Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
lata mangeshkar

Lata Mangeshkar Death: মুম্বই গিয়ে দেখা না করলে রাগ করতেন, লিখলেন আরতি মুখোপাধ্যায়

সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যেতাম। কখনও হয়তো ওঁর গাড়িতে যাচ্ছি, দিদি জিজ্ঞেস করলেন, খিদে পেয়েছে? তার পরে ব্যাগ থেকে খাবার বার করে দিতেন।

লতা মঙ্গেশকর।

লতা মঙ্গেশকর। ফাইল চিত্র।

আরতি মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:০৮
Share: Save:

তখন আমি চোদ্দো। অল ইন্ডিয়া মেট্রো-মার্ফি সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলাম। সেই প্রতিযোগিতা হয়েছিল মুম্বইয়ে। আর সেখানেই প্রথম দেখা লতাদিদির সঙ্গে। ছোট থেকেই দিদির গান শুনে বড় হয়েছি। প্রতিযোগিতার পরে মান্নাদাকে (দে) বললাম, গ্রিনরুমে দিদির সঙ্গে দেখা করব। আমি কার কাছে গান শিখি জানতে চাইলেন দিদি। তার পরে কী ভাবে রেওয়াজ করব, সে সব নিয়ে আলোচনা করলেন।

সেই শুরু। তার পরে লতাদিদির বাড়িতে যাতায়াত লেগেই থাকত আমার। ওঁর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যেতাম। কখনও হয়তো ওঁর গাড়িতে যাচ্ছি, দিদি জিজ্ঞেস করলেন, খিদে পেয়েছে? তার পরে ব্যাগ থেকে খাবার বার করে দিতেন। আমার কাছে তখন মুম্বই মানেই লতা মঙ্গেশকর। মুম্বই গিয়ে যদি দেখা না করতাম, রাগ করতেন। এক বার এক গানের রেকর্ডিংয়ে গিয়েছি। হেমন্তদাকে (মুখোপাধ্যায়) বললেন, ‘আরতি এসেছে? আমার সঙ্গে দেখা করতে এল না তো! ওকে বোলো, আমার সঙ্গে দেখা করে যেতে।’ সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। কারও কিছু হলে পাশে দাঁড়াতেন। আমি মু্ম্বই গেলে আমার কাছ থেকে কলকাতার সকলে কেমন আছেন, সন্ধ্যাদি (মুখোপাধ্যায়) কেমন আছেন... খবর নিতেন। এটা ওঁর খুব বড় গুণ ছিল।

খুব কম বয়সে বাবাকে হারান দিদি। বারো-তেরো বছর থেকেই তো কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। বাড়িতে কোনও রোজগেরে মানুষ ছিল না। পুরো পরিবারের হাল ধরেন। বিয়েও করেননি। নিজের কোনও সংসার ছিল না। ভাই-বোনরাই ছিল ওঁর সংসার। অনেক অবদান আছে দিদির। আর সকলের জন্য অনেক করেওছেন। অনেক নতুন পরিচালকের ছবিতেও গান গেয়েছেন। দিদির গানের জন্যই ছবি হিট হয়ে যেত। তার জন্য যে বিশাল পারিশ্রমিক পেয়েছেন, তা তো নয়। এখনকার শিল্পীদের তুলনায় তখন পারিশ্রমিকই বা কত ছিল! কিন্তু দিদি মানুষের জন্য এগুলো করতেন। লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারেলালের সঙ্গে আমার দেখা করিয়েছিলেন। তাঁদের কম্পোজ়িশনে গান গেয়েছি। পরে অমিতাভ বচ্চন, শাবানা আজ়মির ‘পরবরিশ’-এ গান গাইলাম। আমিও তো অনেক গান শিখে এসেছি। দুটো রেকর্ড শুনে তো গান গাইতে আসিনি। তাই উনি খুব শ্রদ্ধার চোখেই দেখতেন আমাকে। গানের বাইরে দিদির ফোটোগ্রাফিরও খুব শখ ছিল। ভাল ক্যামেরা ছিল ওঁর। খুব ভাল ছবিও তুলতেন। আর খেলার মধ্যে ক্রিকেট খুব ভালবাসতেন। দিদি শান্ত ছিলেন আর খুব বুদ্ধিমতীও ছিলেন। উনি কিন্তু চাইলে বড় রাজনীতিবিদও হতে পারতেন। তবে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে ওঁকে আমি যা শ্রদ্ধা করি, সেই উচ্চতায় আর কাউকে বসাতে পারিনি।

এর আগেও দিদির দু’বার নিউমোনিয়া হয়েছিল। খোঁজ নিতাম। শনিবার সকালে পুজো করার জন্য ফুল নিয়েছি সবে হাতে। এমন সময়ে খবরটা এল। হাতের ফুল হাতেই রয়ে গেল। চোখ ঝাপসা। রবিবার দেবী-বিসর্জনের সময়েই সরস্বতীর বরপুত্রীকে ঈশ্বর নিজের কাছে নিয়ে নিলেন। তবে এর চেয়ে ভাল বিদায়ক্ষণ বুঝি আর হয় না। সুরের সঙ্গেই তিনি চলে গেলেন।

অনুলিখন: নবনীতা দত্ত

অন্য বিষয়গুলি:

lata mangeshkar Arati Mukherjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE