Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Lata Mangeskar

Lata Mangeshkar Death: লতাজির সুরে গান লিখেছিলাম, সেই অ্যালবাম ওঁর শেষ কাজ হয়ে থাকল

লতাজির একটা সুর আছে, সেই সুরে একটা গান লিখতে হবে। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে আমি আত্মহারা। আমি লতাজির সুরে গান লিখব!

লতাকে নিয়ে লিখলেন দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী

লতাকে নিয়ে লিখলেন দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী

দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী
দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৪:২৪
Share: Save:

সালটা ২০১৪। মরাঠি সঙ্গীত পরিচালক ময়ূরেশ সতীশ পাই ফোন করে বললেন, “লতাজি নতুন বাংলা গান করবেন। সলিল চৌধুরীর সম্মানে এই গান গাইবেন তিনি।”
খুব অবাক হয়েছিলাম। প্রায় ২৫ বছর লতাজি বাংলায় গান রেকর্ড করেননি। কেউ অনুরোধ করলেও ফিরিয়ে দেন। সেই লতাজি নিজে গান গাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন! পরে জেনেছিলাম, সলিল চৌধুরীর জীবনাবসানের সময়ে লতা মঙ্গেশকর আসতে পারেননি। তাই তিনি ঠিক করেছিলেন, প্রয়াত সুরকারকে শ্রদ্ধা জানাবেন গান গেয়ে। সলিল-জায়া সবিতা চৌধুরীর কাছে সে সময়ে একটা অপ্রকাশিত কবিতা ছিল— ‘মন দিয়ে আর ভাবি না তো, গান দিয়ে ভাবি।’ লতা ঠিক করলেন, সেই গান গাইবেন। তখন ময়ূরেশ জানিয়েছিলেন যে, একটামাত্র গান দিয়ে রেকর্ড হবে না। আরও গান চাই। সেই আরও গানের প্রসঙ্গেই আমায় গান লেখার বরাত।
লতা মঙ্গেশকর গানের স্টুডিয়ো তৈরি করেছিলেন। তার দায়িত্বে আছেন ময়ূরেশ। তিনি শুনেছিলেন আমার নাম। জেনেছিলেন, আমি মান্না দে-র জন্য ৫০টা গান লিখেছি। এই তথ্য জানার পরে ময়ূরেশ আমায় যোগাযোগ করেন। বলেন, তিনটে গান লিখতে হবে। ওঁদের পছন্দ হল আমার লেখা। ঠিক হল, রেকর্ডে একটা গান সলিল চৌধুরীর আর তিনটে আমার লেখা থাকবে।

দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী, লতা মঙ্গেশকর

দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী, লতা মঙ্গেশকর

কাজ শুরু হল। এর মাঝে আবার ময়ূরেশের ফোন। লতাজির একটা সুর আছে, সেই সুরে একটা গান লিখতে হবে। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে আমি আত্মহারা। আমি লতাজির সুরে গান লিখব! লিখলাম আমি সেই গান। যেন আপনা থেকেই বেরিয়ে এল- ‘কী ব্যথা আছে একা মনে হয়তো বা সে কথা মনই জানে/ যে চাওয়া হল না পাওয়া কাঁদে কেন অভিমানে।’ ইউটিউবে আনন্দঘন ছদ্মনামে বহু মরাঠি গান সুর করেছেন লতাজি। শুধু মরাঠি গান নয়, কিশোরকুমারের জন্যও সুর দিয়েছেন। একটা গান ‘তারে আমি চোখে দেখেনি/ তার অনেক গল্প শুনেছি।’ আর একটা গান ছিল, ‘আমি নেই ভাবতেই ব্যথায় ব্যথায় মন ভরে যায়।’ আবার ওই সময়ে কিশোরকুমারের সুরে লতাজি গেয়েছিলেন, ‘ভালবাসার আগুন জ্বেলে কেন চলে যাই’ আর ‘কী লিখি তোমায়’।
আমি লেখা পাঠালাম লতাজিকে। ওঁর সুরের গান রেকর্ড করে পাঠালাম। আমায় ডেকে পাঠালেন। গিয়ে দেখি, ভয়ঙ্কর অসুস্থ। আমার লেখা গান আর সলিল চৌধুরীর কথায় লেখা গান রেকর্ড করলেন। বাকি তিনটে গান শরীরের জন্য পারলেন না। এ দিকে তখন সেপ্টেম্বর মাস, পুজো এসে গিয়েছে। লতাজি বললেন, “পুজোয় গান না এলে এই কাজের কোনও মানে নেই। আমার দুটো গান রইল। বাকি তিনটে ময়ূরেশ গাইবে।” এই ভাবে প্রকাশিত হল লতা মঙ্গেশকরের বাংলা গানের শেষ অ্যালবাম ‘সুরধ্বনি’।
ওঁর তখন ৮৫ বছর বয়স। ভেবেছিলাম, শিল্পী অসুস্থ, দেখা আর হবে না। মন খারাপ। এমন সময়ে ময়ূরেশ এসে বললেন, “দাদা, দিদি আপনাকে ডাকছেন।” লতাজি বলেছিলেন, “আমি দেবপ্রসাদকে কলকাতা থেকে ডেকে এনেছি আর আমিই দেখা করব না?” আমাদের দেখা হল। ওই অসুস্থ অবস্থায় তিনি দেখা করলেন!
লতাজি বসে আছেন স্টুডিয়োর উঁচু চেয়ারে। ভারতে এমন কোনও শিল্পী নেই, যাঁর গান লেখার সুযোগ আমার হয়নি। আশা ভোঁসলে থেকে মান্না দে। কিন্তু ওই সাদা ধবধবে শাড়ি আর সবুজ ছোট ছোট ফুলের শাড়ি পরা মহিলার পাশে গিয়ে যখন বসলাম, মনে হল যেন দেবীর দেখা পেলাম! কী আলো ওঁর মুখে! আমার তো মুখে কথা জোগাচ্ছে না। উনি খুব স্বাভাবিক। আমার ছেলে, ছেলের বৌয়ের গল্প শুনতে চাইলেন। ছেলের বিয়ের কার্ড দিলাম ওঁকে। বাংলায় বিয়ের কার্ডের কিছু অংশ পড়লেন। ছেলের নাম অনুষ্টুপ দেখে বললেন, “অনুষ্টুপ ছন্দের গান শুনেছো?” এমনই লতাজি। অনায়াস। এত বড় মাপের এক জন শিল্পী। অথচ দেখে মনে হয় উনি যেন এক জন সাধারণ মানুষ!
জীবনের সবচেয়ে অবাক করা ঘটনাটাও ঘটেছিল সে দিনই। ওঁকে প্রণাম করতে গিয়ে আমার জামার পকেট থেকে কলমটা সোজা ওঁর পায়ে গিয়ে পড়ল! সাদা পাতা আর টাকাও তো ছিল জামার পকেটে। কিন্তু কলমটাই ওঁর পায়ের স্পর্শ পেল...
আর লিখতে পারছি না। কান্না আসছে...
লেখক বিশিষ্ট গীতিকার।

অন্য বিষয়গুলি:

Lata Mangeskar Death Bollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy