন, নৌশাদ, খৈয়াম, হুসন লাল, ভগত রাম, শচিনদেব বর্মণের মতো প্রাতঃস্মরণীয় সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গে দশকের পর দশক কাজ করে গিয়েছেন তিনি।
সরস্বতী পুজোর বিসর্জনের দিনই চলে গেলেন লতাদিদি। এ-ও এক আশ্চর্য সমাপতন।
শনিবারই আমাদের গানের ঘরে আমি, আয়ান আর আমানের সঙ্গে বসে ‘বসন্ত’ বাজাচ্ছিলাম। লতাদিদিকে নিয়েও কথা বলছিলাম। ঈশ্বর ওঁকে দীর্ঘ আয়ু দিয়েছেন, কিন্তু শেষ দিকটায় খুবই শারীরিক কষ্ট পেলেন। প্রার্থনা করি, এ বার তাঁর আত্মা মুক্তি পাক। সঙ্গীত বিশ্বে চিরকালীন হয়ে থেকে যাবেন লতা মঙ্গেশকর।
অনুলিখন : অগ্নি রায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy