অবলম্বন নয়, এ যে দুর্বল অনুকরণ!
মাঝবয়সে এসেও শিশুর মতোই সরল ছিল ফরেস্ট গাম্পের মন। লোকে বলত, ছেলে কমজোরি, মাথামোটা। মায়ের চোখে সেই ছেলে এক্কেবারে খাঁটি। ফরেস্টের মা বলতেন, ‘‘জীবনটা চকোলেটের বাক্সের মতো। কোনটা হাতে উঠবে তুমি জানো না!’’ ১৯৯৪ সালের জনপ্রিয় হলিউড ছবি ‘ফরেস্ট গাম্প’-এর সেই সংলাপ অমর হয়ে থেকে গিয়েছে।
তার ঠিক তিন দশক পরের ছবি। প্রচার ঝলকে ট্রেনে যেতে যেতে পঞ্জাবের যুবক লাল সিং ভাবছিলেন মায়ের কথা। যে মা বলতেন, ‘‘জীবনটা ফুচকার মতো। খেয়ে খেয়ে পেট ভরে গেলেও মন ভরে না।’’
‘লাল সিং চড্ডা’ মৌলিক চিত্রনাট্য নয়। নব্বইয়ের দশকের সাড়াজাগানো ছবি ‘ফরেস্ট গাম্প’ যে এই ছবির অনুপ্রেরণা, সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন প্রযোজক আমির খান। তাই বলে ছত্রে ছত্রে মিল? ২৯ মে, রবিবার আমির খানের ‘লাল সিংহ চড্ডা’-র ঝলক মুক্তি পেতেই শোরগোল। এ তো নকল!
মুম্বই সংবাদমাধ্যমের খবর, আমির খান জানিয়েছিলেন, ‘ফরেস্ট গাম্প’ রিমেকের সত্ত্ব কিনে নিয়েছিলেন তিনি। তার পর দীর্ঘ দশ বছরের চেষ্টায় ‘লাল সিং চড্ডা'-র চিত্রনাট্য তৈরি করেন অতুল কুলকার্নি। লস অ্যাঞ্জেলেস-বাসী প্রযোজক তথা পরিচালক রাধিকা চৌধুরীর নির্দেশনায় রূপ পায় সেই ছবি। আমিরের ছবি ঘিরে বরাবরই অনেকখানি প্রত্যাশা থাকে দর্শকের। এ বারও তাই ছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, দুর্দান্ত কিছু আসতে চলেছে পর্দায়। কিন্তু ঝলক মুক্তির পরে তাঁদের একাংশ স্পষ্টতই হতাশ। সে হতাশা বেরিয়ে এসেছে নেটমাধ্যমে।
পাশাপাশি রাখা যাক দুই ছবির ঝলক। ফ্রেমের পর ফ্রেম এক। সংলাপও একই ধাঁচে। ঝলকে দেখা গেল, লাল সিং হয়ে আমির দৌড়াচ্ছেন। ব্রেস পরা পা। পিছন থেকে বাকিরা চেঁচিয়ে বলছে ‘‘রান লাল রান।’’ ঠিক যেমন তিন দশক আগের ছবিতে ফরেস্ট-রূপী টম হ্যাঙ্কসকে উৎসাহ জুগিয়েছিল সমাজ, ‘‘রান ফরেস্ট রান’’ চিৎকারে। ফরেস্টের মতো লাল-ও সমাজের চোখে ‘কমজোরি’, যাঁর মা সব সময়ে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে চলেন। বলেন, ‘‘মনে রেখো, তুমি কারও চেয়ে কম নও।’’ আমিরের ছবিতে সেই চরিত্রে মোনা সিংহ। ফরেস্ট ভিয়েতনাম যুদ্ধে গিয়েছিলেন। বীরদর্পে যুদ্ধ করেছিলেন। ‘লাল সিং চড্ডা’-তেও একই ভাবে উঠে এসেছে সমকালীন সময়ের সমাজ-রাজনীতি। এসেছে নব্বয়ের দশকে কার্গিল যুদ্ধের প্রেক্ষাপট।
আর প্রেম? ‘ফরেস্ট’-এর ছিল জেনি। এ ছবিতে ‘লাল’-এর পাশে রূপা। অভিনয়ে করিনা। জেনির মতো নির্যাতিত, প্রান্তিক বলে মনে হয় না তাঁকে। লালের বিয়ের প্রস্তাবে যে সোজা বলে ওঠে, ‘‘তোমাকে খুব ভাল লাগে, কিন্তু তোমার সঙ্গে যে কিছু হওয়ার নয়!’’
ষাটের দশকের চরিত্র জেনি এতটা নির্মম ছিল না। নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে বলেছিল, ‘‘আমায় বিয়ে করবে ফরেস্ট?’’ নায়িকা রবিন রাইটসের মুখের দিকে চেয়ে টম হ্যাঙ্কসের দু-চোখে জীবনের অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা তবু অদম্য আত্মবিশ্বাস। শিশুর মতোই। প্রায় একই দৃশ্যে লালকে খানিক অপ্রতিভ এবং ভ্যাবাচ্যাকা দেখায়।
ছবির গল্প নিয়ে এখনও মুখে কুলুপ আমিরের। তবে ঝলক দেখেই যেন দমে গিয়েছেন একাংশ। তাঁদের দাবি, অবলম্বনের বদলে খারাপ অনুকরণ হলে হতাশ হওয়ারই কথা!
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy