Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kumar Shanu

Shannon Kumar Sanu: ছোট থেকে বাবাকে নিয়ে বহু সমালোচনা শুনেছি, মানসিক অবসাদেও ভুগেছি: শ্যানন কুমার শানু

শ্যাননের কথায়, ‘‘মঞ্চে গান গাইতে ভয় করে আমার। এখনও পা কাঁপতে শুরু করে। হাতের তালু হিম শীতল হয়ে আসে। মনে হয়, এই বুঝি শেষ!’’

নিজেদের পেশা-জীবন নিয়ে অকপট কুমার শানুর মেয়ে

নিজেদের পেশা-জীবন নিয়ে অকপট কুমার শানুর মেয়ে

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২১ ১৭:৪১
Share: Save:

হিমেশ রেশমিয়ার সঙ্গে ‘আজা’, নিজের ইংরেজি গান ‘রিট্রেস’— ভারতের কাঁটাতার পেরিয়ে শ্যানন কুমার শানু আজ আমেরিকার গায়িকা! বর্ণ বিদ্বেষ, পরিবারের দিকে ধেয়ে আসা সমালোচনা, সব কিছু জয় করে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে অকপট ‘মেলডি কিং’ কুমার শানুর অষ্টাদশী কন্যা।

প্রশ্ন: এত ছোট বয়সে সাফল্য, খুব তাড়াতাড়ি ব্যর্থ হওয়ার ভয় করে?

শ্যানন: আমি মনে করি, প্রত্যেকটা মানুষই ব্যর্থতাকে ভয় পায়। আমিও ব্যতিক্রম নই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে শিক্ষাটা সব থেকে প্রয়োজন, তা হল নিজেকে সামলানো। ব্যর্থতা তো জীবনের অঙ্গ। তাকে সঙ্গে নিয়ে কী ভাবে বাকি পথটা চলব, সেটাই শিখে নেওয়া উচিত। বাবাকে দেখেছি আমি। পেশাদার জীবনে খুব খারাপ সময়েও বাবা হাসিমুখে সব সহ্য করেছেন। বাবা বলেন, ‘‘জীবনে যা পেয়েছ, তার জন্য সব সময়ে ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ থেকো। প্রয়োজনের বেশি লোভ ভাল নয়। তোমার কপালে যা আছে, সেটুকুই তুমি পাবে। তার বেশিও পাবে না, কমও না।’’

প্রশ্ন: কুমার শানু এবং আপনার গানের ধরন তো ভীষণ আলাদা, বাবা আপনার গান শুনে কী বলেন?

শ্যানন: বাবা আমার সঙ্গীতগুরু। আমার গান পছন্দ হলে প্রশংসা করেন। আবার দরকার পড়লে ধমক দেন। ভুল শুধরেও দেন। আমি বাবার কথা শুনে চলি। জীবনের বহু ক্ষেত্রে বাবা এমন কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, যা ভীষণ কাজে লেগেছে। বাবা মাঝে মাঝে আমার গান শুনে খুব বিস্মিত হন। বাবা কিন্তু আমার গাওয়া সমস্ত গান শোনেন। আমিও প্রত্যেকটা গান রেকর্ড করার পরে বাবাকে শোনাই। ওঁর পরামর্শ ছাড়া আমার চলে না।

প্রশ্ন: ৯০ দশকের হিন্দি গান শোনেন? আপনার বাবা যে দিনগুলোয় বলিউডে রাজত্ব করেছেন, ভাল লাগে সেই সময়ের গান?

শ্যানন: ৯০ দশকের গান শুনে বড় হইনি, এটা ঠিক। কিন্তু যখনই বাবার সেই সময়কার গান শুনি, সেই যুগের সঙ্গে একাত্ম হতে সময় লাগে না। ৯০-এর দশকে তাবড় জনপ্রিয় গায়ক-গায়িকা ছিলেন! তাঁদের সুরেলা গলায় ওই মিষ্টি গানগুলো শুনতে কার না ভাল লাগবে! তখনকার গানে তাই প্রাণ ছিল।

প্রশ্ন: বাবার কাছ থেকে সঙ্গীতশিক্ষা কী ভাবে কাজে লাগছে?

শ্যানন: দু’বছর বয়স তখন আমার। বাবা ‘সা’-এ গলা সাধতে বলতেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘সা’ থেকে ধীরে ধীরে ‘সা রে গা মা পা’ পর্যন্ত পৌঁছই। একে একে সমস্ত ঘাটেই গলা মেলানো শিখতে থাকি। এ ভাবেই গানে আমার হাতেখড়ি। বাবা বলতেন, প্রতিটি গানের মানে বোঝা খুব দরকার। মনের ভিতরে টের পেতে হবে গানের কথা, সুর, বাকি সব কিছুকে! বাবার ভাষায় বললে, ‘‘গাওয়ার সময়ে যদি আমিই গানের অর্থ না বুঝি, তা হলে শ্রোতারা কী ভাবে বুঝবেন?’’ বাবা তো ‘মেলোডি কিং’, তাই এক একটি গানের মেজাজ অনুযায়ী নিজেকে দুমড়ে মুচড়ে নেওয়ায় বিশ্বাসী। এ দিকে মঞ্চে গান গাইতে ভয় করে আমার। এখনও পা কাঁপতে শুরু করে। হাতের তালু হিম শীতল হয়ে আসে। মনে হয়, এই বুঝি শেষ! বাবা বলেন, এই ভয় পাওয়াটাই ইতিবাচক। তার মানে এখনও আমি শিখছি। যে দিন থেকে আর এই ভয়টা পাব না, সে দিনই আমার শেখার দিন শেষ।

ভারতের কাঁটাতার পেরিয়ে শ্যানন কুমার শানু আজ আমেরিকার গায়িকা!

ভারতের কাঁটাতার পেরিয়ে শ্যানন কুমার শানু আজ আমেরিকার গায়িকা!

প্রশ্ন: বাবার কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে জরুরি শিক্ষা কোনটা বলে মনে হয়?

শ্যানন: সাফল্য আর খ্যাতি এক জিনিস নয়, এই কথা বাবা-ই আমায় শিখিয়েছেন। নেটমাধ্যমে যা খুশি করে আমি খ্যাতনামী হয়ে উঠতে পারি। কিন্তু সেই খ্যাতি দীর্ঘমেয়াদি নয়। আর সাফল্য আসে কঠিন পরিশ্রমের পরে। সময় লাগে খ্যাতি পেতে। কখনও বা সারা জীবন লেগে যায় সাফল্য অর্জনে। কিন্তু এই পথে পাওয়া খ্যাতি স্বল্পমেয়াদী নয়। বিষয়টি ২ মিনিটে নুডলস তৈরি করার মতো নয়। তাই কখনও খ্যাতির পিছনে ছুটতে দেননি বাবা।

প্রশ্ন: বলিউডে গান গাওয়ার ইচ্ছে আছে?

শ্যানন: আমি ভারতবর্ষে জন্মেছি। এ দেশের মানুষদের ভালবাসি। হিন্দি গান গেয়ে তাঁদের মনের কাছাকাছি পৌঁছতে চাই। কিন্তু একইসঙ্গে লস অ্যাঞ্জেলস ছেড়েও যেতে চাই না। এখানে কাজ করতে ভালবাসি আমি।

প্রশ্ন: ভারতীয় হয়ে হলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন, কোনও সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?

শ্যানন: আমেরিকা আমার দেশ নয়। এখানে থাকি, এটুকুই। আমার গায়ের রং শ্যামলা, তাই আমার কোনও বক্তব্য থাকতে পারে না— জীবনের প্রতি পদক্ষেপে সে কথা মনে করানো হয়েছে আমায়। হলিউডের গানের জগতে নিজের নাম এবং পরিচয় তৈরি করতে কম লড়াই করতে হয়নি। এখনও লড়ে চলেছি। হলিউডে বর্ণবিদ্বেষ এখনও ভাল মতো বজায় রয়েছে।

প্রশ্ন: সঙ্গীতচর্চার ক্ষেত্রে হলিউড বলিউডের থেকে কতটা আলাদা?

শ্যানন: বলিউডে একটি গান তৈরির পিছনে এক জন প্রযোজক, এক জন গীতিকার এবং এক জন গায়কের কৃতিত্ব থাকে। কিন্তু হলিউডে একটি গান বানাতে হলে শুরু থেকে শুরু করতে হয়। গান লিখি, সুর দিই, স্টুডিয়োয় গিয়ে রেকর্ড করি। তার পরে তাতে অতিরিক্ত মালমশলা দিয়ে গান তৈরির প্রক্রিয়া শেষ হয়।

প্রশ্ন: হিমেশ রেশমিয়ার সঙ্গে গান বাঁধার এবং গাওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন?

শ্যানন: লস অ্যাঞ্জেলসে ছিলাম তখন। হিমেশ স্যর আমায় গানটি পাঠান। অতিমারির সময়ে ‘আজা’ গানটি রেকর্ড করেছিলাম। কিন্তু কবে মুক্তি পাবে, কী হবে— কিচ্ছু জানতাম না। আচমকাই দেখলাম স্যর সেই গানটি প্রকাশ করেছেন। ঘটনাচক্রে সে দিনই আমার নিজের গান ‘রিট্রেস’ও মুক্তি পেয়েছিল। সব মিলিয়ে আমার উত্তেজনা তখন আকাশ ছুঁয়েছে। হিমেশ স্যর আমাকে নিজের মতো করে গানটি গাওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। হিন্দিতেও কয়েকটি লাইন গেয়েছি তাতে। আশা করছি, শ্রোতাদের আমার গান ভালই লাগবে।

বর্ণ বিদ্বেষ, পরিবারের দিকে ধেয়ে আসা সমালোচনা, সব কিছু জয় করে অকপট শ্যানন।

বর্ণ বিদ্বেষ, পরিবারের দিকে ধেয়ে আসা সমালোচনা, সব কিছু জয় করে অকপট শ্যানন।

প্রশ্ন: ‘রিট্রেস’ গানটি শ্রোতাদের ভাল লেগেছে?

শ্যানন: ‘রিট্রেস’ গানটি তৈরির পরে বুঝলাম, শ্রোতারা কেবল যে তার আমেজে মুগ্ধ হয়েছেন, তা নয়। তাঁদের কাছে গানের কথাগুলিও খুবই চিত্তাকর্ষক হয়েছে। এই গানটি আমার দিদি অ্যানাবেল আর আমি মিলে লিখেছি। আমরা দু’জনেই চেয়েছিলাম, গানের কথা শ্রোতাদের চেনা লাগুক। গানের সঙ্গে একাত্ম বোধ করুন তাঁরা। সেটা সত্যিই হচ্ছে দেখে খুবই ভাল লেগেছে।

প্রশ্ন: বাংলা গান শোনা হয়?

শ্যানন: অবশ্যই! বাবার গাওয়া একাধিক বাংলা গান শুনেছি আমি। বাংলা গানে একটা মিষ্টত্ব আছে। তা ছাড়া যে মাটিতে আর ডি বর্মণ, কিশোর কুমারের জন্ম, সে মাটির, সে ভাষার গান গাইতে চাই খুব তাড়াতাড়ি।

প্রশ্ন: কোন বাঙালি শিল্পীকে সব থেকে বেশি ভাল লাগে?

শ্যানন: এই তালিকা নেহাতই ছোট নয়। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম তো বলতেই হবে। তা ছাড়া কিশোর কুমার, আর ডি বর্মণ আর আমার বাবার গানও শুনি আমি। বাঙালি গায়িকাদের মধ্যে শ্রেয়া ঘোষাল আর মোনালি ঠাকুরের গানও খুব পছন্দের।

প্রশ্ন: কুমার শানুর স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে অনেক জলঘোলা হয় চার দিকে। আপনার পরিবারকে বহু বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়...

শ্যানন: গানের জীবন শুরু হওয়ার সময়ে এই সমস্ত বিতর্ক নিয়ে মন খারাপ করতাম। মানুষের সমালোচনায় আঘাত পেতাম। আমার বাবা-মাকে নিয়ে বিভিন্ন কথা শুনতে হত। সেই সময়ে বয়স কম ছিল বলে এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বার করে দিতে শিখিনি। তাই একটা সময়ে খুবই মানসিক সমস্যায় ভুগেছি। কিন্তু পরিবারের তরফে ভরসা ছিল বলেই ধীরে ধীরে অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরতে পেরেছি। তাঁরাই আমায় নিজের ক্ষমতা উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন। আমার ধারণা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনা, বিতর্ক, ট্রোলিং ইত্যাদির সম্মুখীন হতে শিখেছি আমি। কাছের মানুষের কাছ থেকে সমালোচনা শুনলে সেটাকে এখন নিজের উন্নতিতে কাজে লাগাই। আমার প্রকৃত অনুরাগীরাও যদি গান নিয়ে সমালোচনা করেন, সে সবও আমি শুনতে রাজি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy