সোহম চক্রবর্তী ও প্রিয়াঙ্কা সরকার।
পঙ্কজ মল্লিক সরণী। পুরনো নাম রিচি রোড। দক্ষিণ কলকাতার এই এলাকা সংলগ্ন ধোপা-পাড়া। ধোপাদের কাচাকুচির এলাকা। অনেকের কাছে কলকাতার ‘ধোবিঘাট’। সেখানেই শীতের বিকেলে হাজির সোহম চক্রবর্তী, প্রিয়াঙ্কা সরকার-সহ আরও অনেকে। নিজেদের দৈনন্দিন কাজ নিয়মমাফিক চালিয়ে গেলেন ধোপারা। কাপড় কাচা, কাপড় শুকনো, পরিষ্কার কাপড় পরিপাটি করে ভাঁজ করে প্যাটরায় বেঁধে বাড়ি বাড়ি পৌঁছনোর জন্য স্কুটার, বাইক বা সাইকেলে বেরিয়ে পড়া। এই চলমান জীবনের মধ্যে শ্যুটিং চলল ‘কলকাতার হ্যারি’র। যত ক্ষণ না শীতের আলো ঝুপ করে পড়ে আসে।
লকডাউনের পর কলকাতায় আবার একটু একটু শুরু হয়েছে শ্যুটিং। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই। তার মধ্যেই রাজদীপ ঘোষের পরিচালনায় শ্যুটিং শুরু হয়েছে এই ছবির। প্রথাগত স্টুডিয়ো নয়, অদ্ভুত লোকেশনে কাজ। তাই সকাল থেকেই ঝামেলার অন্ত ছিল না। সোহমের গাড়ি চালানোর ছোট শট দিতেই পেরিয়ে গেল কয়েক ঘণ্টা। বারবার ফ্রেমের মধ্যে থেমে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন বাইক নিয়ে শুকনো কাপড় পৌঁছে দিতে যাওয়া কোনও ধোপা। কখনও বা উত্তেজনার বশে ফ্রেমে ঢুকে পড়ছেন পাশের বাড়ির গৃহিনী। মাঝে মাঝে ইউনিটের কারও গলা ভেসে আসছে, ‘‘ওরে, রাস্তা আটকা!’’ কিন্তু কে আটকাবে রাস্তা? আটকানোর আগেই ঢুকে পড়ছে কাতারে কাতারে বাইক, স্কুটার বা সাইকেল। তবু এর মধ্যেও মুখে হাসি সোহমের। কোনও ক্লান্তি নেই। বারবার দিয়ে চলেছেন শট।
এক বার একটু অপেক্ষা করছিলেন কিছু ক্ষণ। আনন্দবাজার ডিজিটালের তাঁর সঙ্গে কথা বলতে যেতেই, সোহম বললেন, ‘‘আর কয়েকটা মিনিট দিন। দিনের আলো তো পড়ে এল। তার পর আর কাজ হবে না।’’
—কয়েক মিনিটেই হয়ে যাবে?
হাসতে হাসতে সোহম বললেন, ‘‘হয়ে তো যাওয়ার কথা। ডিরেক্টরের ভিতরের শিল্পীটা আবার জেগে ওঠে।’’ তবে সত্যিই কয়েক মিনিটে মিটল না। বোঝা গেল, আজ পরিচালকেরই দিন। তখনও অবশ্য নায়কের মুখে হাসি।
ক্লান্ত লাগছে না? অভিনেতা বললেন, ‘‘গল্পটাই এমন ক্লান্ত লাগার কথা নয়।’’
কেমন গল্প?
‘‘এক পুল কারের চালকের স্বপ্ন দেখার গল্প। গল্প বলার গল্প। আর আমাদের সবার ছোটবেলায় ফিরে যাওয়ার গল্প’’, বলছেন তিনি।
নায়ক যখন এ সব বলছেন, নায়িকা তত ক্ষণে চলে গিয়েছেন তাঁর ভ্যানে। দেখা হতেই বললেন, ‘‘এই গল্পে হ্যারি পটার আছে।’’ তাঁর চোখমুখ চকচকে।
কলকাতায় হ্যারি পটার! বিস্ময় আরও কয়েক পর্দা বাড়িয়ে দিয়ে নায়িকা বললেন, ‘‘শুধু পটার কেন! ঠাকুমা-দিদিমার মুখে শোনা গল্পগুলোও ফিরে আসছে ‘কলকাতার হ্যারি’তে।’’
নায়ক-নায়িকা শ্যুটিং শেষ করে ফেললেও পরিচালক অবশ্য তখনও ব্যস্ত। কাপড় কাচার ছোট ছোট খোপ, চৌবাচ্চার ফাঁক দিয়ে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর পরের দিনের শ্যুটিংয়ের পরিকল্পনা করছেন। হ্যারি পটার বাংলা ছবিতে? প্রশ্ন শুনে একগাল হেসে বললেন, ‘‘পুরোটাই তো কল্পনা। যাঁরা স্বপ্ন দেখতে ভুলে গিয়েছিলেন, তাঁদের স্বপ্ন দেখার অভ্যাস ফিরিয়ে দিতেই এই ছবি। সেই স্বপ্ন দেখানো মানুষটা যদি হ্যারি হয় তো হ্যারি, হরিনাথ হয় তো হরিনাথ।’’
রিচি রোডে তত ক্ষণে রাত নেমে এসেছে। সবাই যে যার বাড়ির দিকে ধাঁ। কয়েক ঘণ্টার বিশ্রাম। তার পর আবার ফিরে আসতে হবে এই ধোপা পাড়ায়। আবার গলির মুখে আর্তনাদ, ‘‘ওরে, রাস্তা আটকা!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy