Know the story of cancer survivor Manisha Koirala dgtl
Manisha Koirala
Manisha Koirala: নির্যাতন সইতে না পেরে নানার সঙ্গে সম্পর্কছেদ! নতুন পোস্ট করা ছবি বলছে, জিতেছেন মনীষা
মারণব্যাধিও হারাতে পারেনি যাঁকে, তাঁকে কেরিয়ারের শুরুতে পরপর ব্যর্থতা কী ভাবে ঠেকিয়ে রাখবে?
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২১ ১৭:৪১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মনীষা কৈরালা। সারা শরীর বিভিন্ন নলে জড়ানো। চোখ বন্ধ। কিন্তু অভিনেত্রীর হাতের মু্দ্রা বলছে, ‘সব ঠিক আছে’। হাসিমুখে মারণরোগকে জয় করেছিলেন তিনি। রবিবার জাতীয় ক্যানসার সচেতনতা দিবসে সেই কঠিন দিনগুলির স্মৃতিচারণ করলেন মনীষা। নিজের সে সব লড়াইয়ের দিনের ছবি পোস্ট করলেন ইনস্টাগ্রামে।
০২২২
চারটি ছবির মধ্যে প্রত্যেকটিতেই মনীষার মুখে হাসি। কিন্তু শরীরের বিভিন্ন চিহ্ন বলছে, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। কোনওটায় তাঁর মাথায় চুল নেই, কোনওটায় তিনি হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে। ২০১২ সালের পর থেকে তাঁর জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি তুলে ধরেছেন তিনি।
০৩২২
মারণব্যাধিও হারাতে পারেনি যাঁকে, তাঁকে কেরিয়ারের শুরুতে পরপর ব্যর্থতা কী ভাবে ঠেকিয়ে রাখবে? ব্যর্থতার খোলস থেকে বেরিয়ে নিজেকে যোগ্য অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি। এ ভাবেও ফিরে আসা যায়, দেখিয়ে দিয়েছেন মনীষা কৈরালা।
০৪২২
নেপালের কাঠমাণ্ডুতে দুঁদে রাজনীতিকদের পরিবারে জন্ম, ১৯৭০ সালের ১৬ অগস্ট। তাঁর বাবা প্রকাশ কৈরালা নেপালের প্রাক্তন মন্ত্রী। ঠাকুরদা বিশ্বেশ্বরপ্রসাদ কৈরালা ছিলেন নেপালের বাইশতম প্রধানমন্ত্রী।
০৫২২
নেপালের ইতিহাসে কৈরালা বংশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বংশের প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণপ্রসাদ কৈরালাকে বিহারে নির্বাসিত করেছিলেন নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহারাজা চন্দ্র সামসের জঙ্গ বাহাদুর রানা। পরে দেশে ফিরে গিয়ে গণতন্ত্র স্থাপনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন সমাজকর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ।
০৬২২
শৈশব থেকেই মনীষার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিবিড়। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে বারাণসীতে, দাদু-দিদিমার কাছে। পরে দিল্লি এবং মুম্বইয়ে। তখন থেকেই ভারত ছিল মনীষার দ্বিতীয় বাড়ি।
০৭২২
স্কুলে পড়ার সময় মনীষার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু চিকিৎসক বা বংশের ধারা মেনে রাজনীতি, কোনওটাই হওয়া হল না। সংক্ষিপ্ত মডেলিং-কেরিয়ারের পরে চলে এলেন অভিনয়ে।
০৮২২
বারাণসীর বসন্তকন্যা মহাবিদ্যালয় থেকে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মনীষা। ক্লাস টেনের চূড়ান্ত পরীক্ষার পরে মজার ছলেই নেপালি ভাষার ছবিতে প্রথম অভিনয়। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায় সেই ছবি ‘ফেরি ভেতৌলা’।
০৯২২
অভিনয়কেই কেরিয়ার করবেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে মনীষা চলে আসেন মুম্বই। সুভাষ ঘাইয়ের পরিচালনায় মনীষার প্রথম হিন্দি ছবি ‘সওদাগর’ মুক্তি পায় ১৯৯১ সালে।
১০২২
কিন্তু এরপর একটানা ব্যর্থতা। ‘ফার্স্ট লভ লেটার’, ‘আনমোল’ এবং ‘ধনবান’ মুখ থুবড়ে পড়ে বক্স অফিসে। প্রযোজকদের কাছে মনীষার পরিচয় হয়ে যায় ‘অপয়া’।
১১২২
সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ান তিনি ‘১৯৪২ এ লভ স্টোরি’-র হাত ধরে। যদিও ছবির প্রথম অডিশনে বিধুবিনোদ চোপড়া বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন মনীষাকে। তাঁর মনে হয়েছিল মনীষা অভিনেত্রী হিসেবে ভয়ঙ্কর! পরে সেকেন্ড অডিশনে বাজিমাত করেন মনীষা। মাধুরী দীক্ষিতের পরিবর্তে ছবির ‘রাজেশ্বরী’ বা ‘রাজ্জো’ চরিত্রে বিধুবিনোদ নির্বাচন করেন মনীষাকেই।
১২২২
বক্স অফিসে সফল না হলেও এই ছবিটি অনেক দিক দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে এই ছবিটি প্রথম ‘ইউনিভার্সাল/অ্যাডাল্ট’ তকমা পায়। রাহুল দেব বর্মণের শেষ তথা অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ এই ছবিতেই। বলা যায়, ‘১৯৪২ এ লভ স্টোরি’ ছিল আর ডি বর্মনের ‘শেষের কবিতা’।
১৩২২
এরপর ‘বম্বে’, ‘অগ্নিসাক্ষী’, ‘ইয়ারানা’, ‘দারার’, ‘ইন্ডিয়ান’, ‘খামোশি দ্য মিউজিক্যাল’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম সারির নায়িকা হয়ে ওঠেন মনীষা। ‘খামোশি’ ছবিতে মনীষার অভিনয় বলিউডের আইকনিক কাজগুলির মধ্যে অন্যতম। বক্স অফিসে ব্যর্থ হলেও এই ছবি মনীষার মুকুটে নতুন পালক যোগ করে।
১৪২২
মনীষার ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল ‘গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ’, ‘দিল সে’, ‘কচ্চে ধগে’, ‘মন’, ‘যুগপুরুষ’ এবং ‘আকেলে হাম আকেলে তুম’। আমির খানের সঙ্গে মনীষার রসায়ন বক্স অফিসে তুমুল সফল হয়। বলিউডের পাশাপাশি দক্ষিণী ভাষার ছবিতেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি।
১৫২২
২০০০ সাল নাগাদ কেরিয়ারে ভাটার টান আসতে মনীষা সরে আসেন টেলিভিশনে। ২০০৪ সালে তিনি চলে যান নিউ ইয়র্ক। ফিল্ম মেকিংয়ের উপর ডিপ্লোমা করেন নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
১৬২২
ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে এসে আবার অভিনয় শুরু করেন। কিন্তু মনীষার নতুন ইনিংস সাফল্য পায়নি। নায়িকা বা সহ অভিনেত্রী, সব ভূমিকাই এ বার দর্শকমনে দাগ কাটতে ব্যর্থ হন তিনি। এই পর্যায়ে তাঁর কেরিয়ারে উল্লেখযোগ্য কাজ হল ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘খেলা’ ছবিতে অভিনয়।
১৭২২
২০১০ সালের ১৯ জুন মনীষা বিয়ে করে নেপালি শিল্পপতি সম্রাট দাহালকে। তাঁদের আলাপ হয়েছিল ফেসবুকে। সনাতনী নেপালি রীতিতে বিয়ে করেন দু’জনে। মধুচন্দ্রিমা হয় ফ্লোরিডায়। কিন্তু দু’বছরের মাথায় ভেঙে যায় দাম্পত্য।
১৮২২
২০১২ সাল মনীষার কাছে একাধিক দুঃসংবাদ বয়ে আনে। বিয়ে ভাঙার পাশাপাশি সে বছরই জানা যায়, তিনি ওভারিয়ান ক্যানসারে আক্রান্ত। প্রথমে মুম্বই, তারপরে তাঁর চিকিৎসা হয় আমেরিকায়।
১৯২২
সফল অস্ত্রোপচার, একটানা কেমোথেরাপির পরে মনীষাকে ২০১৭ সালে ক্যানসারমুক্ত বলে জানান চিকিৎসকরা। ক্যানসারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে এখন অন্যতম মুখ মনীষা কৈরালা। পাশাপাশি, নানা সমাজসেবামূলক কাজে জড়িত তিনি।
২০২২
ক্যানসারকে হারিয়ে ফিরে এসে মনীষার প্রথম ছবি ‘চেহরে: এ মডার্ন ডে ক্লাসিক’। সম্প্রতি প্রশংসিত হয়েছে ‘ডিয়ার মায়া’ এবং ‘সঞ্জু’ ছবিতে মনীষার অভিনয়।
২১২২
বিভিন্ন সময়ে একাধিক পুরুষের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়েছে। বিভিন্ন বয়স এবং পেশার মানুষ এসেছেন তাঁর জীবনে। নানা পাটেকর এবং মনীষার প্রেম তো একসময় ছিল ইন্ডাস্ট্রির বহুচর্চিত গুঞ্জন। শোনা যায়, নানার কাছে শারীরিক আঘাত পাওয়ার পরে সম্পর্ক ভেঙেছিলেন মনীষা।
২২২২
অনেকগুলি বসন্ত পেরিয়ে এখন নতুন করে জীবনের অর্থকে খুঁজে পান। জানিয়েছেন এই মৃত্যুঞ্জয়ী চিরসবুজ অভিনেত্রী।