বিরসা দাশগুপ্ত (বাম দিকে), শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী মহুয়া (মাঝে), দেবলীনা দত্ত (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নিসপাল সিংহ রানে, কোয়েল মল্লিক, রঞ্জিত মল্লিক এবং দীপা মল্লিক করোনায় আক্রান্ত, শনিবার রাতে এ খবর জানাজানি হতেই তাই চাপা আতঙ্ক ছড়িয়েছে আশপাশের বহতল আবাসনে।
এই আতঙ্ক কি মল্লিক-রানের পরিবারের সেলেব পড়শিদের মধ্যেও? সত্যিই কি রোগ বেশি ছড়াচ্ছে বহুতলে? সেই খোঁজে আনন্দবাজার ডিজিটাল যোগাযোগ করেছিল শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, বিরসা দাশগুপ্ত, দেবলীনা দত্তের সঙ্গে।
গল্ফগ্রিন মেন রোডের একটি চোখের হাসপাতালের পাশের বাড়ি শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের ঠিকানা। মল্লিক বাড়ির খুব কাছের প্রতিবেশী না হলেও করোনার করুণায় ‘নিকট’ হতে কত ক্ষণ? খবরটা শোনার পর শাশ্বত ও তাঁর স্ত্রী মহুয়ার মনের অবস্থা কী?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
বাড়িতে ঢোকার আগে মেডরা দু’বার স্যানিটাইজড হচ্ছেন...
‘‘করোনা শুনলেই যেন কেঁপে উঠি। নামটাই এখন আতঙ্ক জাগানোর পক্ষে যথেষ্ট’’, অকপটে স্বীকার সেলেব দম্পতির।
বস্তি এলাকার থেকে উঁচুতলার আবাসনে যেন এই সংক্রমণের বেশি দাপট? বিষয়টি একেবারে অস্বীকার করতেও পারলেন না তাঁরা। জানালেন, প্রথম লকডাউনে গোটা আবাসনে আসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল রান্না বা কাজের দিদি-মাসিদের। কারণ, আবাসনে বয়স্কদের সংখ্যা বেশি। আর কাজের লোকেরা বাইরে থেকে আসছেন বলে রোগ বহন করে আনা একেবারেই বিচিত্র নয়।
আরও পড়ুন: কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় কনটেনমেন্ট জোনগুলি দেখে নিন
‘‘কিন্তু এ ভাবে কত দিন?’’ পাল্টা প্রশ্ন মহুয়ার। তাঁর কথায়: ‘‘আমার অনলাইন ক্লাস থাকে। বাড়িতে প্রচুর কাজ। বাজারের সমস্ত আনাজ ভাল করে ধুয়ে নিতে হয়। এ দিকে পরিবারে পাঁচ জন সদস্য। তাঁদের সমস্ত কাজ করে ক্লাস করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলাম। ফলে, রান্নার দিদিকে আসতে বলতে বাধ্য হয়েছি।’’
মহুয়ার আরও যুক্তি, যাঁরা বস্তি থেকে আসছেন তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। বরং, রোগ ছড়ানোর পেছনে শিক্ষিতদের অনেক গাফিলতি রয়েছে। রোগ ঠেকাতে নতুন করে লকডাউন চালু হয়েছে। তার মধ্যেও লোকে বেরোচ্ছে!
করোনা ঠেকাতে কি রান্নার দিদির আসা আবার বন্ধ করবেন? ‘‘অনলাইনে ক্লাসে স্কুলের থেকে প্রচুর বেশি খাটনি। ফলে, না বলার প্রশ্নই নেই। আর রান্নার দিদিও আসেন একবেলা। বিকেলটা আমি ম্যানেজ করে নিই। আবাসনের নীচে স্যানিটাইজড হওয়ার পরে বাড়িতে ঢুকে আবার স্যানিটাইজড হন। বাইরের পোশাক ছেড়ে ওঁর জন্য রেখে দেওয়া আলাদা পোশাক পরেন। নিজে দিদির জন্য অ্যাপ্রন বানিয়ে দিয়েছি। সেটা পরে কাজ করার পরে আবার আমিই সেটিকে ধুয়ে স্যানিটাইজড করি। নিজের হাতে বাজার ধুই। আর নিজেরা তো স্বাস্থ্যবিধি মানছিই। এই পদ্ধতি অন্য মেডদের ক্ষেত্রেও। তাঁরা নীচে আর বাড়িতে, দু’বার স্যানিটাইজড হচ্ছেন। ডেলিভারি বয়দের ওপরে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না।’’
মনে হয়েছিল, কী ভাবে ওঁদের পাশে দাঁড়াব?
মল্লিক বাড়িতে করোনা। পরিচালক বিরসা দাশগুপ্তের চারটে বাড়ি পরেই মল্লিক বাড়ি। সেখানে করোনা হানা! রাতের ঘুম উড়েছে পরিচালক বিরসা দাশগুপ্তের? প্রশ্ন শেষের আগে জবাব এল, ‘‘ভয় নয়, শোনার পরেই প্রথমে মনে হয়েছিল কী ভাবে ওঁদের পাশে দাঁড়াব। কোয়েল, রানে দু’জনকেই মেসেজ পাঠিয়েছিলাম। জানতে পারি, বাচ্চা-সহ ওঁরা আছেন বালিগঞ্জের বাড়িতে, স্বেচ্ছা নির্বাসনে। রঞ্জিতকাকুরা নিজেদের পুরনো বাড়িতে রয়েছেন। করোনা পজিটিভ রেজাল্ট এলেও জ্বর আসেনি ওঁদের।’’
বিরসা দাশগুপ্ত। ফাইল চিত্র।
কোন যুক্তিতে বিরসা বলছেন, করোনা ধনীদের? বিরসা সাবলীল। উদাহরণ দিয়ে বললেন, লন্ডন থেকে ফেরা এক বাঙালি দম্পতির ছেলে রাজ্যে প্রথম করোনা আনেন। শুনেই মনে হয়েছিল, ইংরেজরা ২০০ বছর রাজত্বও করল, আবার করোনাও দিল! খেয়াল করলেই দেখা যাবে, বিমানে যাঁরা যাতায়াত করছেন তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বেশি। কারণ, এয়ারপোর্ট, বিমান, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হওয়ায় জায়গাগুলো করোনার কমফোর্ট জোন।
মল্লিক বাড়ির খবর পাওয়ার পরে সাবধানতার পরিমাণ কি আরও বাড়ল? ‘‘দুশ্চিন্তা বাড়ল বটেই। কারণ, বাড়িতে দু’জন বয়স্ক মানুষ, এক জন বাচ্চা আছে। আমরা বড়রাও আছি। তাই যা মানছিলাম সেটাই মানছি। মাস্ক ছাড়া থাকছি না। হাত ধুয়ে স্যানিটাইজড করছি। প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বেরোচ্ছি না। অযথা জিনিসপত্র ধরছি না।’’
বস্তির বাসিন্দারা অনেক বেশি সাবধানী...
‘‘রঞ্জিতদাদের বাড়ির ঠিক উল্টো ফুটের একটি বাড়িতে কিছু দিন আগে প্রথম সংক্রমণ। পেছনের ঝিলমিল বস্তিতে তারও আগে দু’জন আক্রান্ত। ফলে, ভয় নেই করোনা নিয়ে। কিন্তু বিস্ময় আছে...’’ ফোন ধরেই কথাগুলো জানালেন অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত।
দেবলীনা দত্ত। ফাইল চিত্র।
কিসের বিস্ময়? জানতে চাইতেই ক্ষুব্ধ উত্তর, ‘‘একটি এলাকায় এ ভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। সরকারের কাছে সেই খবর জানানোর পরেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি! ঝিলমিল বস্তিতে হওয়ার পর সরকারি কর্মী এসে স্প্রে করে দিয়ে যান সেখানে। রঞ্জিতদার উল্টো দিকের বাড়ির বাসিন্দা পেশায় চিকিৎসক। তাই তিনি নিজেই সমস্ত নির্দেশ মেনেছেন। তাঁর বাড়িতে কিন্তু স্প্রে করা হয়নি। পর পর সংক্রমণের এমন ঘটনা জানার পরেও সরকার রাস্তা সিল করেনি! কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি তারা।’’
দেবলীনার আরও ক্ষোভ, রাস্তার লোকেদের দেখে মনেই হচ্ছে না শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। সেই মাস্ক ছাড়া রাস্তায়। সেই আড্ডা, গুলতানি কাছাকাছি দাঁড়িয়ে! এতে সংক্রমণ কমবে? প্রশ্ন তাঁর।
সরকারের যখন আঠারো মাসে বছর তখন নিজের পরিবার বাঁচাতে কী কী নিয়ম মানছেন অভিনেত্রী? দেবলীনার উত্তর, ‘‘যেহেতু জানি চোখ-নাক-কান-মুখ দিয়ে এই সংক্রমণ ঢোকে তাই সবার আগে সেগুলো ঢাকছি। সোমবার থেকে শুটিংয়ে যাব। স্টুডিয়োয় তো এখন কড়া নিরাপত্তা। মাস্ক ছাড়া অভিনয় করলেও সামাজিক দূরত্ব থাকছে। সেপারেট কাটে সিন হচ্ছে। বাকিরা তো বর্ম পড়ে। ফলে, এখন স্টুডিওপাড়া বেশি নিরাপদ। নিজেদের রুটি-রুজির স্বার্থে। বাকি রইল খাবার। বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে গেলে সংক্রমিত হওয়ার চান্স প্রায় থাকছেই না। এ ছাড়া, রান্নার দিদি আমাদের বাড়িতেই থাকেন। গাড়ির চালককে সবেতন ছুটি দিয়ে আপাতত নিজেরাই গাড়ি চালাচ্ছি।’’
আরও পড়ুন: বাবা-মা এখন আমাদের বাচ্চাকে দেখছেন: নিসপাল সিংহ রানে
‘‘আর একটা কথা, বস্তি এলাকায় কিন্তু এই সংক্রমণ প্রায় নেই-ই! অথচ সবাই ওঁদের নিয়ে ভয় পেয়েছিলেন’’, জানালেন দেবলীনা। এমন হওয়ার নেপথ্য যুক্তি? ‘‘ওঁরা অনেক বেশি সাবধানী। বাইরের কাউকে ঢুকতেই দিচ্ছে না। বলছে, দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলে চলে যাও। মাসকাবারি উপকরণ কিনছেন বস্তির ভেতরের দোকান থেকেই। ফলে, আমার আবাসন লাগোয়া বস্তিতে কিন্তু এই সমস্যা দেখা যায়নি। ঝিলমিল বস্তির এক বাড়ির জামাই বাইরে থেকে আসায় সেখানে করোনা হয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy